বেতন বৃদ্ধির জন্য তাঁরা আন্দোলন করেননি। এই বৃদ্ধি তাঁদের প্রাপ্যই ছিল। সরকারি হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের বেতন বৃদ্ধির কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করার পরে এমন দাবিই করলেন আরজি কর-কাণ্ডে আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা। তাঁদের ‘আক্ষেপ’, যে বিষয়গুলি নিয়ে তাঁরা আন্দোলন করেছিলেন, তা নিয়ে সোমবার চিকিৎসকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সম্মেলনে কোনও কথা হয়নি। উল্টে প্রত্যেক মেডিক্যাল কলেজে বাৎসরিক উৎসব (ফেস্ট)-এর জন্য যে টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার, তা নিয়ে নতুন করে ‘দুর্নীতি’ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তার। তাঁদের আরও প্রশ্ন, সরকারি হাসপাতালে রোগীরা যেখানে উপযুক্ত পরিষেবা পাচ্ছেন না, সেখানে ‘ফেস্ট’-এর জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা কতটা যুক্তিযুক্ত?
সোমবার কলকাতার আলিপুরে ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে চিকিৎসকদের সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে ইন্টার্ন থেকে পোস্ট ডক্টরেট ট্রেনি পর্যন্ত সর্ব স্তরের জুনিয়র ডাক্তারদের বেতন বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেন। এর পরেই আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো, আসফাকুল্লা নাইয়ারা অসন্তোষ প্রকাশ করে জানান, গত ছ’ বছর ধরে মাইনে বাড়েনি তাঁদের। এটা ‘প্রাপ্যই’ ছিল। উত্তরপ্রদেশ ছাড়া প্রায় সব রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তারেরা এ রাজ্যের থেকে বেশি বেতন পান বলে দাবি করেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা আরও বলেন, ‘‘আমরা মাইনের জন্য আন্দোলন করছিলাম না। এটা আমাদের দাবি ছিল না। মাইনে বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষের কাছে প্রতিপন্ন করা হল যে, ডাক্তারেরা মাইনের জন্য আন্দোলন করছিলেন।’’
আরজি করের চিকিৎসক অনিকেত জানিয়েছেন, তাঁদের যে দাবি ছিল, তা নিয়ে কোনও কথা হয়নি সম্মেলনে। হাসপাতালে সিসি ক্যামেরা বসানো, কেন্দ্রীয় ‘রেফারেল’ ব্যবস্থা নিয়ে কোনও কথা হয়নি। ‘হুমকি সংস্কৃতি’, চিকিৎসকদের বদলি নিয়েও কথা হয়নি সম্মেলনে। এর পরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি মৃ্ত্যুর প্রসঙ্গও তুলেছেন অনিকেত। তিনি জানিয়েছেন, কী ভাবে প্রসূতির মৃত্য়ু হল, তা নিয়ে সোমবারের সম্মেলনে কোনও কথাই বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘প্রসূতি মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কী? তিনি আজ বলেননি কেন, কারণ কী? বললে মনে করতাম, তিনি সমব্যথী।’’
আরও পড়ুন:
আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা এ-ও দাবি করেছেন যে, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের বেতন বৃদ্ধি করা হলেই পরিষেবা ভাল হয়ে যাবে, তা নয়। কারণ হিসাবে এক জুনিয়র ডাক্তার বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক অপ্রতুল। এ কথা মুখ্যমন্ত্রী নিজেও জানিয়েছেন। এ ভাবে পরিকাঠামো চালানো সম্ভব নয়।’’ ওই আন্দোলনকারী চিকিৎসক আরও জানিয়েছেন, জেলায় জেলায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল খোলার কথা বলা হয়েছে। সেখানে অর্ধেক জিনিস কাজ করে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ঠিকাকর্মী নিয়োগ হচ্ছে না। স্নাতকোত্তর স্তরের (পোস্ট গ্র্যাজুয়েট) আসন বৃদ্ধি হচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘জুনিয়র ডাক্তারদের বেতন বৃদ্ধি আসলে শুধুই আইওয়াশ।’’ তবে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, হাসপাতালে কাজে যাঁরা নিযুক্ত, তাঁদের সকলেই বেতন বৃদ্ধি করা উচিত। এটা তাঁদের সকলেরই ‘প্রাপ্য’।

জুনিয়র ডাক্তারদের কত বেতন বৃদ্ধি হল? গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
রাজ্যের সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজে বাৎসরিক উৎসব (ফেস্ট) করার জন্য ২ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের আশঙ্কা, এর ফলে নতুন করে ‘দুর্নীতি’ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁরা জানান, আগেও মেডিক্যাল কলেজে ‘ফেস্ট’ হত। ক্লাবে খয়রাতি দেওয়ার মতো এখন তাতে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হল। ওই চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘এত দিন শাসকদলের কেউ কেউ লুকিয়ে ফেস্টের টাকা নয়ছয় করতেন। এ বার তা প্রকাশ্যে চলবে। দুর্নীতি হবে অবশ্যই।’’ জুনিয়র ডাক্তারদের প্রশ্ন, রোগী পরিষেবা যেখানে টাকার জন্য আটকে রয়েছে, সেখানে এই অনুদান কেন? অনিকেতের কথায়, ‘‘সরকারি হাসপাতালগুলিতে যেখানে রোগীদের স্যালাইন বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে, যেখানে রোগীরা পরিষেবা পাচ্ছেন না, সেখানে ২ কোটি টাকা ফেস্টের জন্য অনুদান! এটা কি দ্বিচারিতা নয়?’’