বনির সঙ্গে অনেক দিনের সম্পর্ক কৌশানীর। ছবি: কৌশানী মুখোপাধ্যায়ের ফেসবুক থেকে।
কুন্তল ঘোষের অনুষ্ঠানে গিয়েছেন তিনিও। বন্ধু বনি সেনগুপ্তের মাধ্যমেই কুন্তলের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়েছিল। বৃহস্পতিবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) যখন সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে টলিউড অভিনেতা বনিকে জেরা করছে, তখন আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন বনির বান্ধবী অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার ইডি তলব করেছিল টলিউড অভিনেতা বনিকে। একদিন আগে, বৃহস্পতিবারেই ইডির দফতরে হাজিরা দিতে চলে যান অভিনেতা। ইডি সূত্রের বক্তব্য, দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তলের ব্যাঙ্কের নথিতে বনির নাম পাওয়া গিয়েছে। তার পরেই তাঁকে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ডেকে পাঠিয়েছে ইডি।
এই বিষয়টি নিয়ে বনির বান্ধবী কৌশানীর বক্তব্য কী? আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নে অভিনেত্রী জানালেন, তিনিও কুন্তল ঘোষের অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। বনির মাধ্যমেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল কৌশানীর।
কৌশানীর কথায়, ‘‘আমি অভিনেত্রী, ও অভিনেতা। ও ছবি করবে কি ইভেন্ট করবে কি মিউজিক ভিডিয়ো করবে, সেটা ওর বিষয়। আর কেউ এসে যদি প্রস্তাব দেয় যে, আমার সঙ্গে কাজ করো, আমি এই টাকা দেব, তাতে তো কোনও অন্যায় নেই! এ ক্ষেত্রে তো কেউ আঙুল তুলতে পারে না! কারণ, এটাই আমাদের পেশা। ওর সঙ্গে কুন্তল ঘোষের চেনাশোনা ছিল। কাজের সম্পর্ক ভাল ছিল। কাজ করেছে, এটাই তো। কিন্তু উনি (কুন্তল) দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বা কী খারাপ কাজ করেছেন, সেটা তো কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারে না।’’
এর পরেই কৌশানী জানান, তিনিও কুন্তলের সঙ্গে কাজ করেছেন। কৌশানী বলেন, ‘‘আমরা আমাদের কাজ করেছি। বেরিয়ে এসেছি। আমি একটা-দু’টো ইভেন্টে গিয়ে থাকতে পারি ওঁর এলাকায়। আমি একশোটা লোকের ইভেন্ট করি। সবচেয়ে বেশি ইভেন্ট এবং শো করি। প্রচুর মাচা করি। আমি যদি কারও মাচায় গিয়ে থাকি, তা হলে তার সঙ্গে এই ঘটনা মেলানোর কোনও যৌক্তিকতা। কোনও লেনদেনও থাকতে পারে না।’’
কুন্তলের অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে কৌশানী বলেন, ‘‘বনির সঙ্গে পরিচয় সূত্রেই আমার সঙ্গে (কুন্তলের) আলাপ। আমার সঙ্গে ওঁর কোনও ব্যক্তিগত আলাপ ছিল না। উনি আমাকে একটা ইভেন্টের জন্য বলেছিলেন। আমি একটা ইভেন্ট ওঁর জন্য করে দিয়েছিলাম। উনি আমাকে টাকা দিয়েছিলেন। সেখানেই সব শেষ।’’ কুন্তল যদি তাঁর নামও বলেন? কৌশানীর উত্তর, ‘‘আমার নাম বলবেন কেন? আমি তো কিছু নিইনি! আমি কাজ করেছি, প্রাপ্য টাকা নিয়েছি। আমার সঙ্গে কোনও চুক্তি হয়নি। কোনও মোটা অঙ্কের টাকা আমার কাছে আসেনি। আমার নাম কেনই বা বলবেন? আমার দিকে কেউই আঙুল তুলতে পারবেন না।’’
একই সঙ্গে বনির হয়ে সাফাই দিয়ে কৌশানী বলেন, ‘‘কথা হয়েছিল টাকা নিয়ে ছবি করার। উনি (কুন্তল) সেটা যে করে উঠতে পারেননি, সেটা ওঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্রাথমিক ভাবে চুক্তির জন্য টাকার কথা হয়েছিল। উনি টাকা দিতে পারেননি। তার বদলে বনির গাড়ি এসেছে। এর সঙ্গে দুর্নীতির কোনও যোগ নেই। যা যা নথি চাওয়া হবে, বনির তরফে সব দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।’’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার ইডির প্রথম দফা জিজ্ঞাসাবাদের পরে সংবাদমাধ্যমকে বনি বলেন, ‘‘উনি (কুন্তল) আমাকে একবারই (টাকা) দিয়েছিলেন। পাঁচ বছর আগে একটা গাড়ি কিনেছিলাম। উনি আমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন।’’ কত টাকা দিয়েছিলেন কুন্তল? সরাসরি সে কথার উত্তর দেননি বনি। তবে সংবাদমাধ্যম তাঁকে ৩৫- ৪০ লক্ষ টাকা বলায় তিনি বলেন, ‘‘ওই রকমই।’’ একই সঙ্গে বনি বলেন, ‘‘ডিসকভারি (গাড়ির ব্র্যান্ড) কিনেছিলাম। উনি নগদে টাকাটা দিতে চেয়েছিলেন। আমিই বলেছিলাম, ব্যাঙ্কে দিন। আমার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকায় উনি তা-ই করেছিলেন। তবে এখন ওই গাড়ি আমার কাছে নেই। পাঁচ বছর হয়ে যাওয়ায় আমি গাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছি।’’
বনি-কৌশানীর সম্পর্ক অনেক দিনের। দু’জনের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য এলেও দূরত্ব আসেনি। গত বিধানসভা নির্বাচনে কৌশানী কৃষ্ণনগর উত্তর আসনে বিজেপি প্রার্থী মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। আর ভোটের আগে আগে বনি যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। যদিও ভোটে লড়ার টিকিট পাননি। পরে তিনি বিজেপি ছেড়েও দেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে কৌশানী বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আমরা প্রত্যেকেই ব্যক্তি মানুষ। আমি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সময় ওর অনুমতি নিইনি। ও-ও আমার অনুমতি নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেয়নি।’’
সম্প্রতি বনি-কৌশানী একটি প্রযোজনা সংস্থাও খুলেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতেই সেই সংস্থার প্রযোজিত ‘ডাল বাটি চুরমা’ নামে একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেখানেও তাঁরা দু’জনে অভিনয় করেছেন। ‘পারব না আমি ছাড়তে তোকে’ ছবিতে প্রথম একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন বনি-কৌশানী। এখন বনিকে ইডির জেরা করলেও প্রেমিককে কোনও ভাবেই ছাড়তে নারাজ অভিনেত্রী বান্ধবী কৌশানী। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি জানালেন, যে বিতর্কই আসুক না কেন, বনিকে তিনি ছাড়তে পারবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আমার আর বনির মাঝখানে ইডি কেন, কুন্তল ঘোষ কেন, বিজেপি কেন— কেউই আসতে পারবে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy