আদালতের পথে ধৃত অলোক দত্ত (বাঁ দিকে চিহ্নিত) এবং সমীর মণ্ডল (ডান দিকে চিহ্নিত)। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে পর্যটক হিসেবে থাকতে আসা যুগলের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিয়ো দেখাই নয়, অর্থের বিনিময়ে ভিডিয়োগুলি ইন্টারনেটে আপলোডও করত তারাপীঠের ওই ফ্ল্যাট মালিক। অলোক দত্ত নামে ওই ফ্ল্যাটমালিককে গ্রেফতারের পরে এমনই তথ্য জেনেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, পেশায় রেলকর্মী অলোক কলকাতার গরফা অঞ্চলের বাসিন্দা। সে যাদবপুর স্টেশনে কর্মরত। দু’বছর আগে তারাপীঠের কাছে দ্বারকা নদের ধারে একটি বহুতল আবাসনে এক কামরার একটি ফ্ল্যাট কিনেছিল বছর ছাপ্পান্নর অলোক।
পুলিশ জানায়, অলোকের সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয়েছে ওই আবাসনের অ্যাসোসিয়েশনের ম্যানেজার সমীর মণ্ডলকে। তিনি স্থানীয় সাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা। অলোকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘তদন্তে তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত অনেক কিছু রয়েছে। তাই চাই, তদন্তভার সিআইডি নিক।’’
তদন্তকারীরা জানান, নিজের ফ্ল্যাটে পরিবারের সঙ্গেও আসত অলোক। তারাপীঠ ঘুরতে আসা পরিচিতদের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে আবাসনের ‘ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’কে সে চিঠি লিখে জানাত। অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চিঠি পেয়ে আবাসিকদের নাম-ঠিকানা জেনে ফ্ল্যাটে থাকতে দিতেন। কিন্তু, ওই ফ্ল্যাটের ঘরে ও শৌচাগারে যে ভাবে গোপন ক্যামেরা এবং দেওয়ালে বাক্সের ভিতরে হার্ড ডিস্ক লাগিয়ে ভাড়াটেদের ছবি তোলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তা তাঁরা ঘুণাক্ষরেও জানতেন না বলে বৃহস্পতিবারই দাবি করেছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শুকু ধাম।
পুলিশ অবশ্য অলোক ও সমীরের পাশাপাশি শুকুর বিরুদ্ধেও যৌন হেনস্থার মামলা রুজু করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে সমীর ও অলোককে ধরে পুলিশ। ধৃতদের ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে শুক্রবার রামপুরহাট আদালতে আবেদন জানায় পুলিশ। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে। শুকু ধাম অবশ্য গা ঢাকা দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না এবং কী ভাবে এই কাজ করা হত, তা বিশদে জানতে ধৃতদের ১৪ দিনের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
বুধবার অলোকের পরিচিত কলকাতার কসবা এলাকার দুই দম্পতি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে তারাপীঠ বেড়াতে এসেছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁরাই ঘর এবং শৌচাগারের আলো পরীক্ষা করে গোপন ক্যামেরার হদিস পান। এর পরেই তাঁরা রামপুরহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। রামপুরহাট থানার পুলিশ সিউড়িতে জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেলের সহযোগিতা নিয়ে তদন্ত শুরু করে। পুলিশও তদন্তে নেমে গোপন ক্যামেরা ও দেওয়ালে হার্ড ডিস্কের সন্ধান পায়। তার পরেই সমীরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।
পুলিশের আরও দাবি, অভিযোগকারীদের সঙ্গে বসে মিটমাট করে নিতে চেয়েছিল অলোক। সে অভিযোগকারীদের অপেক্ষা করতে বলে। পুলিশ অভিযোগকারীদের থানায় বসিয়ে রাখে। অলোকের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখে তার গতিবিধির উপরে নজর রাখা শুরু হয়। রাত ১১টা নাগাদ রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছতেই পুলিশ অলোককে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, জেরায় অলোক জানিয়েছে, ফ্ল্যাটের ভিতরে ক্যামেরায় ওঠা ছবি বিভিন্ন পর্ন সাইটে অর্থের বিনিময়ে পাচার করত। মাস ছ’য়েক আগে সে গোপন ক্যামেরা বসিয়েছিল বলে অলোক পুলিশকে জানালেও সেগুলি তারও আগে লাগানো বলেই ধারণা পুলিশের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy