রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপ বিশ্বাস। —ফাইল চিত্র।
দীর্ঘতম তল্লাশির রেকর্ড ছিল তাঁরই ঝুলিতে। কিন্তু জেলবন্দি মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার সেই রেকর্ড ভেঙেই দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপ বিশ্বাস! নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জীবনের বাড়িতে টানা ৬৫ ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তার পর তাঁকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। আর স্বরূপের বাড়িতে প্রায় ৭০ ঘণ্টা তল্লাশির পর আয়কর (আইটি) বিভাগের কর্তারা শনিবার সকালে বের হয়েছেন। কয়েকটি রিয়েল এস্টেট সংস্থার আর্থিক অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে স্বরূপের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে আইটি।
গত বুধবার সকাল ৭টায় স্বরূপের নিউ আলিপুরের সাহাপুর কলোনির ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল আয়কর কর্তাদের দল। তার পর থেকে টানা তল্লাশি চালিয়ে যান তাঁরা। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় তল্লাশি ৬০ ঘণ্টার গণ্ডি পার করেছিল। সেই সময়েই তৃণমূলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছিল, স্বরূপ কি তা হলে জীবনকৃষ্ণের রেকর্ড ভেঙে দেবেন? দেখা গেল, বাস্তবে হলও তা-ই। স্বরূপের বাড়িতে ইডি তল্লাশি ৬৫ ঘণ্টা পার করে ফেলেছিল শুক্রবার রাত ১২টা পেরিয়ে শনিবার পড়তেই। অবশেষে শনিবার ভোর পৌনে ৫টা নাগাদ আইটি টিম স্বরূপের ফ্ল্যাট ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
তার পরে স্বরূপ জানিয়েছেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ চরিতার্থ করতেই ওই তল্লাশি। তবে দীর্ঘ তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর স্বরূপ এবং তাঁর কাউন্সিলর স্ত্রী জুঁই বিশ্বাসকে দৃশ্যতই বিধ্বস্ত দেখিয়েছে। রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি থেকে কোনও নগদ, গয়না বা কাগজপত্র কিছু বাজেয়াপ্ত করেনি আইটি টিম। স্বরূপের কথায়, ‘‘ওঁরা যে ব্রিফকেস নিয়ে এসেছিলেন, সেটা নিয়েই বেরিয়ে গিয়েছেন।’’ আয়কর কর্তারা যা যা প্রশ্ন করেছেন, তার সব উত্তরই তিনি দিয়েছেন বলেও দাবি স্বরূপের।
শাসকদলের নেতাদের বাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার দীর্ঘ তল্লাশি, হানা বা গ্রেফতার নতুন নয়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে প্রায় ২৪ ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করেছিল ইডি। মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতেও যে দিন সকালে ইডি ঢুকেছিল, সেই রাতেই তাঁকে বাড়ি থেকে নিয়ে বার হয়েছিল তারা। তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করতে সিবিআই সময় নিয়েছিল মেরেকেটে ঘণ্টা চারেক। বিজেপির টিকিটে জিতে তৃণমূলে যোগ দেওয়া রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর বাড়িতেও ১২ ঘণ্টা আয়কর তল্লাশি চলেছিল। তবে এ ব্যাপারে জীবনকৃষ্ণ ছিলেন সকলের উপরে।
বস্তুত, জীবনকৃষ্ণের বাড়ির তল্লাশিতে নাটকের পর নাটক হয়েছিল। প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় বাড়ির পাশের পুকুরে মোবাইল ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন বিধায়ক। তার পর সেই পুকুরের জল ছেঁচে, কচুরিপানা সরিয়ে ফোন উদ্ধার করতে কার্যত নাকানিচোবানি খেতে হয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আধিকারিকদের। কিন্তু স্বরূপের ক্ষেত্রে সে সব কিছু দেখা যায়নি। আপাতদৃষ্টিতে ‘নিস্তরঙ্গ’ই থেকেছে ব্যাপারটা।
যদিও তৃণমূলের মধ্যে কৌতূহল, দুশ্চিন্তার চোরাস্রোত বয়ে যাচ্ছিল। ঘরোয়া আলোচনায় উৎকণ্ঠার কথা গোপন করছিলেন না তৃণমূলের নেতারাও। শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতার এক তৃণমূল নেতা ঘরোয়া আলোচনায় বলেন, ‘‘স্বরূপের বাড়ির তল্লাশি দেখে আমার অজয় দেবগণের ‘রেড’ সিনেমাটার কথা মনে পড়ছে।’’ রাজকুমার গুপ্ত পরিচালিত সেই ছবিতে অজয় ছাড়াও ছিলেন সৌরভ শুক্ল, ইলিনা ডি’ক্রুজ়। তাতে তল্লাশির বিভিন্ন দিক দেখানো হয়েছিল। তৃণমূল নেতারা ঘনিষ্ঠ বৃত্তে স্বগতোক্তির মতো বলে ফেলছিলেন, ‘‘কী এমন আছে!’’ কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, এর পর না বিষয়টি ইডির হাতে চলে যায়। যদিও শাসকদলের নেতারা প্রকাশ্যে স্বরূপের বাড়ির আয়কর হানাকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ হিসেবেই বর্ণনা করেছেন। যে কথা বলেছেন মন্ত্রী অরূপ নিজেও। শেষপর্যন্ত প্রায় ৭০ ঘণ্টা পর স্বরূপের বাড়ি ছাড়ল আয়কর কর্তাদের দল। তত ক্ষণে রেকর্ড হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy