রবিবার শিলিগুড়ির গোসাঁইপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিনোদ দাস।
রামপুরহাট তদন্তে সিবিআই-কে অসহযোগিতার বার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন দেননি। তবে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে রবিবারও তিনি অনড় ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি এখনও বলছি, রামপুরহাটের ঘটনায় বড় ষড়যন্ত্র আছে। আমরা চাই এর বিচার হোক।’’ এবং একই সঙ্গে তিনি সতর্ক থাকতে বলেন সাধারণ মানুষকেও। শিলিগুড়ির গোঁসাইপুরের সভা থেকে রবিবার মমতা বলেন, ‘‘এলাকায় গোলমাল বা অশান্তি হতে পারে মনে হলে তা স্থানীয় থানাকে জানান। থানা ব্যবস্থা না নিলে অফিসারের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা যদি ক্ষতিকারক এই ধরনের ঘটনা ধরিয়ে দিতে পারেন, এই রকম খবর থাকলে সরাসরি আমার কাছে পাঠাতে পারেন, তা হলে রাজ্য সরকার পুরস্কৃত করবে।’’
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী যেমন মিসড্ কল দিয়ে দুর্নীতির কথা জানানোর দাওয়াই দিয়েছেন এ দিন, অন্য দিকে নাশকতামূলক ষড়যন্ত্র নিয়েও সাধারণ মানুষকে সতর্ক হতে বলেছেন। কারণ, তিনি মনে করেন, তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে। কী ভাবে? মমতা সাংবাদমাধ্যমকেও দুষে বলেন, ‘‘রিপোর্টাররা সাধু নয়। পচন সব জায়গাতেই। একটা ঘটনা নিয়ে চিৎকার করছেন। দিল্লি থেকে সংবাদমাধ্যম চলে আসছে। মানে নিয়ে আসা হয়েছে। এটা দেখাতে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার খারাপ। কেন না বিজেপির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমাত্র লড়তে পারে।’’
তিনি বিরোধীদের দিকেও আঙুল তুলেছেন। বলেছেন, ‘‘আমরা চাইছি বীরভূমের ডেউচা পাঁচামিতে ১ লক্ষ ছেলেমেয়ের চাকরি হোক। আপনারা রামপুরহাট করছেন যাতে ডেউচা-টা না হয়, ছেলেমেয়েরা চাকরি না পায়।’’
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, আজ মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। তাঁরা বিরোধী থাকার সময় তা করেননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। জানান, কখনও দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে আগুন লাগাননি। বিরোধীদের দিকে আঙুল তুলে তিনি বলেন, ‘‘তারা চায় না কর্মসংস্থান হোক।’’ নাশকতার প্রসঙ্গে মমতা তাঁর রেলমন্ত্রী থাকাকালীন কিছু প্রসঙ্গেরও উল্লেখ করেন। বলেন, ‘‘সেই সময়ে রেললাইন কেটে রেখে দেওয়া হত।’’
তবে দোষ যে পুলিশেরও রয়েছে, সেটা মেনে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যাঘাত হবে বুঝে আগে থেকে প্রস্তুত থাকা উচিত ছিল পুলিশের।’’ দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েও তিনি আবার এ-ও বলেন, ‘‘দুর্গাপুজো, খেলা, মেলা হলে রাজ্যের পুলিশ পাহারা দেবে। কোভিড হলে তারা লড়াই করবে। আর একটা ঘটনা ঘটলে, এক জনের দোষ হলে পুরো পুলিশকে খারাপ বলা হচ্ছে। দিল্লির পুলিশ আপনাদের পাহারা দেয়, না রাজ্যের পুলিশ পাহারা দেয়?’’
সিবিআই তদন্ত নিয়ে আগের দিনের মতো এ দিনও তিনি সহযোগিতার কথাই প্রথমে বলেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘সিবিআই করেছেন, ভাল করেছেন। সিবিআই কাজটা করুক, আমাদের সহযোগিতা থাকবে। কিন্তু এই কাজটা না করে যদি অন্য কাজ করতে যান বিজেপি-র কথায়, সিপিএম-কংগ্রেসের কথায়, তা হলে মনে রাখবেন, রাস্তায় আন্দোলনে আমরাই আবার নামব।’’ হাথরাস, উন্নাও, লখিমপুর খেরির প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেছেন, ‘‘ওই সব ক্ষেত্রে কেন সিবিআই হয় না?’’ তার পরে নোবেল চুরি, নন্দীগ্রাম, নেতাই বা তাপসী মালিকের হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, সিবিআই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাফল্য পায়নি। এ দিন এই সভার পরে মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিঙে চলে যান।
বিরোধীরা অবশ্য পাল্টা দাবি করেছেন, এই চক্রান্তের শিকড় তৃণমূলের মধ্যেই ঢুকে রয়েছে। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আসলে চক্রান্তটা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ চক্রান্ত। তৃণমূল এবং পুলিশের সঙ্ঘবদ্ধ চক্রান্তে হত্যালীলা ঘটেছে।” তিনি আরও বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে রাষ্ট্রকে অস্বীকার করা হবে।” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কটাক্ষ, ‘‘বিরোধীরা ষড়যন্ত্র করল, অথচ পুলিশকে যেতে বারণ করলেন তৃণমূলেরই নেতা!’’ ডেউচা-পাঁচামিতে উচ্ছেদ হয়ে সব হারানো মানুষ ‘লুটেরাদের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন— এ কথা জানিয়ে সেলিমের অভিযোগ, নিজের দায় আড়াল করতে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদীদের গায়ে কালি লাগানোর চেষ্টা করছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও বলেন, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘শিল্প করতে চাইলে ঠিক পদ্ধতিতে করুন। মানুষ খুন করে শিল্প হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy