Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

কেন খুন? উত্তর হাতড়াচ্ছে ২ জওয়ানের বাড়ি

ছত্তীসগঢ়ের কাদেনারে বুধবার সহকর্মীর গুলিতে মারা গিয়েছেন ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের (আইটিবিপি) জওয়ান সুরজিৎ সরকার (২৭) ও বিশ্বরূপ মাহাতো (২৫)। 

সুরজিৎ সরকার ও বিশ্বরূপ মাহাতো

সুরজিৎ সরকার ও বিশ্বরূপ মাহাতো

নিজস্ব সংবাদদাতা
পূর্বস্থলী ও আড়শা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৫
Share: Save:

এক জনের বিয়ে ঠিক হয়েছিল আগামী বৈশাখে। সেই উপলক্ষে বাড়ির উঠোনে নতুন ঘরের ভিত গাঁথা শুরু হয়েছিল। অন্য জনেরও বিয়ের কথা হচ্ছিল। তবে সুরজিৎ এবং বিশ্বরূপকে বর বেশে দেখার সুযোগ নেই আর।

ছত্তীসগঢ়ের কাদেনারে বুধবার সহকর্মীর গুলিতে মারা গিয়েছেন ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের (আইটিবিপি) জওয়ান সুরজিৎ সরকার (২৭) ও বিশ্বরূপ মাহাতো (২৫)।

সুরজিতের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর শ্রীরামপুরে। বিশ্বরূপ পুরুলিয়ার আড়শা থানার খুকড়ামুড়া গ্রামের বাসিন্দা। দু’টি পরিবারেরই দাবি, তাদের ছেলেরা সাতে-পাঁচে থাকতেন না। কর্মক্ষেত্রে কারও সঙ্গে তাঁদের মনোমালিন্য চলছে বলেও জানা নেই। তাই সহকর্মী জওয়ান তাঁদের গুলি করলেন কেন, সে ধন্দ যাচ্ছে না কোনও পরিবারেরই।

আরও পড়ুন: ছত্তীসগঢ়ে ৫ আইটিবিপি সহকর্মীকে মেরে আত্মঘাতী বাঙালি জওয়ান

সুরজিতের বাবা পীযূষ সরকার জানান, এ দিন দুপুরে টিভিতে জানতে পারেন, ছত্তীসগঢ়ে আইটিবিপি ক্যাম্পে সহকর্মীর গুলিতে কয়েক জন জওয়ান মারা গিয়েছেন। পীযূষবাবুর কথায়, ‘‘মনটা কু-ডাকল। সঙ্গে সঙ্গে ছেলের মোবাইলে ফোন করি। ও ধরেনি। পরে পূর্বস্থলী থানা থেকে পেলাম খারাপ খবর।’’ স্থানীয় গয়ারাম দাস বিদ্যামন্দির থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কল্যাণীর কলেজে পলিটেকনিক পড়ছিলেন সুরজিৎ। পড়তে পড়তেই আইটিবিপিতে চাকরি পান। অরুণাচলে প্রশিক্ষণের পরে ওড়িশা, রাজস্থান, তামিলনাড়ুতে কাজ করেছেন তিনি।

ছেলেবেলা থেকেই খেলাধুলোয় পারদর্শী বিশ্বরূপ উচ্চমাধ্যমিকের পরেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বাড়ির চাপে ভর্তি হয়েছিলেন পুরুলিয়া জেকে কলেজে। পড়ার মধ্যেই ২০১৪ সালে সিআরপি এবং আইটিবিপি-তে কাজের ডাক পান। তবে আইটিবিপি-র প্রস্তাব আগে আসায় সেখানেই যোগ দেন। প্রথম পোস্টিং ছিল জয়পুরে। তার পরে ছত্তীসগঢ়। বিশ্বরূপের বড়দা, পেশায় হোমিওপ্যাথি ডাক্তার আশিস মাহাতো বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতে ভাই ফোন করেছিল। এ দিন দুপুরে থানা থেকে খবরটা পেয়ে আকাশ থেকে পড়েছি। ভাইয়ের অফিস থেকে কোনও ফোন পাইনি।’’ আইটিবিপি কিছু জানায়নি বলে দাবি সুরজিতের পরিবারেরও।

আশিসবাবুরা তিন ভাই। আশিস বড়। মেজ ভাই সুবোধ রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল। বিশ্বরূপ ছোট। আশিসবাবু বলেন, ‘‘তিন ভাই মিলে দোতলা, পাকা বাড়ি তুলেছি। ভেবেছিলাম, দু’ভাইয়ের এক সঙ্গে বিয়ে দেব!’’ পীযূষবাবু যেমন ঠিক করেছিলেন, বৈশাখে সুরজিতের বিয়ে দেবেন।

বিশ্বরূপ পুজোর সময়ে বাড়িতে ঘুরে গিয়েছেন। ফিরে যান ৩ নভেম্বর। সুরজিৎ কালীপুজোর আগে এসে রাস কাটিয়ে কর্মস্থলে ফেরেন। সুরজিতের মা পার্বতীদেবী কথা বলতে বলতে জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। জ্ঞান ফিরলেই বলছিলেন, ‘‘ছেলে বারবার বলছিল, আবার ক’দিন পরেই আসবে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Chhattisgarh ITBP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy