Advertisement
E-Paper

পুজো থেকে ইদ, বেঁধে বেঁধে থাকাতেই বিশ্বাসী নাদিয়াল

রোজাদারদের হাতে গোলাপ ফুল তুলে দিচ্ছিলেন রুদ্রেন্দু পাল, বীরবল গিরি, সুরজিৎ অধিকারী, অশোক কর্মকারেরা।

হিন্দু-মুসলিম বাসিন্দাদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল শান্তি রক্ষা কমিটি বা ‘পিস কমিটি’।

হিন্দু-মুসলিম বাসিন্দাদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল শান্তি রক্ষা কমিটি বা ‘পিস কমিটি’। —প্রতীকী চিত্র।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৫ ০৯:৪৭
Share
Save

রমজান মাসের শেষ জুম্মার নমাজ পড়ে মসজিদ থেকে বেরোচ্ছিলেন ওবাইদুর রহমান, মনসুর আলি, হাজি শেখ জুম্মান হোসেনরা। আর রোজাদারদের হাতে গোলাপ ফুল তুলে দিচ্ছিলেন রুদ্রেন্দু পাল, বীরবল গিরি, সুরজিৎ অধিকারী, অশোক কর্মকারেরা। কলকাতা বন্দর এলাকার নাদিয়ালের ফকিরপাড়া জামা মসজিদে এমনই এক অন্য রকম সম্প্রীতির ছবি দেখা গেল। গোলাপ হাতে দেওয়ার সময়ে কোলাকুলি করতেও ভুললেন না ওঁরা।

কলকাতা পুরসভার ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডের গঙ্গাতীরবর্তী নাদিয়ালে পা রাখলে মনে হবে, শহরের মধ্যেই যেন একটি গ্রাম। এই ওয়ার্ডেই কয়েক বছর আগে এলাকার হিন্দু-মুসলিম বাসিন্দাদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল শান্তি রক্ষা কমিটি বা ‘পিস কমিটি’। ইদ, কুরবানি, দুর্গাপুজো বা মহরমে শান্তি ও সৌহার্দ্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগী হন এই কমিটির সদস্যেরা। কমিটির মাথায় যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন মহম্মদ ওয়ারিশ এবং রুদ্রেন্দু পাল। ফকিরপাড়া জামা মসজিদের জুম্মার নমাজ শেষ হতেই মিঠু মোল্লাকে জড়িয়ে ধরলেন শান্তি কমিটির রুদ্রেন্দু। মিঠুর হাতে গোলাপ দিয়ে রুদ্রেন্দু বলছিলেন, ‘‘কবি বলে গিয়েছেন, আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি। আমাদের এখানে দুর্গাপুজোর সময়ে এলাকার মুসলিম ভাই-বোনেরাও তাতে শামিল হন। আবার একই ভাবে রমজান, ইদেও বেঁধে বেঁধে থাকি আমরা। কোনও অশুভ শক্তি এই বাঁধন ছিন্ন করতে পারবে না।’’

শান্তি কমিটির আর এক যুগ্ম সম্পাদক মহম্মদ ওয়ারিশের কথায়, ‘‘দেশের একটি রাজনৈতিক দল হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণের নীতিতে বিশ্বাসী। আমরা নাদিয়ালের হিন্দু-মুসলিম বাসিন্দারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই বসবাস
করছি। পুজোর সময়ে বোধন থেকে বিসর্জন পর্যন্ত আমরা তাতে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করি। একই ভাবে হিন্দু ভাইয়েরা রমজান মাসে গরিব মুসলিমদের পাশে দাঁড়ান।’’ রমজানের বিদায়ী শুক্রবারে রোজাদারদের হাতে গোলাপ তুলে
দেওয়ার প্রসঙ্গে এলাকার বাসিন্দা অসিতরঞ্জন জোয়ারদার বলছিলেন, ‘‘গোলাপ ভালবাসার ফুল।
নাদিয়ালে সেই ভালবাসা অটুট রাখতেই গোলাপ বিতরণের এই আয়োজন।’’

শনিবার শান্তি কমিটির তরফে এলাকার দুঃস্থ মুসলিমদের হাতে সিমুই, আটা, তেল, চিনি এবং একটি করে দেশি মুরগি উপহার হিসাবে তুলে দেওয়া হয়। শান্তি কমিটির কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ নাদিয়াল থানার ওসি সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এটা কিন্তু লোক দেখানো সম্প্রীতি নয়। এখানে সত্যিই বছরভর বিভিন্ন পার্বণে দুই সম্প্রদায় পরস্পরের পাশে থাকে। এটাই তো আমাদের ভারতের আসল ছবি। গোটা দেশেই এমন পরিবেশ তৈরি হোক।’’

কাল, সোমবার খুশির ইদ। রমজান মাসের শেষ লগ্নে কথা বলতে গিয়ে চোখ ভিজে যাচ্ছিল হাজি শেখ জুম্মান হোসেনের। মসজিদের সামনে হারানচন্দ্র কর্মকারের কাঁধে হাত রেখে মাথায় টুপি পরিহিত হাজি জুম্মান বলছিলেন, ‘‘ধর্মীয় ভেদাভেদ নয়। আমরা চাই, সারা পৃথিবীতেই সব ধর্মের মানুষ এ ভাবে বাঁচুন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Harmony festival

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}