কুন্তল ঘোষ এবং গোপাল দলপতি। ফাইল চিত্র।
গোপাল উধাও!
নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে সম্প্রতি ভেসে উঠেছে তাঁর নাম। জানা গিয়েছিল, বেআইনি অর্থলগ্নি মামলায় তিনি নাকি তিহাড় জেলে বন্দি।
অতি সম্প্রতি সেই গোপাল দলপতির খোঁজ করতে গিয়ে জানা গিয়েছে তিনি সেখানে নেই। অনেক দিন আগেই নাকি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এমনকি, তার পরে তাঁর খোঁজ করেও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।
শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতিতে একের পর এক নতুন নাম উঠে আসছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য-র কাছ থেকে জানা গিয়েছিল বেসরকারি কলেজ সংগঠনের নেতা তাপস মণ্ডলের নাম। মানিককে গ্রেফতার করা হলেও তাপসকে করা হয়নি। যদিও তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে তৃণমূল দুই যুব নেতা কুন্তল ঘোষ ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। কুন্তলকে গ্রেফতার করে তাঁকে জেরা করতে উঠে এসেছে গোপালের নাম।
ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে তাপস জানিয়েছেন, গোপাল তাঁরই পরিচিত ছিলেন। তিনিই গোপালের সঙ্গে কুন্তলের আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। পরে গোপাল কুন্তলরে সঙ্গেই থাকতে শুরু করেন। সূত্রের খবর, বছর খানেক আগে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার মামলায় গোপালকে গ্রেফতার করেছিল দিল্লি পুলিশের আর্থিক অপরাধ দমন শাখা। তারপর থেকে গোপাল তিহাড় জেলেই ছিলেন।
গত শনিবার ইডি গ্রেফতার করার পর থেকেই কুন্তলের দাবি, তাপস ও গোপাল চক্রান্ত করে তাকে ফাঁসিয়েছে। গোপাল নিয়োগ দুর্নীতিতে কোটি কোটি টাকা তুলেছেন। এমনকি জেরায় তদন্তকারীদের কাছে কুন্তলের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির কোটি কোটি টাকার একটি অংশ বিভিন্ন দফায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দেওয়ার সময়ে তাঁর সঙ্গী ছিলেন গোপাল। ইডির দাবি, তাপস-মারফত নিয়োগ দুর্নীতিতে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা নিয়েছিলেন কুন্তল। আরও সাড়ে ১০ কোটি টাকা গোপাল-মারফত কুন্তল নিয়েছিলেন। তাপসের দাবি, ২০১৬য় কয়েকজনকে প্রাথমিক নিয়োগে চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন গোপাল। এরপরই কুন্তলের সঙ্গে গোপালের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
ইডি সূত্রের দাবি, গত শুক্রবার দিল্লি পুলিশের সঙ্গে গোপালের বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, বছর খানেক আগেই জামিন পান গোপাল। তারপর আর গোপালের কোনও খোঁজ নেই। দিল্লি পুলিশও গোপালের খোঁজ করছে।
ইডির দাবি, গোপাল আদতে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর-২ ব্লকের খিরিশবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। পরিজনেরা বলছেন, তিনি দীর্ঘ দিন বাড়িছাড়া। ২০১৬-র পরে বেহালার মুচিপাড়া এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। টালিগঞ্জের এক অভিনেত্রীও নাকি তাঁর সঙ্গে থাকতেন। ২০১৮-র মাঝামাঝি ওই বাড়ি ছেড়ে দিয়েছিলেন গোপাল।
শনিবার তাপস জানিয়েছেন, ২০২১-এ কুন্তল তাঁকে বলেছিলেন, গোপাল দিল্লিতে প্রতারণার মামলায় ধরা পড়েছেন। এখন জেলে রয়েছেন। তাপসের কথায়, “কুন্তলের মাধ্যমে গোপালের খোঁজ পেয়েছিলাম। তারপর কী হয়েছে, আমি আর জানি না।“ ইডির তদন্তকারীদের কথায়, গ্রেফতারের পরে গোপাল ও তাপস মিশ্র নামে দুই এজেন্টের বিরুদ্ধে দোষারোপ করে চলেছেন কুন্তল। ইডি-র দাবি, কাকতালীয় ভাবে তাপসও নিখোঁজ।
দিল্লি পুলিশ সূত্রের দাবি, মোটা সুদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমানতকারীদের কাছ থেকে দিল্লির একটি বেআইনি সংস্থা প্রায় ৮ কোটি টাকা তুলেছে বলে ২০১৫-র অগস্টে অভিযোগ দায়ের হয়। ওই অর্থলগ্নি সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন গোপাল। এ রাজ্যের বহু আমানতকারীদের কাছ থেকেও গোপালের বিরুদ্ধে টাকা সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরই গা ঢাকা দেন গোপাল। ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির সাকেত কোর্ট এলাকা থেকে গোপালকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। তার মাস ছয়েক পরে গোপাল ওই মামলায় জামিন পেয়ে যান।
ইডির দাবি, দিল্লির ওই মামলায় গ্রেফতার এড়াতে এ রাজ্যে গা ঢাকা দিয়েছিলেন গোপাল। আর ওই সময়, ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত কুন্তলের সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতিতে এজেন্টের কাজ করছিল। তার পরে দিল্লি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান গোপাল।
গোপালের ভাইয়ের স্ত্রী নীলিমা দলপতি বলেন, ‘‘৬ বছর আগে বিয়ের পরে এসে দেখছি ভাসুর বাড়িতে থাকেন না। শুনেছি দমদমে থাকেন। গ্রামে মাঝেমধ্যে আসতেন। উনি কী করেন কিছুই জানি না।’’ প্রতিবেশীদের দাবি, গোপালদের পারিবারিক দোকান ছিল। তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টিউশন পড়াতেন গোপাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy