জেলা পুলিশের দাবি, বগটুই গ্রামের পরীক্ষার্থীরা দেড় কিলোমিটার দূরে রামপুরহাটের স্কুলে পড়ে। এখন পুরো রাস্তা জুড়েই পুলিশের প্রহরা রয়েছে। রাস্তার উপরে কয়েকটি জায়গায় পুলিশ-পিকেট রয়েছে। ফলে, পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা নেই।
প্রতীকী ছবি।
গ্রামে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তার উপরে এত দিন লাগাতার পুলিশের তল্লাশি, এ বার সিবিআইয়ের তদন্ত শুরু হওয়ায় বগটুই গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক, একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের মনের উপর ‘চাপ’ তৈরি হচ্ছে বলে অভিভাবকেরা জানিয়েছেন। এ গ্রামের অধিকাংশ ছেলেই কোনও না কোনও কাজে যুক্ত বা ভিন্ রাজ্যে। পরীক্ষার্থীদের বেশির ভাগই ছাত্রী। তাঁরা ওই ‘আতঙ্ক’ আর ‘চাপ’ কাটিয়ে কী ভাবে পরীক্ষা দেবে, তা নিয়ে অভিভাবকেরা চিন্তিত।
জেলাশাসক (বীরভূম) বিধান রায় শনিবার বলেন, “আজই এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করা হবে। আমরা গুরুত্ব দিয়েই বিষয়টি দেখছি।” জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) চন্দ্রশেখর জাউলিয়া জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করা হবে।
বগটুই গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের একাংশ গ্রামের বাইরেই ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পরে শুক্রবার থেকে তারা গ্রামে ফিরতে শুরু করেছে। তাদেরই এক জন রুপসুনা খাতুন এ দিন বলল, “ঘটনার পরেই ভয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। শুক্রবার ফিরে এসেছি। পরীক্ষার আগে পড়ায় খুব ক্ষতি হয়ে গেল। বাড়ি ফিরে এসেও আতঙ্কে পড়ায় মন বসছে না।” আর এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শিখা খাতুন গ্রামের পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে বলে, “গত ক’দিনে যা যা ঘটেছে, মনের উপরে চাপ তৈরি হচ্ছে। ভয় লাগছে। কী ভাবে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাব বুঝতেই পারছি না।” ওই গ্রামের বৃদ্ধা ইয়াসমিনা বিবি বলেন, “নাতনি আমার কাছে থাকে। এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। এই ভয়ের পরিবেশে কী ভাবে পরীক্ষা দিতে স্কুল পাঠাব, ভেবে পাচ্ছি না।”
এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকেরা ঠিক করেছেন, তাঁরা এক জোট হয়ে মেয়েদেরকে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে আবার বাড়ি ফিরিয়ে আনবেন। রুবিনা বিবি, মানোকারা বিবি, ফুলটুসি বিবি, চাঁদকলি বিবিদের দাবি, “কাছেই রামপুরহাট স্কুল। অন্য সময় হলে মেয়েরা একাই স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দিত। এখন আর সেই পরিবেশ নেই। দিনভর রাস্তা সুনসান থাকে। সবার বাড়ির দরজায় বন্ধ। সে জন্যে আমরা ঠিক করেছি, সবাই মিলে দল বেঁধে মেয়েদের স্কুলে নিয়ে যাব। পরীক্ষা শেষ হলে আবার আমরাই বাড়ি ফিরিয়ে আনব।”
একাদশ শ্রেণিরও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ওই দিন থেকে। বাড়িতে ইংরেজির ‘প্রজেক্ট’ তৈরি করার ফাঁকে মাজিজা খাতুন বলে, “সারা বছর পড়াশোনা করেছি। পরীক্ষা না দিতে গেলে হয়। ভয়কে দূরে রেখেই পরীক্ষা দিতে যাব।” তার দিদি, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মফিজা খাতুনের কথায়, “এত কিছুর মধ্যেও প্রস্তুতিতে ঘাটতি হতে দিইনি। তাই পরীক্ষা দিতে যাব।” অভিভাবক আবুল কায়েদ, সুরমান শেখরা জানান, গ্রামে পুলিশ থাকায় সাহস ও ভরসা কিছুটা বেড়েছে।
জেলা পুলিশের দাবি, বগটুই গ্রামের পরীক্ষার্থীরা দেড় কিলোমিটার দূরে রামপুরহাটের স্কুলে পড়ে। এখন পুরো রাস্তা জুড়েই পুলিশের প্রহরা রয়েছে। রাস্তার উপরে কয়েকটি জায়গায় পুলিশ-পিকেট রয়েছে। ফলে, পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy