Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Ranaghat Dakshin by-election

৩৯ দিনের মাথাতেই খেলা ঘোরালেন ‘রিং মাস্টার’, শঙ্করের নেতৃত্বে রানাঘাট দক্ষিণ ছিনিয়ে নিল তৃণমূল

শঙ্কর সিংহের অনুগামীরা ভোটের আগে বলেছিলেন, তাঁদের ‘দাদা’ এই উপনির্বাচনে রিং মাস্টারের ভূমিকায় নেমেছেন। তিনিই সাজিয়েছিলেন প্রচারের যাবতীয় পরিকল্পনা।

Ranaghat Dakshin by-election: Veteran leader Shankar Singh behind TMC\\\\\\\'s win

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪ ১৪:৪৩
Share: Save:

পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। আবার তা প্রমাণ হল। রানাঘাট দক্ষিণ তৃণমূলকে জিতিয়ে রাজনীতির ময়দানে সেটা প্রমাণ করলেন প্রবীণ শঙ্কর সিংহ।

রাজ্যের চারটি উপনির্বাচনের মধ্যে রানাঘাট দক্ষিণ যে অন্যতম ‘কঠিন’ ছিল, তা ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করেছিলেন তৃণমূলের প্রথম সারির অনেক নেতা। সেই কঠিন লড়াইয়ে সেনাপতির দায়িত্বে ছিলেন বহু যুদ্ধের নায়ক শঙ্কর। দেড় মাসের মধ্যে ক্ষত পূরণ করে খেলা ঘুরিয়ে দিলেন তিনি। তৃণমূল জিতল রানাঘাট দক্ষিণ। আবার বিধায়ক হচ্ছেন বটে মুকুটমণি অধিকারী। তবে তৃণমূলের নেতারা একবাক্যে মানছেন, দলের মাথায় জয়ের মুকুটের মণিটি পরিয়ে দিয়েছেন শঙ্করই।

ভোটের আগে শঙ্কর জানিয়েছিলেন, এটা দলের লড়াই। তিনি কেবল দলের সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শঙ্কর সে কথা বললেও গোটা তৃণমূল জানত, স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে রানাঘাট দক্ষিণ পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। শঙ্কর অবশ্য শনিবার জয়ের পর বলেছেন, ‘‘যে কোনও খেলায় টিম স্পিরিটটাই আসল। সেটা ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলাম। সবাই মিলে লড়াই করে সিটটা (আসনটা) বার করতে পেরেছি।’’ অনেকের মতে, পরোক্ষে শঙ্কর বোঝাতে চেয়েছেন, গত লোকসভা থেকেই রানাঘাট-সহ তৎসংলগ্ন অঞ্চলে দলের মধ্যে ‘টিম স্পিরিট’ ছিল না। যে কারণে বিজেপি হু-হু করে বেড়েছে। জিতেওছে।

শঙ্কর-অনুগামীরা ভোটের আগে বলেছিলেন, তাঁদের ‘দাদা’ এই উপনির্বাচনে রিং মাস্টারের ভূমিকায় নেমেছেন। তিনিই সাজিয়েছিলেন প্রচারের যাবতীয় পরিকল্পনা। তৃণমূলের অনেকের মতে, প্রার্থী হিসেবে মুকুটমণি যে সকলের খুব পছন্দের ছিলেন, এমন নয়। কিন্তু দলগত বিষয়টিকে শঙ্কর যে ভাবে সামনে নিয়ে এসেছিলেন, তাতেই খেলা ঘুরে গিয়েছে। ২০২১ সালে বিধানসভায় বিজেপির হয়ে জেতা মুকুটমণিই উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাটে তৃণমূল প্রার্থী হয়েই পরাস্ত হয়েছিলেন তিনি। লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার কারণেই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। সেই কারণেই উপনির্বাচন অনিবার্য হয়ে পড়ে রানাঘাট দক্ষিণে। সেই উপনির্বাচনেও মুকুটমণিকেই টিকিট দিয়েছিল তৃণমূল। অর্থাৎ, কয়েক মাসের ব্যবধানে মুকুটমণি আবার বিধায়কই হলেন। শুধু প্রতীকের ফুল বদলে গেল তাঁর। পদ্ম থেকে ঘাসফুল।

বিজেপি অবশ্য এই ফলাফলকে বলেছে ‘প্রহসন’। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘রানাঘাট দক্ষিণ, বাগদা, রায়গঞ্জে বিজেপি হারতে পারে না, পারে না, পারে না। এই ফল মানুষের প্রকৃত রায়ের প্রতিফলন নয়। এখন আবির খেলছেন খেলে নিন। এক দিন আসবে, যে দিন গণ অবরোধের মুখে পড়তে হবে তৃণমূলকে।’’

গত ৪ জুন লোকসভা ভোটের ফলঘোষণার পরে দেখা গিয়েছিল, রানাঘাট লোকসভা শুধু বিজেপি জেতেনি, রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভায় তারা জোড়াফুল শিবিরকে পিছিয়ে দিয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার ভোটে। ৩৯ দিনের মাথায় উপনির্বাচনের ফল প্রকাশ হতে দেখা গেল, সেই রানাঘাট দক্ষিণেই মুকুটমণি জিতলেন ৩৭ হাজার ৬ ভোটে। এ কথা ঠিক যে, ভোটের দিন রানাঘাট দক্ষিণে বেশ কিছু অশান্তির ঘটনা ঘটেছিল। ভোটের আগের রাতে গুলি চলারও খবর মিলেছিল। যা নিয়ে শঙ্কর-অনুগামীদের বক্তব্য, ভোট একটা ৯ ঘণ্টার খেলা। ভোটের দিন ওই ৯ ঘন্টায় যারা সেই খেলাটা খেলতে পারে, তারাই জেতে। যুগে যুগে এটাই সত্য। তৃণমূলের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘রানাঘাট বা নদিয়ার একটা বিস্তীর্ণ অংশে দলের অন্যতম সমস্যা হল, ভোটটা করানোর কেউ নেই। শঙ্করদা আমাদের দলে আসার পরেও সে ভাবে তাঁকে ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু দায়িত্ব পেলে যে তিনি এই বয়সেও খেলা ঘোরাতে পারেন, তা প্রমাণ করে দিলেন।’’

ভোটের আগে থেকেই তৃণমূল-সহ নদিয়ার রাজনৈতিক মহলে আলোচনা ছিল, রানাঘাট দক্ষিণ পুনরুদ্ধার করতে পারলে শঙ্করেরও ‘পুনরুত্থান’ হবে। রাজনীতিতে ‘প্রাসঙ্গিকতা’ও ফিরবে প্রবীণ এই নেতার। শঙ্কর অবশ্য প্রকাশ্যে সে সব নিয়ে ভাবলেশহীন। তবে গোটা নদিয়ার তৃণমূল তাকিয়ে রয়েছে, শঙ্করের মাথায় এ বার কোনও ‘মুকুট’ ওঠে কি না সে দিকে। কারণ, তৃণমূলে ২১ জুলাইয়ের আগে-পরে দলে সাংগঠনিক রদবদল নিয়ে জল্পনা রয়েছে। সেই পর্বে শঙ্করের ‘সিংহ’ হয়ে ওঠার আশায় তাঁর অনুগামীরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy