সম্মেলনে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঢুকছেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। রবিবার সিঙ্গুরে। ছবি: দীপঙ্কর দে
এ যেন ক্ষতে ফের আশ্বাসের মলম!
সিঙ্গুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে দলের কৃষক ও খেতমজুরদের রাজ্য সম্মেলনের প্রথম দিন এখানকার ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের জমি-প্রসঙ্গ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি তৃণমূলের রাজ্য নেতারা। সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও এ নিয়ে কোনও শব্দ খরচ করা হয়নি। কিন্তু রবিবার সিঙ্গুরের জামিনবেড়িয়ায় ওই সম্মেলনে এসে তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষিদের জমি ফেরত দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। বিষয়টি আদালতের বিচার্য থাকায় কিছুটা দেরি হচ্ছে। আমার বিশ্বাস, সিঙ্গুরের চাষিরা জমি ফেরত পাবেন। রাজ্য সরকার তাঁদের জমি ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’
একই কথা এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা-মন্ত্রীদের কাছে বহু বার শুনেছেন সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’রা। কিন্তু তাঁরা এখনও জমি ফেরত পাননি। জমির জন্য তাঁদের অপেক্ষার প্রায় এক দশক হতে চলল। তাই পার্থবাবুর আশ্বাসে আর নতুন ভাবে কোনও আশার আলো খুঁজে পাচ্ছেন না ‘অনিচ্ছুক’রা।
তৃণমূলের আন্দোলনের জেরেই সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠীর ন্যানো কারখানা হয়নি। চার বছর আগে ক্ষমতায় এসে রাজ্যের বর্তমান শাসকদল গোড়াতেই সচেষ্ট হয় আইন করে সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের জমি ফেরত দেওয়ায়। কিন্তু সে আইনের বৈধতা নিয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। ঝুলে রয়েছে ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতাদের ভাগ্য। শিল্পের জন্য জমি না দিয়ে তাঁদের একটা বড় অংশ এখন অনুশোচনায় ভুগছেন। তাঁদের অসন্তোষও সামনে এসেছে।
মামলা চলা সত্ত্বেও এই চার বছরে সিঙ্গুরে শাসকদলের নেতামন্ত্রীরা যখনই সভা করেছেন, তখনই তাঁরা জমি ফেরতের আশ্বাস-বাণী শুনিয়েছেন। কিন্তু দলের কৃষক ও খেতমজুরদের রাজ্য সম্মেলনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ নিয়ে কোনও উল্লেখ না থাকায় নানা জেলা থেকে আগত প্রতিনিধিদের অনেকেই মনে করেন, এটা ঠিক হয়নি। তাঁদের মতে, প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হলে এ নিয়ে সরকারের সদর্থক ভাবনার বার্তা সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়া যেত।
জমি ফেরাতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, রবিবার এ কথা বলে ওই প্রতিনিধিদের ধারণাকেও যেন মান্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন পার্থবাবু। কিন্তু ‘অনিচ্ছু’কদের অনেকেই মনে করছেন, এ তো ক্ষতে ফের আশ্বাসের মলম! তাঁরা মানছেন, জমি ফেরত পাওয়া নিয়ে তাঁদের আগের উন্মাদনা এখন অনেকটাই ফিকে। সরকারের প্রতিশ্রুতি আদৌ কার্যকর হবে কি না, সেই প্রশ্নেও তাঁরা দ্বিধান্বিত। চাষিদের সুরেই সিঙ্গুরের ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’র সদস্য, এসইউসি নেত্রী অমিতা বাগ বলেন, ‘‘সিঙ্গুরকে হাতিয়ার করে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় এল। আর তার পরেই সেই প্রতিশ্রুতির কথা ওরা বেমালুম ভুলে গেল। সিঙ্গুরে সম্মেলন হচ্ছে। অথচ, চাষি-খেতমজুররাই ব্রাত্য!’’
আদালতে সিঙ্গুর নিয়ে মামলার নিষ্পত্তি কবে হবে কেউ জানেন না। তাই বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের এক বার সিঙ্গুরের জমি ফেরতের প্রসঙ্গ তুলে পার্থবাবু ‘অনিচ্ছুক’দের ভোট ধরে রাখার চেষ্টা চালালেন বলে মনে করছেন বিরোধীরা। তবে, পার্থবাবু শুধু সিঙ্গুরের কথা বলেই থামেননি। গ্রামীণ কৃষি-নির্ভর মানুষের কাছেও সরকারের সদর্থক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি এ দিন ঘোষণা করেন, ‘‘চাষি ও খেতমজুর পরিবারের ১০ জনের পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব রাজ্য সরকার নেবে। প্রশাসনিক ভাবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রুত তা কার্যকর করা হবে।’’
সংবাদমাধ্যমকে এক হাত নিয়ে কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নাও বলেন, ‘‘আমাদের দলনেত্রী চাষিদের পাশেই আছেন। এই সম্মেলনকে ঘিরে অযথাই বিতর্ক তৈরি করতে চাইছে কিছু সংবাদমাধ্যম। মনগড়া খবর ছাপিয়ে আমাদের উদ্দেশ্যকে খাটো করা যাবে না।’’
প্রথম দিনের মতো এ দিনও রাজ্যের এক ঝাঁক নেতা-মন্ত্রী সম্মেলনে হাজির হন। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোদের পাশে দেখা গিয়েছে সিঙ্গুর-আন্দোলনের অন্যতম মুখ, তথা স্থানীয় বিধায়ক ও মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকেও। প্রথম দিন সম্মেলনে রবীন্দ্রনাথবাবুর না-থাকা নিয়ে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছিল। রবিবার অবশ্য তিনি সম্মেলনের সময় এবং স্থান নির্বাচন সঠিক হয়েছে বলে উদ্যোক্তাদের প্রশংসাই করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy