Advertisement
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
NEET

NEET: জেঠুর স্টেথো গলায় ঝুলিয়ে ঘুরতেন ‘ফার্স্ট বয়’

স্বজনেরা বলছেন, নিজের অধ্যবসায় আর যৌথ পরিবারের স্নেহের ফসল তাঁর সাফল্য। জিটি রোডের পাশে তিন তলা বাড়িতে তাই খুশির জোয়ার।

বাবা-মায়ের সঙ্গে অমর্ত্য।

বাবা-মায়ের সঙ্গে অমর্ত্য। ছবি: তাপস ঘোষ।

প্রকাশ পাল
শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৩৮
Share: Save:

জেঠু ডাক্তার। তাঁর খারাপ হয়ে যাওয়া স্টেথোস্কোপ গলায় ঝুলিয়ে সারাক্ষণ ঘরময় ঘুরে বেড়াত ছেলেটা। কচি হাতে জেঠিমাকে ‘প্রেসক্রিপশন’ লিখে দিত। সে দিনের অমর্ত্য সেনগুপ্ত নামে সেই শিশু আজ যুবক। কাঁচি হাতে অপারেশন থিয়েটারে মানুষের রোগ সারান। চিকিৎসকদের স্নাতকোত্তরের সর্বভারতীয় দু’টি প্রবেশিকা পরীক্ষাতেই প্রথম হয়ে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন। স্বজনেরা বলছেন, নিজের অধ্যবসায় আর যৌথ পরিবারের স্নেহের ফসল তাঁর সাফল্য। হুগলির কোদালিয়া গ্রামে জিটি রোডের পাশে তিন তলা বাড়িতে তাই খুশির জোয়ার।

চব্বিশ বছরের অমর্ত্যের পড়াশোনার রেকর্ড বরাবরই ঈর্ষণীয়। ব্যান্ডেলের ডন বসকো স্কুলের পরীক্ষায় বরাবর প্রথম। ২০১৫ সালে আইসিএসই-তে স্কুলের সেরা। স্কুলের পাঠ চুকিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস-এ ভর্তি হন। সম্প্রতি এখানে ইন্টার্নশিপ শেষ করেছেন। এখানেও প্রথম থেকে পঞ্চম বর্ষ— সবেতেই প্রথম। পেয়েছেন স্বর্ণপদক।

এমবিবিএস পাশের পরে স্নাতকোত্তরে দিল্লির এমস, পুদুচেরির জিপমার মেডিক্যাল কলেজ এবং চণ্ডীগড়ের পিজিআই-তে ভর্তির জন্য আইএনআই (ইনস্টিটিউট অব ন্যাশনাল ইম্পর্ট্যান্স-কম্বাইন্ড এন্ট্রান্স টেস্ট) প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসতে হয়। অন্যান্য কলেজে ভর্তি হতে ‘নিট-পিজি’ দিতে হয়। গত জুলাইতে আইএনআই পরীক্ষায় ৮০ হাজার চিকিৎসকের মধ্যে সেরা হন অমর্ত্য। দিল্লি এমস-এ সার্জারিতে (এমএস) ভর্তি হন।

বাড়ির লোকেরা বলেছিলেন, এর পরে ‘নিট-পিজি’-তে বসার দরকার নেই। অমর্ত্য শোনেননি। মঙ্গলবার পরীক্ষার ফল বেরোলে দেখা যায়, পৌনে দু’লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে তিনিই পয়লা নম্বরে। তাঁর ফল চিকিৎসক মহলে সাড়া ফেলেছে।

ছোট থেকেই তিনি পড়াশোনা-অন্ত প্রাণ। জেঠিমা কৃষ্ণা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সেলুনে চুল কাটতে যাবে, বই নিয়ে। টোটো করে কোথাও যাচ্ছে, বই হাতে। তবে, অমর্ত্যর বড় হওয়ার পিছনে ওর মায়ের ভূমিকাও প্রচুর। ছেলের পড়ার ক্ষতি হবে ভেবে কোথাও বেড়াতে যেতেন না। পারিবারিক অনুষ্ঠানে গেলেও দিনের দিন ফিরে আসতেন।’’ হাসিখুশি, শান্ত ছেলের চারিত্রিক কাঠিন্য বোঝাতে জেঠিমার সংযোজন, ‘‘২০১৫ সালে দিল্লি এমস-এ ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পায়নি অমর্ত্য। ওই প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে স্বগতোক্তি করে এসেছিল, ‘আমি ফিরে আসব। তোমরাই ডাকবে।’ যা বলেছিল, করে ছাড়ল।’’

অধ্যবসায়ের নমুনা আরও আছে। কলকাতায় ‘নিট-পিজি’ পরীক্ষা দিতে দিল্লি এমসে ডিউটি সেরে আগের রাত ১টায় বাড়ি পৌঁছন অমর্ত্য। পরের দিন সকাল ৬টায় পরীক্ষা দিতে বের হন। সন্ধ্যায় ফেরেন। গভীর রাতে দিল্লি উড়ে যান কাজে যোগ দিতে। অমর্ত্যর গানের গলা চমৎকার। দুর্দান্ত রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে পারেন। স্কুল-কলেজে ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছেন। টিভিতে ফুটবল দেখতে ভালবাসেন। চেলসির অন্ধ ভক্ত। তবে, পড়ার চাপে গান ছেড়েছেন। খেলা দেখাও সে ভাবে হয় না।

মা মধুমিতা আর আইনজীবী বাবা সুশোভন অধিকারী ছেলের কাছেই দিল্লিতে রয়েছেন। ভিডিয়ো-কলে মধুমিতার বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, ‘‘আমাদের যৌথ পরিবারই ছেলেকে অনেক এগিয়ে দিয়েছে। ছোট্ট থেকে দিদি (কৃষ্ণাদেবী) গড়েপিঠে তুলেছেন। দাদাকে (অমর্ত্যের জ্যাঠামশাই চিকিৎসক জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত) দেখেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। বাড়িই ওর কাছে সব।’’ সঙ্গে তিনি জুড়ে দেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে এত ভাল পড়ার পরিবেশ ছেলে পেয়েছে, ভাবা যায় না। কলকাতা মেডিক্যালে অনেক শিখেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অশেষ কৃতজ্ঞতা।’’ বৃহস্পতিবার দিনভর অমর্ত্য ব্যস্ত ছিলেন হাসপাতালের ডিউটিতে।

ভাইয়ের সাফল্যে খুশি ধরছে না কৃষ্ণা-জ্যোতির্ময়ের ছেলে অর্ণবেরও। পেশায় আইনজীবী অর্ণবের কথায়, ‘‘ক্লাস থ্রি-ফোর পর্যন্ত ভাইকে কোলে করে স্কুল থেকে এনেছি। ছেলেটা আজ কত্ত বড় হয়েছে। ভাই যত বড় হবে, মানুষের ভাল হবে। মানুষ চিকিৎসা পাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

NEET
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy