কলকাতায় মুষলধারে বৃষ্টি সোমবার সকাল থেকে। ফাইল চিত্র।
সোমবার, সকাল সাড়ে ৬টা। বরাহনগরের আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গিয়েছে। দ্রুত পায়ে হেঁটে বাসে উঠে পড়লেন সুমন ঘোষ। ৭টার মধ্যে অফিসে ঢুকতেই হবে। আকাশের অবস্থা দেখে তিনি ঠিকই আন্দাজ করেছিলেন, বৃষ্টি নামতে পারে যে কোনও মুহূর্তে।
সোমবার, সকাল ৭.১২ মিনিট। পাইকপাড়া থেকে অফিসের পথে বেরিয়ে বিপাকে পড়লেন সুচিন্তা মল্লিক। তত ক্ষণে ঝেঁপে বৃষ্টি নেমেছে সেখানে। সঙ্গে ঘন ঘন বজ্রপাত। কোনও রকমে মাথা বাঁচিয়ে মেট্রো স্টেশনে ঢোকেন তিনি। মেট্রো থেকে বেরিয়ে হাজরা মোড়ের ছবিটা অবশ্য কিছুটা ভিন্ন দেখেন। সেখানে তখন সবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঝিরঝিরে বর্ষণে পথচলতি অফিসযাত্রীরা হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়েছেন।
সোমবার, সকাল ৮.২০ মিনিট। শিয়ালদহ স্টেশন এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে শিয়ালদহ পর্যন্ত এসে আটকে পড়েছেন শুভদীপ বসু। যেমন বৃষ্টির তেজ, তেমন বইছে ঝোড়ো হাওয়া। রাস্তায় জল জমে গিয়েছে কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতেই! এক পা নড়ার উপায় নেই। অফিসে দেরি হবেই, বুঝতে পেরে আগেভাগে ফোন করে তা জানিয়ে দিলেন।
কলকাতার পাশাপাশি শহরতলির ছবিটাও অনেকটা একই রকম। শ্যামনগর থেকে বিধাননগর, মধ্যমগ্রাম থেকে বৈদ্যবাটী কিংবা দমদম— ভোরবেলা থেকেই আকাশের মুখ ভার। ৭টার পর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে প্রায় সর্বত্র। অফিসযাত্রী যাঁরা বেরিয়ে পড়েছেন, তাঁরা মাঝরাস্তায় আটকে। যাঁরা বেরোবেন ভাবছিলেন, তাঁরা কর্তৃপক্ষকে আগেভাগে দেরি হওয়ার সম্ভাবনা জানাতে ব্যস্ত। তবে মধ্য এবং দক্ষিণ কলকাতার কিছু অংশে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তেমন বৃষ্টি হয়নি। বেহালা কিংবা ধর্মতলায় মেঘলা আকাশ, সঙ্গে হালকা মেঘের গর্জন সকাল থেকেই চলছে। ঝেঁপে বৃষ্টি শুরু হয়নি।
কলকাতা এবং লাগোয়া এলাকায় সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। শিয়ালদহ-বনগাঁ এবং শিয়ালদহ-হাসনাবাদ শাখার মধ্যমগ্রাম স্টেশনে সিগন্যাল ব্যবস্থায় ত্রুটির কারণে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত। আপ এবং ডাউনের বহু ট্রেন আটকে রয়েছে শহরতলির বিভিন্ন স্টেশনে। বহু ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আধ ঘণ্টা, এক ঘণ্টা দেরিতে চলছে। যার ফলে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন নিত্যযাত্রীরা।
বৃষ্টি হচ্ছে উত্তরবঙ্গেও। কোচবিহারে রবিবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে জেলার নদীতে জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও যাতায়াতের সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুরে রবিবার বিকেল থেকে ঝোড়ো হাওয়া এবং বৃষ্টিতে দাবদাহ জুড়িয়েছে। সোমবার সকালেও বৃষ্টি চলছে জেলার বেশ কিছু এলাকায়। এতে পাট চাষিদের সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, হুগলির একাধিক এলাকায় সোমবার সকালে স্বস্তির বৃষ্টি নেমেছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর গ্রীষ্মের দাপটকে সরিয়ে ভিজেছে শহরতলি।
দিন দুয়েক আগেও কলকাতা কিংবা আশপাশের কোথাও এমন ছবি সোনার পাথরবাটি মনে হচ্ছিল। প্রখর রোদে হাঁসফাঁস অবস্থা ছিল গোটা শহরে। মানুষ রাস্তায় বেরোতেই ভয় পাচ্ছিলেন। সোমবার সকালের ছবিতে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি বহুকাঙ্ক্ষিত বর্ষা এসেই গেল? হাওয়া অফিস অবশ্য বলছে, এটি প্রাক্ বর্ষার বৃষ্টি।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, উত্তর-পূর্ব বিহারে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। যে কারণে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উত্তরবঙ্গের উপর দিয়ে গিয়েছে নিম্নচাপ অক্ষরেখা। ফলে সেখানেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে সোমবারের বৃষ্টিকে প্রাক্ বর্ষা পরিস্থিতি বলছেন আবহবিদেরা। আগামী কয়েক দিন এ ভাবেই বৃষ্টি চলবে একাধিক জেলায়। বরং বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে আগামী কয়েক দিনে দুই থেকে চার ডিগ্রি তাপমাত্রাও কমবে বলে পূর্বাভাস। সোমবার বেলার দিকে হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং কলকাতায় বৃষ্টি বাড়তে পারে। আলিপুরের পূর্বাভাস, আগামী কয়েক দিনে দক্ষিণের উপকূল এলাকার কিছু জেলায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি চলবে উত্তরবঙ্গেও।
হাওয়া অফিস আগেই জানিয়েছিল, ১৯ জুন থেকে দক্ষিণবঙ্গে প্রাক্ বর্ষার বৃষ্টি শুরু হতে পারে। সোমবার সেই পূর্বাভাসকে সত্যি করে সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। এতে সাময়িক ভাবে রাস্তাঘাটে অসুবিধা হলেও হাঁসফাঁস গরম থেকে স্বস্তি মিলেছে, মানছেন সকলেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy