হুগলির প্রোমোটার অয়ন শীলের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া নথি থেকে বেশ কয়েক জন এজেন্টের নাম পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছে ইডি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এ যেন কেঁচো খুড়তে কেউটে! রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে হুগলির বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ প্রোমোটার অয়ন শীলের কাছ থেকে মিলেছে একাধিক নথি। যার মধ্যে রয়েছে পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত নথিও। সেই নথি ঘিরেই দানা বাঁধল নতুন রহস্য। শুধু শিক্ষা নয়, পুরসভাতেও টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। অয়নের অফিস থেকে উদ্ধার হওয়া নথি থেকে বেশ কয়েক জন এজেন্টের নামের তালিকা হাতে পেয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সূত্রের খবর, ওই এজেন্টদের খুঁজে বার করতে এ বার উঠেপড়ে লেগেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
শান্তনুকে গ্রেফতারের পরই অয়নের সম্পর্কে জানতে পারেন তদন্তকারীরা। শনিবার রাতে অয়নের সল্টলেকের অফিসে হানা দেয় ইডি। দীর্ঘ প্রায় ৩৭ ঘণ্টা তল্লাশির পর রবিবার গ্রেফতার করা হয় অয়নকে। ইডির তরফে দাবি করা হয় যে, সল্টলেকে অয়নের অফিস থেকে প্রচুর পরিমাণে নথি উদ্ধার করা হয়েছে। সেই নথি খতিয়ে দেখতে গিয়েই উঠে এসেছে একাধিক এজেন্টের নাম। যাঁদের মাধ্যমে পুরসভায় নিয়োগের জন্য টাকা তোলা হয়েছিল বলে অনুমান করছেন তদন্তকারীরা।
কী রয়েছে ওই নথিতে? বেশ কয়েক জন এজেন্টের নামের তালিকা পাওয়া গিয়েছে। তাঁরা হলেন, ‘কানুদা’, ‘লাল’, ‘এমডি’, ‘তপনদা’। এই এজেন্টদের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে পুরসভায় চাকরি দেওয়া হয়েছিল বলে অনুমান তদন্তকারীদের। প্রত্যেক এজেন্টের ক’জন চাকরিপ্রার্থী, তা যেমন উল্লেখ করা রয়েছে। তেমনই টাকার লেনদেন নগদ না ব্যাঙ্কে হয়েছে— সেই বিবরণও পাওয়া গিয়েছে ওই নথি থেকে।
ওই তালিকা অনুযায়ী, এজেন্ট ‘কানুদা’র ৯৬ জন প্রার্থীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই চাকরিপ্রার্থীদের রোল নম্বর, পদ, পুরসভা, বিভাগ-সহ বিস্তারিত বিবরণ এজেন্ট ‘কানুদা’ পাঠিয়েছেন। এই কথা উল্লেখ করা হয়েছে ওই তালিকায়। একই রকম ভাবে আরও বেশ কয়েক জন এজেন্টের নাম পাওয়া গিয়েছে। এজেন্ট ‘লালে’র প্রার্থীর সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৬৮। তাতে এ-ও উল্লেখ করা রয়েছে যে, নগদে লেনদেন হয়েছে। তালিকায় এজেন্ট হিসাবে নাম রয়েছে ‘এমডি’ নামে আরও এক জনের। তাঁর প্রার্থীর সংখ্যা ৪৩। তাঁর ক্ষেত্রেও নগদে লেনদেন হয়েছে। এজেন্ট ‘তপনদা’র প্রার্থীর সংখ্যা ১৫। ‘তপনদা’র ক্ষেত্রেও লেনদেন হয়েছে নগদে।
এই এজেন্টরা কারা? কোথায় রয়েছেন? এই নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে ইডির অন্দরে। সোমবার অয়নকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। হুগলির প্রোমোটারকে আগামী ১ এপ্রিল পর্যন্ত হেফাজতে পেয়েছে ইডি। হেফাজতে নিয়ে ওই এজেন্টদের ব্যাপারে অয়নের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হবে বলে ইডি সূত্রের খবর। ওই এজেন্টদের নাগাল পেলে অনেক রহস্যভেদ সম্ভব হবে বলেই ধারণা করছেন তদন্তকারীরা।
ইডি সূত্রে খবর, অয়নের কাছ থেকে পাওয়া বেশ কিছু নথিতে বরাহনগর, কামারহাটি, পানিহাটি, উত্তর এবং দক্ষিণ দমদম-সহ বহু পুরসভার নাম উল্লেখ রয়েছে। তা থেকে তাঁদের অনুমান, ওই সব পুরসভায় চাকরি ‘বিক্রি’ করে থাকতে পারেন অয়ন। তাঁদের ধারণা, অন্তত ৬০টি পুরসভার চাকরি ‘বিক্রি’ করছেন অয়ন। মনে করা হচ্ছে, এই চাকরি ‘বিক্রি’র কারবার শুরু হয়েছে ২০১৪-২০১৫ সাল থেকে। কত দিন পর্যন্ত ওই ‘বিক্রি’র কারবার চলেছে, না কি এখনও চলছে, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy