Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Recruitment Scam

‘কুন্তলের সই করা চেক’ ফিরিয়ে দিয়েছে ব্যাঙ্ক, ছেলের চাকরির জন্য টাকা দিয়ে সঙ্কটে প্রৌঢ়

প্রথমে দু’লক্ষ টাকাই নিয়েছিলেন সন্টু। কোনও ছেলের চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চান অরুণ। তখন সন্টু কুন্তল ঘোষের সই করা চার লাখ টাকার চেকটি এনে দেন। কিন্তু ব্যাঙ্কে জমা করতে সেটি বাউন্স করে।

Picture of the bounce cheque signed by Kuntal Ghosh.

সেই বাউন্স করা চেক যেখানে কুন্তল ঘোষের সই। নিজস্ব চিত্র

সন্দীপন চক্রবর্তী, সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৫৯
Share: Save:

চার লক্ষ টাকার একটি চেক নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন অরুণ সামন্ত।

আর কী-ই বা করবেন? অকূল পাথারে পড়ে গিয়েছেন তিনি। চেকের তলায় সই কুন্তল ঘোষের। কিন্তু চেকটি ফিরিয়ে দিয়েছে ব্যাঙ্ক।

আপনি কি নিশ্চিত, এই কুন্তল ঘোষ তৃণমূলেরই সেই যুব নেতা, যিনি শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় আপাতত জেলে বন্দি? শুক্রবার সকালে হাওড়া-হুগলির সীমানাবর্তী জয়পুরে বন্ধু মহম্মদ হাবিবের চায়ের দোকানে বসে হাত উল্টে দেন ৫৪ বছর বয়সি অরুণ, ‘‘কী করে বলি বলুন তো! আমি তো নিজের হাতে তাঁকে (কুন্তলকে) টাকা দিইনি! যাঁকে দিয়েছিলাম, কুন্তলের সই করা এই চেকটা দিয়েছিলেন তিনিই।’’

কাকে দিয়েছিলেন টাকা? অরুণ জানান, তাঁর নাম সন্টু বাগ। ‘‘এই তো দিন দশেক আগেও সন্টু বলেছেন, চিন্তা করবেন না। ছেলের চাকরি হয়ে যাবে,’’ ধরা গলায় বলেন অরুণ। জমি বিক্রি করে, স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে মোট ১০ লক্ষ টাকা রীতিমতো কোর্ট পেপারে সই করে তুলে দিয়েছিলেন সন্টুর হাতে। কথা হয়েছিল, অরুণের বড় ছেলে ঋজু (২৬)-কে রাজ্যের কৃষি দফতরে আর ছোট ছেলে রিংশু (২৪)-কে স্কুলশিক্ষকের চাকরি করে দেবেন সন্টু। তাঁকে সন্টুই বলেছিলেন কুন্তলের কথা। কুন্তল হুগলির নেতা। সন্টুর বাড়িও হুগলির খানাকুলে।

কে এই সন্টু? অরুণ জানান, বড় ছেলের বন্ধুর সম্পর্কে মামা হন সন্টু। বি-কম পাশ ঋজু তাঁকে সন্টুর কথা বলেন। সন্টু প্রথমে ন’লক্ষ টাকা চান। রফা হয় আট লক্ষে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৫০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে অবশ্য ন’লক্ষ টাকার কথাই আছে। পরে মুখে আট লক্ষ টাকার কথা হয়। অগ্রিম দু’লক্ষ টাকা দিয়ে অরুণ যে-চুক্তিপত্র সই করেছিলেন, তাতে সই করে সন্টু লিখে দেন, ২০ দিনের মধ্যে কৃষি বিভাগের ‘গ্রুপ সি’ বা তৃতীয় শ্রেণির কর্মী-পদে চাকরি না-হলে ওই টাকা ফেরত দেবেন তিনি। তার পরে দু’বছর কেটে গিয়েছে।

অরুণের দাবি, ‘‘কুন্তলের নাম করে সন্টু এমন ভাবে নিশ্চিত করে বলেছিলেন যে, পুরোপুরি বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু ১০ লক্ষ টাকায় একটি চাকরিও হয়নি।’’

পুলিশকে জানিয়েছেন? পাংশু মুখে অরুণ বলেন, ‘‘নিজেই তো অন্যায় করেছি। তাই এত দিন যাইনি। কয়েক দিন আগে পর্যন্তও মনের মধ্যে আশা ছিল, চাকরি একটা হয়ে যাবে। বড় ছেলের না-হলেও ছোট ছেলেরটা হবে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, ঠকে গিয়েছি। বাড়িতে নিত্য গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে। গয়না বন্ধকের টাকার সুদ দিতে পারছি না। গয়নাগুলো চলে যাবে।’’ কমিশনের ভিত্তিতে স্থানীয় পঞ্চায়েতে ট্যাক্সের বিল কাটার কাজ করেন অরুণ। দু’হাতে মুখ ঢেকে প্রৌঢ় বললেন, ‘‘এখন শুনছি, আদালতও নাকি বলছে, আমরা যারা টাকা দিয়েছি, তাদেরও নাকি গ্রেফতার করা উচিত। আত্মহত্যা ছাড়া আর রাস্তা কী! পড়াশোনা করেও চাকরি না-পেয়ে বেকার দুই ছেলে বাড়িতে বসে আছে। এই যন্ত্রণা কাকে বোঝাব?’’

তা হলে কি শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়, রাজ্য সরকারের অন্যান্য বিভাগেও চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা তুলেছিলেন কুন্তল? উঠছে প্রশ্ন।

অরুণ বলেন, ‘‘ছোট ছেলে ২০১৭ সালের টেটে বসেও পাশ করতে পারেনি। সন্টুকে তা জানানোয় তিনি রিংশুকে শিক্ষকের চাকরি করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। আরও দু’লক্ষ টাকা নেন। তার জন্য আলাদা চুক্তিপত্র হয়।’’ সেই চুক্তিপত্রে মোট ১০ লক্ষ টাকার কথা উল্লেখ থাকলেও প্রথমে দু’লক্ষ টাকাই নিয়েছিলেন সন্টু। কোনও ছেলের চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চান অরুণ। তখন সন্টু কুন্তল ঘোষের সই করা চার লাখ টাকার চেকটি এনে দেন। কিন্তু ব্যাঙ্কে জমা করতে সেটি বাউন্স করে।

শুক্রবার বার বার চেষ্টা করেও সন্টুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘তৃণমূলের গুণধর চাপে পড়ে টাকা ফেরতের যে-চেক দিয়েছিলেন, সেটাও বাউন্স করেছে। ইডি, সিবিআইয়ের এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত করা উচিত। কত জালিয়াতি যে ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে, কে জানে!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy