বিশ্বনাথ কুণ্ডু
পুলিশের মুখের উপরেই লালবাজারের দাবি নস্যাৎ করে দিলেন বিশ্বনাথ কুণ্ডু।
লালবাজারের কর্তাদের দাবি, বাড়িতে পড়ে গিয়েই মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন ট্যাংরা-পাগলাডাঙার ওই বাসিন্দা। কিন্তু হুঁশ ফেরার পরে বিশ্বনাথবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি মোটেই বাড়িতে পড়ে গিয়ে চোট পাননি। বামপন্থীদের লালবাজার অভিযানে গিয়েছিলেন এবং সেখানেই পুলিশের লাঠির ঘায়ে মাথায় আঘাত লেগেছিল তাঁর।
বিশ্বনাথবাবু যে পুলিশের প্রশ্নের জবাবেই পুলিশের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন, বৃহস্পতিবার হাসপাতাল সূত্রে তা জানা গিয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছতে এখনও বেশ কয়েক দিন সময় লাগবে বিশ্বনাথের। এই অবস্থায় তাঁকে বেশি কথা বলার অনুমতি দেননি তাঁরা।
গত ১ অক্টোবর বামেদের ডাকা লালবাজার অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন ধাপা এলাকার একটি ওষুধ কারখানার শ্রমিক বিশ্বনাথবাবু। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই রাতেই তাঁকে ই এম বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পুলিশের বক্তব্য ছিল, ওই ব্যক্তি নিজের বাড়িতে প়়ড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন বলে তাঁর পরিবার সূত্রে জেনেছে তারা। সেই রাতেই তাঁর দাদা শম্ভুনাথ কুণ্ডু পুলিশের বক্তব্য নস্যাৎ করে দিয়ে জানান, লালবাজার অভিযানে তাঁর ভাইয়ের মাথায় লাঠি মেরেছিল পুলিশ। সংজ্ঞা হারানোর আগে বিশ্বনাথবাবু নিজেই তাঁকে সে-কথা জানান বলে দাবি করেন দাদা।
জ্ঞান ফেরার পরে বিশ্বনাথ নিজেও সে-কথা বলায় স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে লালবাজার। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে গোয়েন্দা-প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ জানিয়ে দেন, তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিশ্বনাথবাবুর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। জরুরি অস্ত্রোপচার করে তা বার করা হয়েছে। বেশ কিছুটা সময় আলাদা করে রাখতে হয়েছিল তাঁর খুলির একটি অংশ। ঘটনার রাতে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর থেকে টানা বেশ কয়েক দিন ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল বিশ্বনাথবাবুকে। ফলে ঘটনার পর থেকে দিন ছয়েক তাঁর বক্তব্য জানার কোনও উপায় ছিল না। বুধবার তাঁকে ভেন্টিলেশন থেকে বার করা হয়।
বিশ্বনাথবাবুর জ্ঞান ফিরেছে জেনে তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য বুধবার রাতেই বাইপাসের হাসপাতালে যান দুই পুলিশকর্মী। ওই রোগীর সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা হয় তাঁদের। বিশ্বনাথবাবুর দাদা শম্ভুবাবু এ দিন বলেন, ‘‘ভাই জানিয়েছে, পুলিশ প্রথমেই ওকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘আপনার চোট কী ভাবে লাগল? বাড়িতে পড়ে গিয়েছিলেন?’ ভাই তখন স্পষ্ট জানায়, পুলিশের লাঠির আঘাতেই গুরুতর আহত হয়েছিল ও। এর পরে হাসপাতালের ডাক্তারেরাই আপত্তি তোলেন। যত ক্ষণ না আমার ভাই সুস্থ হচ্ছে, তত ক্ষণ ওর সঙ্গে কথা বলতে বারণ করেন তাঁরা।’’
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপাল (ট্রাফিক) সুপ্রতিম সরকার ঘটনার পরের দিন জানান, তাঁরা যোগাযোগ করায় শম্ভুবাবুই তাঁদের বলেছিলেন, ১ তারিখ রাতে তাঁর ভাই বাড়িতে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পান। শম্ভুবাবু অবশ্য সে-রাতেই জানান, ও-কথা বলা দূরের কথা, তাঁর সঙ্গে পুলিশকর্তাদের দেখাই হয়নি। জ্ঞান হারানোর আগে ভাই তাঁকে বলেছেন, পুলিশের লাঠিতেই তাঁর মাথায় আঘাত লেগেছে। জ্ঞান ফেরার পরে বিশ্বনাথবাবু নিজেও সেই কথা বলায় প্রশ্ন উঠছে, পুলিশকর্তা তা হলে সে-দিন ও-কথা বলেছিলেন কী ভাবে?
এই প্রশ্নের কী উত্তর দেয় লালবাজার, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy