পাচার চক্রের খপ্পর থেকে রেহাই পেয়েও ১০টি শিশুকন্যার দুর্গতির অবসান হয়নি। ত্বকে ও বুকে সংক্রমণ, থ্যালাসেমিয়া, ‘সেরিব্রাল পালসি’-সহ শরীর ও মন-মস্তিষ্কের হাজারো রোগব্যাধি ঘিরে ধরেছে তাদের। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, পৃথিবীর আলো দেখার পরে পরে মায়ের সঙ্গে ওই শিশুদের যাবতীয় সম্পর্ক চুকেবুকে যাওয়াই এই সব অসুখের মূল কারণ।
কী ভাবে ভুগছে ওই শিশুরা?
ঠাকুরপুকুরের ‘পূর্বাশা’ হোম থেকে উদ্ধার হওয়া সাত মাসের একটি বাচ্চা ‘সেরিব্রাল পালসি’তে আক্রান্ত। রবিবার এ কথা জানান জোকা ইএসআই হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক প্রীতম বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, সাত মাসের বাচ্চাটিকে জন্মের পরে মোটেই কাঁদানো হয়নি। সেই জন্য তার মাথায় ঠিকমতো অক্সিজেন পৌঁছতে পারেনি। তাতেই মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার জেরে জন্মের সাত মাস পরেও বাচ্চাটি পা নাড়াচাড়া করতে পারছে না।
নিরাময়ের উপায় কী?
‘‘তাড়াতা়ড়ি ফিজিওথেরাপি শুরু করা দরকার। কিন্তু তাতেও সমস্যা আছে। কেননা বাচ্চাটি অপুষ্টিরও শিকার। তাই উপযুক্ত খাদ্য দিয়ে এবং গরম পরিবেশে রেখে প্রথমে তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনার চেষ্টা চলছে। তার পরে শুরু হবে অন্য চিকিৎসা,’’ বললেন প্রীতমবাবু।
শুক্রবার শেষ রাতে ঠাকুরপুকুর থানা এলাকার হাঁসপুকুরের একটি হোমের তেতলা থেকে ১০টি শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে সিআইডি। উদ্ধারের পরেই তাদের ভর্তি করানো হয় জোকা ইএসআই হাসপাতালে। আপাতত তাদের রাখা হয়েছে পেডিয়াট্রিক ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিট (পিআইসিইউ)-এ। প্রীতমবাবু জানান, দীর্ঘদিন ধরে অপরিচ্ছন্ন এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখায় পাঁচটি শিশুকন্যার ত্বকে এবং বুকে সংক্রমণও ধরা পড়েছে। ইতিমধ্যে একটি বাচ্চা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় তাকে এক ইউনিট রক্তও দেওয়া হয়েছে। ডায়েরিয়ায় ভুগে দেড়-দু’মাসের অন্য দু’টি বাচ্চার শরীরে জলের পরিমাণ বিপজ্জনক ভাবে কমে গিয়েছিল। চূড়ান্ত ‘ডিহাইড্রেশন’-এর ফলে শুকিয়ে গিয়েছিল তাদের শরীর। ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না-হলে বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারত বলে জানান ওই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ।
এখানেই সমস্যার শেষ নয়। শারীরিক অসুখের থেকে তাদের মানসিক সমস্যা কিছু কম ভয়াবহ নয় বলেই জানাচ্ছেন ডাক্তারেরা। কেন?
ওই ১০টি বাচ্চাকে জন্মের পরেই মায়ের থেকে আলাদা করে ফেলায় মায়ের দুধ বা তাঁদের শরীরের তাপটুকুও পায়নি তারা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে নবজাতক বেশ কিছুটা সময় মায়ের সঙ্গে থাকলে দু’জনের মধ্যে যে-মানসিক বন্ধন তৈরি হয়, সেটি শিশুর মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। কিন্তু ওই ১০টি বাচ্চাকে জন্মের পর থেকেই মায়ের থেকে আলাদা করে নেওয়া হয়েছিল। তাই তাদের সকলেরই মানসিক বিকাশ থমকে গিয়েছে। সেই জন্যই হোম থেকে উদ্ধারের পরে এবং হাসপাতালে আনার পরেও ওই শিশুদের কেউ কাঁদতে দেখেননি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বাচ্চাগুলি এতটাই নিস্তেজ হয়ে পড়েছে যে, তাদের কাঁদার ক্ষমতাটুকুও ছিল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy