রাজ্য জুড়ে আধিপত্য বজায় রাখল তৃণমূল। ছবি: পিটিআই।
ভোটগণনা শুরুর দিনে, অর্থাৎ মঙ্গলবার রাতেই ছবিটা কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বুধবার গণনা শেষে দেখা গেল, এই পঞ্চায়েত ভোটেও গ্রামবাংলার রাজনৈতিক মানচিত্রে বিশেষ বদল এল না। রাজ্য জুড়ে আধিপত্য বজায় রাখল শাসকদল তৃণমূলের। রাজ্যের ৩,৩১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২,৬৪১টিই চলে গেল তাদের দখলে। যা মোট পঞ্চায়েতের প্রায় ৮০ শতাংশের কাছাকাছি। শতাংশের হিসাবে এটা গত বারের থেকে কম হলেও ফলাফলের প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বিরোধী পরিসর এখনও সেই ভাবে বিস্তৃতই হয়নি রাজ্যে। একই ভাবে ৩৪১টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে শাসকদল দখল করেছে ৩১৩টি।
ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের আসনভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ফল এখনও ঘোষণা হয়নি। শুধু জেলা পরিষদের আসনভিত্তিক ফলাফল জানিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তাতে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের ২০টি জেলা পরিষদের মধ্যে ২০টিতেই জয় পেয়েছে তৃণমূল। গণনার আগে পর্যন্ত বিরোধীদের দাবি ছিল, রাজ্যে অন্তত চার-পাঁচটি জেলা পরিষদে ‘হাড্ডাহাড্ডি’ লড়াই হবে। জনমত সমীক্ষাতেও আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারের মতো জেলায় এগিয়ে রাখা হয়েছিল বিরোধীদের। কিন্তু ভোটের ফল বলছে, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের মতো এ বারেও সব ক’টি জেলা পরিষদই তৃণমূলের দখলে। তার মধ্যে ন’টি বিরোধীশূন্য। পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনভিত্তিক ফলাফল প্রকাশিত না হলেও কোন দল ক’টি গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছে, সেই তথ্য দিয়েছে কমিশন। তাতে দেখা যাচ্ছে, এ বারও উত্তর থেকে দক্ষিণ— সর্বত্রই দাপট দেখিয়েছে ঘাসফুল।
নিজের পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপি গত বারের তুলনায় ভাল ফল করলেও তা বিরোধী দলনেতার পক্ষে খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বেই ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল বিরোধীশূন্য করে দিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদকে। পরে দলত্যাগী হয়ে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু। এর পর তাঁর জেলায় ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় তৃণমূলের থেকে সামান্য পিছিয়ে থাকলেও প্রায় সমানে সমানে লড়ে গিয়েছিল বিজেপি। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে সেই পূর্ব মেদিনীপুরে জেলা পরিষদের ৭০ আসনের মধ্যে ৫৬টিই তৃণমূলের দখলে থাকল। বিজেপি আটকে গেল ১৪-তেই। জেলার ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যেও ১৩৭টি দখল করেছে শাসকদল। বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছে মাত্র ৬১টি। এমনকি, ২৫টির মধ্যে ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতিই তৃণমূল দখল করেছে। একই ছবি দেখা গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। সেখানেও ২১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল দখল করেছে ১৯৪টি। বিজেপি মাত্র ৬টি। ওই জেলায় আবার সব ক’টি ২১টি পঞ্চায়েত সমিতিই তৃণমূলের দখলে গিয়েছে। ঝাড়গ্রামেও ৭৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল দখল করেছে ৬৩টি। জেলার মোট ৮টি পঞ্চায়েত সমিতিও তাদেরই দখলে।
নির্বাচনের ফলাফল থেকে স্পষ্ট, আসন জয়ের বিচারে গত বারের তুলনায় এ বার কিছুটা হলেও দাগ কাটতে পেরেছে বিরোধীরা। বিরোধী মুখ কারা, তা নিয়ে বিজেপি এবং বাম-কংগ্রেস জোটের মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় জোর টক্কর চলেছে। নদিয়া-মুর্শিদাবাদের ফলাফলেই তা স্পষ্ট। ভোট-বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, গত বিধানসভার তুলনায় এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে বেশ খানিকটা রাজনৈতিক জমি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে জোট। যদিও তা প্রতিফলিত হয়নি গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি দখলের পরিসংখ্যানে। দেখা যাচ্ছে, মুর্শিদাবাদের ২৫০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূলই দখল করেছে ২২১টি। আর বামেদের দখলে গিয়েছে ৫টি। ২৬টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে শাসকদল পেয়েছে ২২টি। নদিয়াতেও ১৮৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছে ১২৩টি। ১৮টির মধ্যে ১৫টি পঞ্চায়েত সমিতিও তারা দখল করেছে। বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমানেও শাসকদলের একচেটিয়া দাপট। অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিতেও (বর্তমানে তিহাড়ে বন্দি) তাঁর জেলা বীরভূমে ১৯টির মধ্যে ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতিই দখল করেছে তৃণমূল। দুই বর্ধমানেও যে ক’টি পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে, সব ক’টিই তাদের দখলে এসেছে। দুই ২৪ পরগনাতেও গুটিকয়েক গ্রাম পঞ্চায়েত বিরোধীদের দখলে গেলেও সব ক’টি পঞ্চায়েত সমিতিই দখল করেছে শাসকদল। একই ছবি পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, হাওড়া এবং ঝা়ড়গ্রামে।
দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গেও একই রকম ‘শক্তিপ্রদর্শন’ দেখা গিয়েছে তৃণমূলের। কোচবিহার, দুই দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি সর্বত্রই সব ক’টি পঞ্চায়েত সমিতিই দখল করেছে তৃণমূল। মালদহে অবশ্য ১৫টির মধ্যে ১০টি জিতেছে তারা। ত্রিশঙ্কু হয়েছে ৪টি পঞ্চায়েত সমিতি। ১৪৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যেও ৫৯টি জিতেছে শাসকদল। তবে ত্রিশঙ্কু হয়েছে ৬৪টি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy