Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Reclaim the night

শহরে সাড়া ফেলা ‘রাত দখল’ গ্রামাঞ্চলে তেমন দাগ কাটেনি, লোকসভার সঙ্গে ‘সাযুজ্য’ই দেখছে তৃণমূল

আরজি কর-কাণ্ডে সাধারণ নাগরিকেরা যে ভাবে রাস্তায় নেমেছেন, তাতে অনেকেই বামফ্রন্টের শেষ পাঁচ বছরে নাগরিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতার সঙ্গে তুলনা করছেন। তৃণমূল এখনও সেই ‘বিপদসঙ্কেত’ দেখছে না।

Reclaim the Night Movement Affects urban areas but not rural areas

আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় পোস্টার হাতে মেয়েরা। —ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৪ ২১:৪৩
Share: Save:

মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচিতে বুধবার জেলায় জেলায় মানুষের যে ভাবে ঢল নেমেছিল, তা কি শাসকদল তৃণমূলের জন্য ‘অশনি সঙ্কেত’? তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা একান্ত আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, যে পরিমাণ লোক রাত দখলে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাতে ‘বিরোধী স্বর’ ছিল তীব্র ভাবেই। তাঁরা এ-ও মনে করছেন, লোকসভা ভোটে শহরাঞ্চলে যে খারাপ ফল হয়েছে তৃণমূলের, বুধবার রাতের কর্মসূচিতেও তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে তাঁরা ‘রুপোলি রেখা’ হিসাবে আরও একটি বিষয় দেখতে এবং দেখাতে চাইছেন। তা হল, সেই জনস্রোত ছিল কেবল শহর এবং মফস্সলেই সীমাবদ্ধ। গ্রমাঞ্চলে হুবহু ওই ছবি দেখা যায়নি।

শাসকদলের এক প্রথম সারির নেতা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে শহরাঞ্চলে আমাদের ফল ভাল হয়নি। দেখা গেল, সেখানেই মানুষের ঢল নেমেছিল। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি।’’ তৃণমূলের এক রাজ্যসভা সাংসদের বক্তব্য, ‘‘গ্রামের মানুষের আন্দোলন সবসময় নাছোড়বান্দা হয়। শহরাঞ্চলে তা থাকে না। সে দিক থেকে আমাদের জন্য সবটা নেতিবাচক নয়।’’ তবে তিনি এ-ও মনে করেন যে, এ নিয়ে এখন থেকেই ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।

কলকাতা থেকে হুগলি, হাওড়া থেকে বর্ধমান, শিলিগুড়ি কিংবা দুর্গাপুর— রাজ্যের সর্বত্র শহরাঞ্চলে রাত দখলে বিপুল মানুষের ভিড় দেখা গিয়েছিল বুধবার। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে ‘সে ভাবে’ দাগ কাটেনি রাত দখলের আহ্বান। জেলার মফস্সল শহরগুলোয় যে পরিমাণ মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন, তার থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের গ্রামাঞ্চল স্বাধীনতা দিবসের রাত রাস্তায় জাগেনি। যেমন বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজের সামনে যে পরিমাণ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন, তালড্যাংরা বা কোতুলপুরে তেমন বড় জমায়েত হয়নি। হুগলির চন্দননগরে যে মেজাজ ছিল মিছিলের, সিঙ্গুর বা হরিপালে তা দেখা যায়নি। শহরাঞ্চলে মানুষের ঢল এবং গ্রমাঞ্চলে দাগ কাটতে না পারাকে ‘উল্লেখযোগ্য’ বলে মনে করছেন শাসকদলের নেতারা। প্রবীণ তৃণমূল নেতা নির্বেদ রায় বলেন, ‘‘এই আন্দোলনের ফর্মটাই ছিল শহুরে। গ্রামের মানুষ তার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারেননি।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘শহরেও যাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁরা যে সবাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে মত পোষণ করেন, তেমন ভাবাটা অতিসরলীকরণ হয়ে যাবে। তাঁরা আরজি করের নির্মম ঘটনার প্রতিবাদ করতে মঞ্চ বেছে নিয়েছিলেন। তা ছাড়া, একটা নতুনত্বও ছিল আন্দোলনে। সেটাও অনেককে আকৃষ্ট করেছিল।’’ সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘সমাজমাধ্যম থেকে যে ভাবে রাত দখলের আন্দোলন ছড়িয়েছিল, তা গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছয়নি। তার নানা কারণ রয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে সেই কাজটাই করতে হবে। দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে, প্রত্যন্ত গ্রামের অনেক মানুষ হয়তো জানেনও না, আরজি করে কী ঘটেছে।’’

তৃণমূলের অনেকেই ‘আশাবাদী’ যে, যে হেতু বিধানসভা ভোট এখনও অন্তত ১৮ মাস দেরি, তাই শুধরে নেওয়ার সময়ও রয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার এক তৃণমূল নেতার বক্তব্য, ‘‘গ্রামের মানুষ রাস্তায় নামেননি বলে আমাদের আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। বরং শহর কেন ফুঁসছে, সেটা আগে চিহ্নিত করা উচিত।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘দলকে যদি ভুল শুধরে নিতেই হয়, তা হলে আগে মেনে নিতে হবে কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। তবেই সংশোধন সম্ভব।’’

আরজি কর-কাণ্ডে সাধারণ নাগরিকেরা যে ভাবে রাস্তায় নেমেছেন, তা দেখে অনেকেই বামফ্রন্টের শেষ পাঁচ বছরে নাগরিক আন্দোলনের যে ধারাবাহিকতা দেখা গিয়েছিল, তার সঙ্গে তুলনা করছেন। যদিও তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের অনেকেই এখনও তেমন কোনও ‘বিপদসঙ্কেত’ দেখছেন না। এক তৃণমূল সাংসদের বক্তব্য, ‘‘ওই সময়ে জমির বিষয় গ্রামের মানুষকে ক্ষেপিয়ে দিয়েছিল এবং আতঙ্কিত করেছিল। কারণ, জমির সঙ্গে তাঁদের নাড়ির টান। শহর তাতে সঙ্গ দিয়েছিল মাত্র। সেই পরিস্থিতির সঙ্গে আরজি কর পরবর্তী পর্বের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।’’ তাঁদের আরও বক্তব্য, সেই সময় বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনের সমান্তরাল নাগরিক আন্দোলন তৈরি হয়েছিল। এখন নাগরিক আন্দোলনে ভেসে থেকে উপস্থিতি জানান দিতে হচ্ছে বিরোধী দলগুলিকে। ফলে দু’টি পরিস্থিতিকে এখনই এক করে দেখতে চাইছেন না তৃণমূল নেতাদের অনেকেই। তবে তাঁরা মানছেন, ‘‘বিরুদ্ধতার স্বর উঠছে। সাড়ে ১৩ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার বাস্তবতা অনুধাবন করেই দলের উচিত গভীরে নজর দেওয়া।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy