নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর ২৪ পরগনার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, সম্প্রতি জেলার এক বিডিও-র কাছ থেকে আসা স্কুলপোশাক সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে লেখা আছে, তাঁদের ছেলেদের স্কুলপোশাকের রং হতে হবে নীল-সাদা।
ফাইল চিত্র।
কলকাতা-সহ রাজ্যের শহরাঞ্চলের রাস্তাঘাটের রেলিং থেকে প্রাচীর, সরকারি বাড়িকে নীল-সাদায় চিত্রিত করার উদ্যোগ পর্বে হরেক কিসিমের বিদ্রুপ-বিরোধিতার বান বয়ে গিয়েছিল। এ বার রাজ্যের সব স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের পোশাক নীল-সাদা করা হতে পারে শুনে প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ ঘনিষ্ঠ মহলে প্রবল আপত্তি জানাচ্ছেন। যদিও নবান্ন বা শিক্ষা দফতর এই ব্যাপারে এখনও কোনও লিখিত বিজ্ঞপ্তি দেয়নি। বিভিন্ন সূত্রে এই উদ্যোগের কথা জেনে অনেক প্রধান শিক্ষকই বলছেন, স্কুলপোশাকের রং সংশ্লিষ্ট স্কুলের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত। পড়ুয়াদের পোশাকের রং দেখে স্কুল চেনা যায়। সারা বাংলার সব স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পোশাক যদি নীল-সাদা করে দেওয়া হয়, স্কুলগুলি নিজস্বতা হারাবে। তাই এই ধরনের প্রয়াস কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর ২৪ পরগনার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, সম্প্রতি জেলার এক বিডিও-র কাছ থেকে আসা স্কুলপোশাক সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে লেখা আছে, তাঁদের ছেলেদের স্কুলপোশাকের রং হতে হবে নীল-সাদা। ওই প্রধান শিক্ষক বলেন, “আগে কখনও স্কুলপোশাক তৈরির আগে এ ভাবে কোনও নির্দিষ্ট রংয়ের কথা বলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি।”
মিত্র ইনস্টিটিউশনের ভবানীপুর শাখার প্রধান শিক্ষক রাজা দে জানান, তাঁদের কয়েক জন পড়ুয়া এনসিসি-তে নির্বাচিত হয়েছে। তাদের পোশাকের মাপ নিতে এসে এনসিসি-র কর্মীরা জানিয়েছেন, রাজ্যের সব স্কুলের পোশাকের রং নীল-সাদা হতে চলেছে। এই বিষয়ে তাঁরা বিজ্ঞপ্তিও পেয়েছেন বলে জানান এনসিসি আধিকারিকেরা। রাজাবাবু বলেন, “আমরা এখনও কোনও সরকারি নির্দেশ পাইনি। তবে এটা যদি হয়, আমরা কোনও ভাবেই তা মানতে রাজি নই। আমাদের স্কুলের পোশাকের সঙ্গে আমাদের স্কুলের ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে।” যোধপুর পার্ক বয়েজের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদারও বলেন, ‘‘স্কুলপোশাকের রং দেখেই আমাদের স্কুলের প্রাক্তনীরা স্কুলের বর্তমান ছাত্রদের চিনতে পারে। পোশাকের রং এক হয়ে গেলে এ-সবই মুছে যাবে। পড়ুয়াদের আবেগ যাবে হারিয়ে।’’
শ্যামবাজার এলাকার সরস্বতী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জয়তী মজুমদার মিত্র জানান, যাঁরা স্কুলপোশাক বানান, সেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর লোকজনের কাছ থেকে তিনি শুনেছেন, রাজ্য জুড়ে সব স্কুলের পোশাক নীল-সাদা হতে চলেছে। জয়তীদেবী বলেন, “সরকারি নির্দেশ এলে তা অমান্য করতে পারব না। কিন্তু এটা মন থেকে মেনে নেওয়া কষ্টকর। আমি প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠনে আমার বক্তব্য জানিয়ে রাখব।” উত্তর কলকাতার অন্য একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “কন্যাশ্রী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্কুল একসঙ্গে জড়ো হলে স্কুলপোশাকের রং দেখেই তো আমরা চিনতে পারি, কে কোন স্কুলের ছাত্রী। সব এক রং হয়ে গেলে অনেক স্কুলের জমায়েতে ছাত্রীদের খুঁজে পেতে সমস্যা হবে।”
পাশাপাশি দু’টি স্কুলের পড়ুয়াদের পোশাকের রং একই হওয়ায় পাশের স্কুলের পড়ুয়াকে নিজের স্কুলের পড়ুয়া ভেবে বসেছিলেন দক্ষিণ চাতরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তথা পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র। তিনি জানান, তাঁর স্কুলের নিকটবর্তী অন্য একটি স্কুলের পোশাকের রং একই। নীল প্যান্ট, সাদা শার্ট। বছরখানেক তাঁর স্কুলের কাছে নীল-সাদা স্কুলপোশাকের এক পড়ুয়ার দুর্ঘটনা ঘটে। তাঁরা তাকে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যান। কৃষ্ণাংশুবাবু বলেন, “পরে ওর অভিভাবকের খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারি, সে আমাদের স্কুলের ছাত্র নয়। তখন তার স্কুলের প্রধান শিক্ষককে খবর দেওয়া হয়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ছেলেটির পরিবারে খবর পৌঁছে দিতে দেরি হয়ে যায়।’’ ওই প্রধান শিক্ষক জানান, কয়েক হাজার ছাত্রের মধ্যে সবার মুখ মনে রাখা সম্ভব নয়। স্কুলপোশাকই স্কুলকে আলাদা করে দেয়। দেখামাত্র চিনিয়ে দেয়। সব স্কুলের পোশাক এক হয়ে গেলে বিভিন্ন স্কুল নিজস্বতা হারাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy