Advertisement
E-Paper

সামুদ্রিক ঝড়েই কি ধ্বংস আদিম জনজীবন

সাম্প্রতিক খননকার্যে পূর্ব মেদিনীপুরের এরেন্দায় পাওয়া গিয়েছে এই প্রাচীন যুগের ঘর গৃহস্থালীর নিদর্শন।

—ফাইল চিত্র

শ্রেয়া ঠাকুর

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২১ ০৬:১৪
Share
Save

সামুদ্রিক ঝড়ের বিপত্তি শুধু আজকের নয়, গবেষকদের অনুমান, আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৩০০০ বছর আগেও প্রাচীন উপকূলীয় জনজাতির মানুষকে হয়তো লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়েছে তার সঙ্গে। ধ্বংসলীলা সামলে বারবার সেই স্থানে নতুন করে গৃহস্থালী পেতেছেন তাঁরা।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ববিভাগের অধ্যাপক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায় সাম্প্রতিক খননকার্যে পূর্ব মেদিনীপুরের এরেন্দায় পাওয়া গিয়েছে এই প্রাচীন যুগের ঘর গৃহস্থালীর নিদর্শন। খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০ থেকে ৯০০ অব্দের সময়কালে মূলত তাম্র ব্রোঞ্জ ও লৌহযুগে এখানে মানুষ বসবাস করেছে। ভূতাত্ত্বিক ভাবে এই সময়কে বলা হয় হলোসিন যুগের দ্বিতীয়ার্ধ। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ববিভাগের গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, ভূতাত্ত্বিক কারণে সমুদ্র সরে যাওয়ার পরে মানুষ এখানে বসবাস শুরু করে। সম্ভবত রাঢ়বঙ্গ থেকে তারা এরেন্দাতে এসেছিলেন। তখনকার জলবায়ু এখনকার মতই ছিল। এলাকার কাছাকাছি ছিল প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট জলাভূমি। সেই জলাভূমির বন্য ধান জাতীয় শস্য থেকেই এখানে কৃষিকাজের সূচনা। জলা জায়গায় জন্মানো নলখাগড়া মাটির সাথে মিশিয়ে তৈরি হত ঘর, যে পদ্ধতি আজও গ্রামাঞ্চলে ব্যবহার করা হয়।

অধ্যাপক গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এই অঞ্চল থেকে গৌড়ের রাজা শশাঙ্কের একটি তাম্রশাসনলিপি পাওয়া গিয়েছিল প্রথমে। সেই বিষয়ে অনুসন্ধান করতে করতেই এই জনজাতির আবিষ্কার।’’ মূলত কালো লোহিত মাটির পাত্র, হাড়ের তৈরি বঁড়শি, তামার জালকাঠি উদ্ধার হয়েছে। খনন করে পাওয়া চারকোলের কার্বন-১৪ পরীক্ষা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ওই প্রাচীন জনজাতির বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করেছেন ভূতত্ত্বের অধ্যাপক সুপ্রিয় কুমার দাস। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পূর্ব ভারতে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে প্রত্নজীববিদ্যা, জৈবরসায়ন ও পুরাতত্ত্বের সম্মেলনে এ রকম আধুনিক গবেষণা প্রায় হয়নি বললেই চলে। এর কারণ, উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর জন্য মাটির নিচে প্রাগৈতিহাসিক যুগের সুত্র পুরোপুরি সংরক্ষিত হয় না।’’

আংশিক সংরক্ষিত জৈব আণবিক ও স্টেবল আইসোটোপের সাহায্যে প্রাচীন পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানগত অবস্থাকে খুঁটিয়ে দেখেছেন গবেষকরা। এ ছাড়া মাটিতে মিশে থাকা প্রাচীন ধানের ‘ফাইটোলিথ’ বিশ্লেষণও করা হয়েছে অধ্যাপক সুবীর বেরার তত্ত্বাবধানে। বাস্তুতান্ত্রিক পরিস্থিতি কী ভাবে ওই জনজাতির দৈনন্দিন জীবন প্রভাবিত করত, তা-ও ছিল গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য। প্রায় দুশো বছর বসবাসের পর কোনও অজানা দুর্যোগে এই জনজাতির বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যায়। ‘‘গবেষণায় জানা গিয়েছে হঠাৎ করেই এই অঞ্চলটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়, কিন্তু ভূমিকম্প বা হিংসার কোনও প্রমাণ আমরা পাইনি,’’ জানালেন অধ্যাপক দাস । অধ্যাপক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের খারবেলের হাথিগুম্ফা লিপিতে আমরা এমন ঝড়ের কথা জানতে পারি যা ঝামাপাথরের দেওয়ালও ভেঙে দিয়েছিল। ওড়িশা এখান থেকে খুব দূরে নয়, তাই বসতি পরিত্যাগের কারণ প্রবল ঘূর্ণিঝড় হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।’’

Calcutta University East Midnapore Excavations

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।