শুভেন্দু অধিকারীকে লোকসভা ভোটে প্রার্থী হিসাবে প্রচার কাঁথিতে। —নিজস্ব চিত্র।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে কাঁথি কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী— এই মর্মে কাঁথিতে দেওয়াল লিখন দেখা গেল সোমবার। আর তাই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। স্বয়ং শুভেন্দু এই কাজের নেপথ্যে শাসকদলের হাত দেখছেন। তৃণমূল অবশ্য সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটে ভরাডুবির পর এখন থেকেই লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করে দিয়েছে বিজেপি।
সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের বেশ কিছু এলাকায় দেওয়াল লিখন চোখে পড়েছে। যেখানে লেখা, ‘‘কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে এই চিহ্নে ভোট দিন।’’ তার পাশে আঁকা পদ্ম। যা বিজেপির প্রতীক। তলায় লেখা রয়েছে ‘‘১১২ নম্বর বড়বড়িয়া বিজেপি যুব মোর্চা কর্তৃক প্রচারিত।’’ সদ্য পঞ্চায়েত ভোটের পর এমন দেওয়াল লিখন দেখে পথচলতি অনেক মানুষই থমকে দাঁড়িয়েছেন কিছু ক্ষণ। জেলা রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে আলোচনা। যদিও ভগবানপুর বিধানসভা এলাকার বাসুদেববেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়বড়িয়া গ্রামে এমন দেওয়াল লিখনকে তৃণমূলের অপপ্রচার বলে অভিযোগ করছেন শুভেন্দু। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘এটা তৃণমূলের কাজ। এর সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই।’’ কেন এমন কাজ করতে পারে তৃণমূল? শুভেন্দুর কটাক্ষ, ‘‘বিধানসভায় আমায় সামলাতে পারছে না। তাই ওরাই (তৃণমূল) আমায় লোকসভায় পাঠাতে চায়।’’
কাঁথির সাংসদ এখন শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী। তাঁর সাংসদ পদ বাতিল করতে একাধিক বার লোকসভায় চিঠিচাপাটি করেছে তৃণমূল। তাই ২০২৪ লোকসভা ভোটে যে শিশিরকে তৃণমূল প্রার্থী করবে না, এটা প্রায় নিশ্চিত। অন্য দিকে, বয়সজনিত কারণে অসুস্থ শিশির নিজে আর লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না, সেটাও নিশ্চিত নয়। তাই শুভেন্দুকে কি কাঁথি কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করার কথা ভাবছে বিজেপি? নন্দীগ্রামের বিধায়ক নিজেই এই দেওয়াল লিখনকে তৃণমূলের কাজ বলছেন। আগে তৃণমূলের টিকিটে তমলুকের সাংসদ ছিলেন শুভেন্দু। তিনি সাংসদ পদ থেকে সরে রাজ্যের মন্ত্রী হওয়ায় ওই কেন্দ্রে সাংসদ হন শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী। এখন বিভিন্ন সভা থেকেই শুভেন্দুকে হুঁশিয়ারি দিতে শোনা যায় যে, আগামী লোকসভা ভোটে কাঁথি এবং তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে রেকর্ড ভোটে জয়ী হবে বিজেপি। এ নিয়ে রবিবারই শুভেন্দুকে কটাক্ষ করেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, “গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় গোহারা হেরেছে (বিজেপি)। শুভেন্দু বলেছেন, লোকসভায় নাকি উনি দেখে নেবেন! আমি শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ করছি, ওঁর যদি ক্ষমতা থাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘোষণা করুন উনি লোকসভা ভোটে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ক্ষমতা থাকলে বলুন লড়বেন। আমরা তো গাছ, পাথর দাঁড় করিয়ে তাকেও জিতিয়ে আনব।” ঘটনাক্রমে তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শুভেন্দুর নামে এই দেওয়াল লিখনকে তৃণমূলের কাজ বলে অভিযোগ করছে বিজেপি। শুভেন্দু বলছেন, এ নিয়ে তাঁর কোনও কৌতূহল নেই। তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমার আবাহনও নেই, বিসর্জনও নেই।’’ যদিও শাসকশিবির সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের ৭০ আসনের মধ্যে ৫৬টি পেয়েছে তৃণমূল। বিজেপির দখলে মাত্র ১৪। জেলার ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৩৭টি শাসকদলের দখলে। বিজেপি পেয়েছে ৬১টি আসন। শুভেন্দুর জেলার ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ১৯টি দখল করেছে তৃণমূল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy