Advertisement
২০ জানুয়ারি ২০২৫
দিন বদলেছে ঠিকই

‘সুদিন’ কি ফিরেছে?

গত সাতাশ বছর ধরে দিনটি ‘শহিদ স্মরণ’ দিবস হিসেবেই পালন করেন এলাকার গ্রামবাসীরা।

শহিদ দিবস পালন করছে নাগরিক কল্যাণ পরিষদ। নিজস্ব চিত্র।

শহিদ দিবস পালন করছে নাগরিক কল্যাণ পরিষদ। নিজস্ব চিত্র।

মফিদুল ইসলাম
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৩৭
Share: Save:

সাতাশ বছর পরেও ২’রা নভেম্বর ভোলেনি হরিহরপাড়া।

বছরের কয়েকটা দিন মাথা নীচু করে স্মরণ করে দেশ, স্থানীয় ইতিহাস সেই তালিকায় জুড়ে নেয় আরও কয়েকটি তারিখ। মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় তেমনই এক স্পর্শকাতর দিন নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় দিনটি।

আশির দশকের মাঝামাঝি মুর্শিদাবাদের এই প্রান্তিক এলাকাটি নরকগুলজার করে রেখেছিল দুষ্কৃতীদের কয়েকটি গোষ্ঠী। খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, রাহাজানির সেই নিত্য আতঙ্কে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া হরিহরপাড়ার মানুষ তাই প্রতিবাদে মিছিল করে ঘেরাও করেছিলেন স্থানীয় বিডিও অফিসে। ১৯৯২ সালের ২ নভেম্বর দুপুরে পুলিশের সামনেই জনতার সেই স্বতঃস্ফূর্ত আইন অমান্য আন্দোলন এক সময়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ চালিয়েছিল গুলি। মারা গিয়েছিলেন স্থানীয় সাত গ্রামবাসী।

সেই থেকে গত সাতাশ বছর ধরে দিনটি ‘শহিদ স্মরণ’ দিবস হিসেবেই পালন করেন এলাকার গ্রামবাসীরা। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নিহত সাত-শহীদকে স্মরণ করলেন হরিহরপাড়ার নাগরিক কল্যাণ পরিষদের সদস্য ও হরিহরপাড়ার সাধারণ মানুষ।

জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, দিনে দুপুরে খুন, ছিনতাই ছিল তখন নিত্যকার ঘটনা। এমনকি বৃদ্ধ ভিখারির সারা দিনের উপার্জন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও পুলিশের খাতায় নথিবদ্ধ রয়েছে। এ সবের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলে ‘আইনের শাসন’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে এক সময় জোট বেঁধেছিল হরিহরপাড়ার মানুষ। পুলিশ গুলি চালালে, আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা সাত গ্রামবাসী, শঙ্কর দত্ত, আব্দুর রাজ্জাক খান, শচীন পাল, আলতাফ হোসেন, আনসার সেখ, বিশ্বনাথ সাহা এবং আমিরুল ইসলাম পিন্টু মারা গিয়েছিলেন ইএফআরের গুলিতে। গ্রেফতার করা হয়েছিল, ৪২ জন আন্দোলনকারীকে। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর সম্প্রতি আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে ঘরে

ফিরেছেন অনেকেই।

নাগরিক কল্যাণ পরিষদের সম্পাদক তথা সেদিনের আন্দোলনের অন্যতম নেতা মদন সরকার বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন সাত জন। দাস কমিশনের কাছে এবং আদালতের কাছেও সে দিনের দোষীরা আজ নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। সাতাশ বছর মামলা লড়ে আমরা বেকসুর খালাস পেলাম।’’ কিন্তু যে কারণে এই আন্দোলন, তার কি সুরাহা হয়েছে? বাঁকা হাসছেন মদনবাবু। বলছেন, ‘‘সে দিনের যুবকংগ্রেস নেত্রীই এখন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কাছে বিচার চেয়েছি বার বার।’’

দেহে গুলির ক্ষত শুকিয়েছে জিল্লার রহমান, রিয়াজুল শেখ, সামসের শেখদের। নিহত শঙ্কর দত্তের বৃদ্ধা মা কল্যাণী দত্ত বলছেন, ‘‘দিন বদলেছে, তবে সুদিন ফিরেছে কি না বলতে পারব না!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Hariharpara হরিহরপাড়া Martyr Remembrance Day শহিদ স্মরণ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy