চেস্ট মেডিসিন বিভাগে কি সঞ্জয় রায় উপস্থিত ছিল? —ফাইল চিত্র।
মৃত্যুর সময় ঠিক কখন? তখন হাসপাতালের জরুরি বিল্ডিংয়ের চারতলায়, চেস্ট মেডিসিন বিভাগে কি সঞ্জয় রায় উপস্থিত ছিল? আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়ার খুন ও ধর্ষণের মামলায় পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে রায়দান করতে গিয়ে এই প্রশ্নগুলোই ভাবিয়েছে বিচারককে। তিনি পাকস্থলীতে খাবার কতক্ষণ থাকতে পারে, সেই সময় ধরে ধরে বিশ্লেষণ করেছেন। কিন্তু তাতেই দেখা যাচ্ছে, ঘটনাস্থলে সঞ্জয়ের উপস্থিতির সময়ের সঙ্গে মিলছে না মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়। রায়ের প্রতিলিপি অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, আদালতে দাঁড়িয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা মৃত্যুর সম্ভাব্য যে সময় উল্লেখ করেছেন, সে রাতে তার থেকে প্রায় ১৫ মিনিট আগেই ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল সঞ্জয়!
রায়ে উল্লেখ, ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক অপূর্ব বিশ্বাস আদালতে উপস্থিত হয়ে জানিয়েছেন, ময়না তদন্তের সময়ে মৃতার পাকস্থলী থেকে ১৮৫ গ্রাম আংশিক হজম হওয়া খাবার মিলেছে। তিনি জানান, সিবিআইয়ের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, খাবার খাওয়ার সময় এবং পাকস্থলী থেকে পাওয়া আংশিক হজম হওয়া খাবার বিশ্লেষণ করে তাঁদের অনুমান, ময়না তদন্ত হওয়ার প্রায় ১৯ ঘণ্টা আগের যে কোনও সময়ে তরুণীর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। ৯ অগস্ট মৃতদেহ উদ্ধারের দিন ময়না তদন্ত হয়েছিল সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট থেকে ৭টা ১০ মিনিটের মধ্যে। ১৯ ঘণ্টা আগে মানে, ৮ অগস্ট রাত ১১টার আশেপাশেই মৃত্যু হয়েছিল তরুণীর! কিন্তু সে রাতে তরুণীর সঙ্গেই খাবার খাওয়া গোলাম আজম এবং অর্ক সেন নামের দুই চিকিৎসক আদালতে হাজির হয়ে জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ১১টার আগে খাওয়া শুরু হয়নি। আদালতে গোলাম দাবি করেন, খাওয়ার জন্য তিনি সেমিনার রুমে গিয়েছিলেন রাত ১১টা ৪০ মিনিট নাগাদ। তাঁরা রাতের খাওয়া শেষ করেন ১২টা ৪৫ মিনিট নাগাদ। অর্ক দাবি করেছিলেন, ১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত চলেছিল তাঁদের রাতের খাওয়া।
জটিলতা কাটাতে দিল্লি এমস-এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়। সেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আদালতে জানান, প্রথম গ্রাস মুখে দেওয়ার ১০ মিনিট পর থেকেই পাকস্থলী ফাঁকা হতে শুরু করে। স্বল্প পরিমাণ খাবার, মাঝারি খাবার এবং ভারী খাবার বার হতে সময় লাগে যথাক্রমে ১-২ ঘণ্টা, ৩-৪ ঘণ্টা ও ৫-৮ ঘণ্টা। তিনি এ-ও জানান, ভাত-রুটির মতো কার্বোহাইড্রেট পাকস্থলী থেকে দ্রুত বেরিয়ে যায়। তুলনায় প্রোটিন খাবার পাকস্থলী থেকে বেরোতে সময় লাগে বেশি। তার চেয়েও বেশি সময় নেয় ফ্যাট জাতীয় খাবার। আদালতে বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, মিশ্র ধরনের খাবার সব মিলিয়ে ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে পাকস্থলী থেকে বেরিয়ে যায়। এই ঘটনায় পাকস্থলী থেকে যে পরিমাণ আংশিক হজম হওয়া খাবার উদ্ধার হয়েছে, তাতে তাঁর অনুমান, তরুণীর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে ভোর ৪টে ৪৫ মিনিট থেকে ৫টা ১৫ মিনিটের মধ্যে।
কিন্তু ঘটনাস্থল অর্থাৎ সেমিনার রুম হাসপাতালের যে তলে অবস্থিত, সেখানকার সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, সঞ্জয় ঘটনার দিন ভোর ৪টে ০৩ মিনিট ৩১ সেকেন্ড নাগাদ সেখানে ঢুকছে। সেই একমাত্র ক্যামেরাতেই সঞ্জয়কে বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে ভোর ৪টে ৩১ মিনিট ৪০ সেকেন্ড নাগাদ। অর্থাৎ বিশেষজ্ঞের বলা সম্ভাব্য মৃত্যুর সময়ের ১৩ মিনিট ২০ সেকেন্ড আগে। কিন্তু ৪টে ০৩ মিনিট ৩১ সেকেন্ড থেকে ৪টে ৩১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে সঞ্জয় কী করল? তার কোনও ফুটেজ তদন্তে উঠে আসেনি। কোনও সাক্ষীরও সাক্ষ্য নেওয়ারও উল্লেখ নেই রায়ে। শুধু যেখানে ক্যামেরা লাগানো সেই অংশ থেকে সঞ্জয় ডান দিকে ঘুরে একটি করিডর ধরে গিয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই পথেই তাকে ফিরে আসতে দেখা যায় ৪টে ৩১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে। কিন্তু সেই সময়েই তাকে উল্টো দিকে ঘুরে ভিতরের দিকে যেতে দেখা যায়। আবার তখনই সে ফিরেও আসে। কেন?
সঞ্জয় আদালতে জানিয়েছে, এক জনের অস্ত্রোপচারের জন্য সে হাসপাতালের চারতলার ওই অংশে গিয়েছিল সে দিন। সেই রোগীকে খুঁজতে খুঁজতে পুরুষ ওয়ার্ডে যায়। সেখানে একটি শয্যায় নিজের হেলমেট এবং হেডফোন খুলে রাখে। কিন্তু রোগীকে কিছুতেই খুঁজে না পেয়ে এর পরে সেখান থেকে ক্যামেরা লাগানো পথ দিয়েই বেরিয়ে আসে। হেলমেট নিলেও নিজের হেডফোনটা সে সেখানেই ফেলে আসে। পথ চিনতে না পেরে সে আবার ভিতর দিকে ঢুকতে যাচ্ছিল। তদন্তকারীরা ঘটনাস্থল থেকে একটি হেডফোন পান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ যে হেডফোন দেখাচ্ছে, সেটা তার নয় বলে সঞ্জয় আদালতে দাবি করেছে।
বিচারক এ বিষয়ে লিখেছেন, সঞ্জয়কে পুরুষ ওয়ার্ডে ওই সময়ে কেউ দেখেছেন বলে প্রমাণ মেলেনি। সঞ্জয়ের পক্ষের আইনজীবী বা সে নিজেও সেমিনার রুমের বদলে অন্যত্র উপস্থিতির কথা প্রমাণ করার তেমন চেষ্টা করেনি। তাকে কেউ দেখেছে বলে কোনও সাক্ষীকেও হাজির করা হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy