যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ। ফাইল চিত্র।
ঘুরপথে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পেতে হলেও যেটা জরুরি, টাকার বিনিময়ে টেট পাশের সেই ‘সার্টিফিকেট’ বা শংসাপত্র হাতে পেয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ওয়েবসাইটে নিজেদের নাম দেখতে না-পেয়ে বাঁকা পথের যাত্রী সেই অযোগ্য প্রার্থীরা যে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের বেশ কয়েক জন তা স্বীকার করেছেন বলে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সূত্রের দাবি। ওই সংস্থা সূত্রের অভিযোগ, ওই প্রার্থীদের নাম ওয়েবসাইটে না-থাকার কারণ, পর্ষদের ওয়েবসাইট হ্যাক করে নকল শংসাপত্র বানানো হয়েছিল এবং সেই সাইবার সরণির অপরাধের হোতা যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ।
ইডি সূত্রের দাবি, আসল নয়, নকল নিয়োগপত্র দিয়েই কুন্তল প্রায় তিন কোটি ২৫ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন। তদন্তকারীদের অভিযোগ, পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য-ঘনিষ্ঠ বেসরকারি কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস মণ্ডলের মাধ্যমে ৩২৫ জনের কাছ থেকে প্রাথমিকে নিয়োগের অগ্রিম হিসেবে মাথাপিছু এক লক্ষ টাকা অর্থাৎ মোট তিন কোটি ২৫ লক্ষ টাকা নিয়েছিল কুন্তল। সেই ৩২৫ জনের মধ্যে মাত্র ২৭ জনের চাকরি হয়েছে।
তবে ওই ৩২৫ জনের কাছেই টেট পাশের ‘শংসাপত্র’ রয়েছে এবং সেগুলি ডাউনলোড করা হয়েছে পর্ষদের ওয়েবসাইট থেকে। ইডি-র দাবি, কুন্তলই এক লক্ষ টাকা করে নিয়ে ৩২৫ জন অযোগ্য প্রার্থীর হাতে সেই সার্টিফিকেট তুলে দিয়েছিলেন।
তাপস এবং অযোগ্য প্রার্থীদের একাংশকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সূত্রের খবর, ওই প্রার্থীদের বয়ান অনুযায়ী, টেট উত্তীর্ণের শংসাপত্র পেলেও সরকারি ওয়েবসাইটে নিজেদের নাম দেখতে না-পেয়ে তাঁরা হতভম্ব হয়ে যান। সে-কথা কুন্তলকে জানালে তিনি তাঁদের স্তোক দিয়ে বলেছিলেন, মাঝেমধ্যেই ওয়েবসাইট আপডেট হয়। নতুন নাম আসে, সরিয়ে দেওয়া হয় পুরনো নাম। তাই তাঁদের নাম উঠতে সময় লাগবে। অভিযোগ, তাঁর দেওয়া সার্টিফিকেটই টেট পাশের আসল প্রমাণপত্র বলে প্রার্থীদের জানিয়েছিলেন কুন্তল।
ইডি সূত্রের খবর, ‘শংসাপত্র’ সত্ত্বেও পর্ষদের ওয়েবসাইটে নাম না-থাকায় এবং দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও নিয়োগপত্র না-আসায় অযোগ্য প্রার্থীদের একাংশ সন্দিহান হয়ে পড়েন এবং তাঁদের কাছে কুন্তলের জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে যায় অচিরেই। তাঁরা হন্যে হয়ে কুন্তলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেন এবং টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন তাপসের উপরে।
তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি, অযোগ্য প্রার্থীদের বয়ান অনুযায়ী ইএম বাইপাস সংলগ্ন একটি ফ্ল্যাটের অফিসে তাঁদের ডাকা হত। সেখানকার কম্পিউটারে ওয়েবসাইট খুলে দেখানো হত যে, অযোগ্য প্রার্থীদের নাম টেট পাশের তালিকায় আছে। সেখান থেকেই ‘নকল’ সার্টিফিকেটের প্রিন্ট-আউট অযোগ্য প্রার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে ইডি সূত্রের দাবি। তদন্তকারীদের অভিযোগ, টালিগঞ্জ ও হুগলির বলাগড়ের বাসিন্দা, কুন্তলের দুই কর্মচারী ওই ওয়েবসাইট হ্যাক করতেন। কয়েক ঘণ্টার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ওয়েবসাইট ‘হ্যাক’ করে অযোগ্য প্রার্থীদের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হত। ওই কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এক ইডি-কর্তার দাবি, কুন্তলকে টানা ১০ দিন জেরা করে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির অনেক তথ্য হাতে এসেছে। চাকরি লুটের টাকা কোথায় কোথায় পৌঁছেছে, তারও খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। কী ভাবে কম্পিউটার হ্যাক করে জালিয়াতি চালানো হয়েছে, তা বিশদ ভাবে জানতে সাইবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy