Advertisement
E-Paper

স্কুল বন্ধ, চুপিসারে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে বহু কন্যাকে

আগাম খবর এলে পুলিশ, প্রশাসন, চাইল্ড লাইনের উদ্যোগে বিয়ে বন্ধ হচ্ছে। কিন্তু তার বাইরেও বহু মেয়ের বিয়ে হচ্ছে কিশোরীবেলাতেই।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২১ ০৬:০১
Share
Save

গায়ে হলুদ থেকে আশীর্বাদ, সবই হয়ে গিয়েছিল এক ষোড়শীর। পুলিশকে নিয়ে শেষমেশ তার বিয়ে রুখেছে চাইল্ড লাইন। ঘটনাটি মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের।
এই জুনে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়ায় পিতৃহীন এক নাবালিকার বিয়ে রুখেছে প্রশাসন। মেয়েটি সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটাতেও দুই নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করেছে ব্লক প্রশাসন।

দুই ২৪ পরগনা, দিনাজপুর, নদিয়ার মতো কয়েকটি জেলায় নাবালিকার বিয়ের নজির আগেও মিলত। অতিমারি-পরিস্থিতি দেখাচ্ছে, এই প্রবণতা অন্যত্রও কম নয়। পূর্ব বর্ধমান ও দুই মেদিনীপুরের নামও বার বার উঠে আসছে। আগাম খবর এলে পুলিশ, প্রশাসন, চাইল্ড লাইনের উদ্যোগে বিয়ে বন্ধ হচ্ছে। কিন্তু তার বাইরেও বহু মেয়ের বিয়ে হচ্ছে কিশোরীবেলাতেই। রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের বিশেষ উপদেষ্টা সুদেষ্ণা রায় বলেন, ‘‘রোজই কমিশনের বিভিন্ন হেল্পলাইনে দুই-একটি অভিযোগ আসতেই থাকে।’’ তাঁর মত, এই অভিযোগগুলি সামাজিক সচেতনতারও প্রমাণ।

রাজ্য জুড়ে টানা বন্ধ স্কুল। বন্ধ স্কুলের ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’। ফলে, বহু ক্ষেত্রেই নাবালিকা বিয়ের খবর আগাম পৌঁছচ্ছে না প্রশাসনে। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে গাড়ি থেকে নাবালিকা নববধূকে আটক করেছিল পুলিশ। চাইল্ডলাইনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কো-অর্ডিনেটর বিশ্বনাথ সামন্তের অভিজ্ঞতা, ‘‘বিয়ের ধরন পাল্টেছে। তাই আমাদের কাছে সব খবর আসছে না। হঠাৎ করে পাত্রী দেখতে এসে সে দিনই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। মন্দিরে বিয়ে হচ্ছে। এমনকি, তুলসীতলায় পুরোহিত এনে বিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে।’’ মালদহের হবিবপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়ী বলেন, “স্কুল থাকলে সহপাঠীদের মাধ্যমে ছাত্রীদের বিয়ের বিষয়ে জানা যায়। সেটা হচ্ছে না।” ক্যানিং চাইল্ড লাইনের সদস্য পিঙ্কি বেরা আবার বলছেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকায় অনেকেরই ধারণা হয়েছে, পড়াশোনা শেষ করে বিয়ে দিতে গেলে মেয়ের বয়স বেড়ে যাবে। তাই দেরি করছে না অনেক পরিবার।’’

কিশোরী নিজেই সম্পর্কে জড়িয়ে পালিয়ে বিয়ে করছে বহু ক্ষেত্রে। বদ্ধ জীবন থেকে পালাতেও কেউ কেউ বিয়ের ফাঁদে পড়ছে। পূর্ব মেদিনীপুরে গত এক মাসে বিয়ের জন্য প্রেমিকের সঙ্গে পালানো ৩০ জন নাবালিকাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। আবার চুপিচুপি বিয়ে দিয়ে কন্যাশ্রীর টাকা হাতাতে গিয়েও অভিভাবক ধরা পড়েছেন।

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের ধারণা, স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনা বা শিক্ষা সংক্রান্ত অন্য কর্মসূচিতে ছেদ পড়েছে। বেড়েছে স্কুলছুট। পড়াশোনা না করে বাড়িতে বসে থাকা মেয়ের বিয়ে দেওয়া তাই মুখ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে বহু নিম্নবিত্ত পরিবারে। কিন্তু রূপশ্রী প্রকল্পে মেয়েদের বিয়ের জন্য ২৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে শর্ত হল পাত্রীর বয়স ১৮ হতে হবে। ওই টাকা পাওয়ার সুযোগ উপেক্ষা করেও নাবালিকা বিয়ে হচ্ছে কেন? জেলা প্রশাসন এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির অভিজ্ঞতা, দারিদ্রের বিষয়টি সামনে রেখে ভাল পাত্র হাতছাড়া না করার যুক্তিতেই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। ঝাড়গ্রামের সুচেতনা মহিলা সংস্থার সম্পাদক তথা সমাজকর্মী স্বাতী দত্ত দু’দশক ধরে বাল্যবিবাহ ও নারী পাচার রোধে কাজ করছেন। স্বাতীও বলছেন, ‘‘লকডাউনে কাজের অভাব। সংসারে টান পড়ছে। ঘরের কিশোরী মেয়েকে তাই বিয়ে দিচ্ছেন অনেকে।’’
হুগলিতে গত এপ্রিল থেকে জুন তিন মাসে প্রায় একশো নাবালিকার বিয়েতে হস্তক্ষেপ করেছে প্রশাসন। কোথাও বিয়ের তোড়জোড় বন্ধ করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ি থেকে বালিকা বধূকে উদ্ধার করে বাপের বাড়ি বা হোমে পাঠানো হয়েছে। বীরভূমে ১৫ মে থেকে প্রশাসনিক কড়াকড়ি শুরু হওয়ার প্রথম ১৫ দিনেই ৮টি বিয়ে বন্ধ হয়েছে। মুর্শিদাবাদেও নাবালিকা বিয়ের ঢল। ইউনিসেফের তথ্য বলছে, এই জেলায় কম বয়সে বিয়ের সংখ্যা ৩৫.৮ শতাংশ ছিল। গত বছর করোনার শুরুতে লকডাউনে কিছুটা কমলেও এ বছর বিয়ে অনেকটাই বেড়েছে। মুর্শিদাবাদে নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করা গিয়েছে গত ৬ মাসে ২৪৮টি।

করোনা-কালে সচেতনতা প্রচারেও ঘাটতি থাকছে। হেল্পলাইন, ১০৯৮-এ ফোন আসা কমেছে। কখনও ফোন আসছে দেরিতে। মুর্শিদাবাদে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সহকারী অধিকর্তা জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘করোনা-কালে সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। নজরদারিতেও শিথিলতা এসেছে।’’ পূর্ব বর্ধমানের সমাজকল্যাণ আধিকারিক প্রশান্ত রায় অবশ্য বলেন, ‘‘নাবালিকা বিয়ে রোধে ক্রমাগত প্রচার, কর্মশালা হয়েছে।’’ রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের তরফে সচেতনামূলক ওয়েবিনারে নাবালিকা বিবাহকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

Minor marriage Child Marriage

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।