Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

দিনে দশ বার করে ধর্ষণ, দিল্লির হাসপাতালে ধুঁকছে ডায়মন্ড হারবারের মেয়ে

গাজিয়াবাদের বেসরকারি হাসপাতালে যখন আয়েশাকে (নাম পরিবর্তিত) ভর্তি করানো হল, তখন সে রক্তাক্ত, বিধ্বস্ত। বাঁচবে কি না সন্দেহ ছিল চিকিৎসকদের। তাই সর্বাগ্রে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জরুরি ভিত্তিতে। প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে কিছুক্ষণের মধ্যেই আয়েশার পরিজনদের খুঁজতে শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, তাদের খোঁজ আর মেলেনি।

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৮:০৯
Share: Save:

গাজিয়াবাদের বেসরকারি হাসপাতালে যখন আয়েশাকে (নাম পরিবর্তিত) ভর্তি করানো হল, তখন সে রক্তাক্ত, বিধ্বস্ত। বাঁচবে কি না সন্দেহ ছিল চিকিৎসকদের। তাই সর্বাগ্রে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জরুরি ভিত্তিতে।

প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে কিছুক্ষণের মধ্যেই আয়েশার পরিজনদের খুঁজতে শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, তাদের খোঁজ আর মেলেনি। খানিক ক্ষণের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায়, হাসপাতালে ভর্তি করতে আসা লোকগুলো কেউ আয়েশার পরিজন ছিল না। অবস্থা বেগতিক বুঝে কোনওক্রমে আয়েশাকে হাসপাতালে ঢুকিয়ে দিয়েই তারা গা ঢাকা দিয়েছে। আয়েশা আসলে গণধর্ষিতা হয়েছে। তার উপর যে রকম নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে, তাতে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে দেওয়া গেলেও পরবর্তী চিকিৎসা চালানো ওই বেসরকারি হাসাপাতালটিতে আর সম্ভব ছিল না। তাই গত সোমবার দিল্লির গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে আয়েশাকে স্থানান্তরিত করা হয়। আয়েশার শরীরে তখন খুব কষ্ট। হাসপাতালের বেডে বসতে পর্যন্ত পারছে না সে। যৌনাঙ্গে এবং মুখে গভীর ক্ষত। রোজই প্রচুর রক্তপাত হচ্ছে। গত কয়েক দিনে দশ বোতল রক্ত দিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা আয়ত্তে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেতে সময় লাগবে, মনে করছেন চিকিৎসকরা।

কথা বলার মতো অবস্থায় ফেরার পর দিল্লি পুলিশ আর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে মুখ খুলেছে নির্যাতিতা কিশোরী। হাসপাতালের বেডে শুয়েই। জানা গিয়েছে, এক দিন নয়, দিনের পর দিন গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে তাকে। কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, আয়েশার বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের ডায়মন্ড হারবার এলাকায়। বছর খানেক আগে এক দিন স্কুল থেকে ফেরার পথে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। সেই থেকে বহু পুরুষ ধর্ষণ করেছে। য়খন ইচ্ছা ধর্ষণ করেছে আয়েশাকে।

ঘটনায় যুক্ত থাকায় অভিযোগে গাজিয়াবাদ থেকে পুলিশ এক জনকে গ্রেফতার করেছে। দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেন আয়েশার সঙ্গে। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘জেরায় ধৃত ব্যক্তি জানিয়েছে ধর্ষকদের মধ্যে এক জন এইচআইভি পজিটিভ ছিল। আমরা তাই কিশোরীর এইচআইভি পরীক্ষা করাচ্ছি।’’

আরও পড়ুন:

দিল্লিতে বিক্রি হয়ে যাওয়া বাংলার পিঙ্কি ধরিয়ে দিল দেহব্যবসা চক্র

কিশোরীর বয়ানে আবার উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় একটি নারীপাচার চক্রের কথা। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দেওয়া একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দিল্লি এবং সংলগ্ল এলাকা থেকে মোট ৪৫ জন নাবালিকাকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত বছরে এই সংখ্যাটি ছিল ৫০। এদের অপহরণ করে বা কাজ দেওয়ার নাম করে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয় বলে ওই সংস্থা সূত্রে খবর। খবরের সত্যতা মেনে নিয়েছে এ রাজ্যের সিআইডি।

গাজিয়াবাদ থানার পুলিশ এবং ওই বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে অভিযোগে ওই কিশোরী জানিয়েছেন, বছর খানেক আগে তাঁকে বাংলা থেকে অপহরণ করা হয়। শুধু তাই নয়। গত এক বছর ধরে নিয়মিত দশ জন মিলে তাকে ধর্ষণ করত। দিল্লি মহিলা কমিশন ইতিমধ্যেই মেয়েটির দায়িত্ব নিয়ে তাঁকে সাধারণ শয্যা থেকে কেবিনে স্থানান্তর করিয়েছে।

এ দিকে দিল্লির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে ঋষিকান্ত জানিয়েছেন, মাস ছয়েক আগে পশ্চিমবঙ্গ থেকে একটি অভিযোগ তাঁদের কাছে জমা পড়ে। অভিযোগের ভিত্তিতে খোঁজ খবর করতে গিয়ে তাঁরা জানতে পারে, বছর খানেক আগে ডায়মন্ড হারবার থানা এলাকা থেকে স্কুল ফেরত এক কিশোরী নিখোঁজ হয়েছিল। স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও কোনও খোঁজ মেলেনি। পরে এ বছরের মার্চ মাস নাগাদ কিশোরীর পরিবার একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন পায়। পরিবারের লোকজনের দাবি, সেটি তাঁদের মেয়ের ফোন ছিল এবং মেয়ে জানায় সে হিমাচলপ্রদেশে রয়েছে। পুলিশে খবর দিয়ে তাঁকে যেন উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হয়। ঋষিকান্ত আরও জানান, দিল্লি পুলিশের সাহায্য নিয়ে তাঁরা মেয়েটির খোঁজ শুরু করেন। এর মধ্যেই গত সোমবার গাজিয়াবাদ থানার পুলিশ বছর আঠারোর এই অসুস্থ কিশোরীর খোঁজ দেয়। হাসপাতালে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন এ-ই হল ডায়মন্ড হারবারের সেই অপহৃত কিশোরী, যার পরিবার তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল। ইতিমধ্যেই ডায়মন্ড হারবার থানার তদন্তকারী অফিসার এবং কিশোরীর বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE