রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
বিদ্বেষ ও হিংসার বিরুদ্ধে সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে তাঁর ‘ন্যায় যাত্রা’ চলছে। সেই যাত্রার পথেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বললেন, ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলা রাস্তা দেখাবে। বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে স্বভাবসিদ্ধ ভাবে সরব হলেও এ রাজ্যে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূল কংগ্রেস সম্পর্কে কোনও কথা রাহুলের মুখে শোনা যায়নি। তবে বাংলাকে রাস্তা দেখানোর আহ্বানের মধ্যে তৃণমূল নেত্রীর উদ্দেশেও কোনও পরোক্ষ বার্তা আছে কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশে। তৃণমূল অবশ্য কংগ্রেসকে নিয়ে কটাক্ষ অব্যাহত রেখেছে।
স্বয়ং রাহুল সরাসরি তৃণমূলের প্রসঙ্গ উহ্য রাখলেও তাঁর যাত্রাসঙ্গী এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক রবিবারও মমতা-প্রশস্তি অব্যাহত রেখেছেন। তৃণমূল নেত্রীকে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শক্তি বলে উল্লেখ করে ‘ন্যায় যাত্রা’য় পাঁচ-দশ মিনিটের জন্য হলেও তাঁকে আসার ফের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে রাহুলের যাত্রার পোস্টার-ফেস্টুন ছেঁড়ার অভিযোগকে ঘিরে বাংলায় এসে মুখ খুলতে হয়েছে জয়রামকে। শিলিগুড়িতে এ দিন এই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন, যাতে এই সব ঘটনা বন্ধ হয়। জলপাইগুড়িতে আমাদের পোস্টার ছেঁড়া হয়েছে। প্রচার সামগ্রী নষ্ট করা হয়েছে। এটা করা ঠিক নয়। কংগ্রেস এবং তৃণমূল, দু’টো দলই ‘ইন্ডিয়া’ জোটে আছে। বড় হৃদয় নিয়ে কাজ করতে হবে।’’ সূত্রের খবর, বাংলায় যখন শাসক তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধী কংগ্রেসের লড়াই চলছে, রাহুলের যাত্রার প্রচারে রাজনৈতিক বাধা ও সভা-সমাবেশে প্রশাসনিক অসহযোগিতার অভিযোগ আসছে, সেই সময়ে এআইসিসি-র ক্রমাগত মমতা-স্তুতি দলের কর্মী-সমর্থকদের মনোবলে প্রভাব ফেলছে বলে জয়রামের কাছে উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রদেশ ও জেলা কংগ্রেসের নেতৃত্ব, রাহুলের যাত্রা চলাকালীন কংগ্রেস সমর্থকদের মধ্যে থেকে ‘তৃণমূলের সঙ্গে জোট চলবে না’ বলে স্লোগানও উঠেছে। তার প্রেক্ষিতেই জয়রাম পোস্টার ছেঁড়ার সমালোচনা করেছেন বলে কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা।
রাহুলের যাত্রা শুরুর আগে এ দিনও কিছু পোস্টার ছেঁড়া দেখা গেলেও পরে অবশ্য ‘অপ্রীতিকর’ কিছু ঘটেনি। ‘ন্যায় যাত্রা’র নিরাপত্তা দিতে জলপাইগুড়িতে দেখা গিয়েছে রাজ্য পুলিশের বিশেষ বাহিনীকে। রাজ্য পুলিশের নিরাপত্তা অধিকর্তার (ডিরেক্টরেট সিকিওরিটি) ওই বাহিনীকে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বেও দেখা যায়।
যাত্রায় দু’দিনের বিরতির পরে এ দিন দিল্লি থেকে বাগডোগরায় এসে সড়ক পথে জলপাইগুড়ি পৌঁছন রাহুল। জলপাইগুড়িতে পদযাত্রা সেরে শিলিগুড়ি পৌঁছে আবার পদযাত্রা করেন তিনি। যাত্রা ঘিরে ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতোই। সর্বক্ষণই সঙ্গে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। মিছিলে শামিল হয়েছিলেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক দীপা দাশমুন্সি এবং প্রদেশ ও জেলা কংগ্রেসের বহু নেতা। অংশগ্রহণ করেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার এবং দলের পতাকা নিয়ে কর্মী-সমর্থকেরাও। সন্ধ্যায় গাড়িতে রাহুল পৌঁছেছেন উত্তর দিনাজপুরের সোনপুরে। সেখানেই রাত্রিবাস করে আজ, সোমবার চোপড়া থেকে যাত্রা শুরু হওয়ার কথা। কিসানগঞ্জ হয়ে রাহুলের বিহারে ঢোকার সূচি রয়েছে।
শিলিগুড়িতে রাহুল এ দিন ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বাংলার লড়াই এবং নানা ক্ষেত্রে বাংলার বৌদ্ধিক অবদানের কথা মনে করিয়েছেন। সেই সূত্রেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসু, বিবেকানন্দ রাস্তা দেখিয়েছেন। আপনাদের মধ্যে সেই ক্ষমতা রয়েছে। আপনারা দেশকে রাস্তা দেখানোর কাজ না করলে দেশ আপনাদের ক্ষমা করবে না! এটা আপনাদের দায়িত্ব। কোনও এক ব্যক্তির নয়। এই আগুন বাংলার প্রতিটি মানুষের মধ্যে আছে। আপনাদের সকলের দায়িত্ব ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াই করা, এক সঙ্গে মিলেমিশে চলা। যে বৌদ্ধিক ক্ষমতা রয়েছে, তা দিয়ে ভারতকে জোড়ার কাজ করতে হবে।’’ দেশের বর্তমান সরকার বিভাজনের রাজনীতি করছে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ বেচে দিচ্ছে, কর্মসংস্থান কমে গিয়ে বেকারত্ব বেড়ে চলেছে, এই সব অভিযোগই ফের শোনা গিয়েছে রাহুলের মুখে। পাশাপাশিই সেনার ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্পের সমালোচনায় তিনি বলেছেন, ‘‘এক লক্ষ ২৫ হাজার যুবক সেনাবাহিনীতে ভর্তি হন। সরকার বলছে, আপনাদের ভর্তি ঠিক সময়ে নেওয়া হবে। তিন বছর পরে তাদের বলা হচ্ছে, তোমাদের স্থায়ী কা হবে না। তাদের সঙ্গে অন্যায় করা হল। দেশে এবং বিভিন্ন প্রদেশে নানা ভাবে অন্যায় হচ্ছে।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘আজকাল যে কাজ করবে, তার সম্মান নেই। যে দালালি করবে, তার সম্মান!’’
দেশ বাঁচাতেই বিজেপিকে ঠেকানোর কথা বলেছেন জয়রামও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপিকে দেশ থেকে সরাতে কংগ্রেসই পারে। এটা শুধু বাংলার নয়, গোটা দেশের বিষয়। বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেসের বড় ভূমিকা বাংলায় এবং দেশেও। শুধু বাংলায় রুখলে হবে না, দেশে রুখতে হবে। ‘ইন্ডিয়া’ জোটও পশ্চিমবঙ্গের জন্য শুধু নয়, গোটা দেশের জন্য।’’ মমতা বাংলায় একা লড়ার কথা জানিয়ে দেওয়ার পরে এখনও তাঁরা আসন সমঝোতায় আশাবাদী কি না, সেই প্রসঙ্গে এআইসিসি নেতার মন্তব্য, ‘‘আমরা গণতান্ত্রিক ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মধ্যে আছি। কখনও তৃণমূল কিছু বলে, আমাদের নেতারা জবাব দেন। আবার আমাদের নেতারা কিছু বললে তৃণমূল জবাব দেয়। কিন্তু নির্বাচনে কংগ্রেস ও তৃণমূল, দু’দলেরই লক্ষ্য বিজেপিকে হারানো। সেই জায়গায় আমরা এক। মমতাও ‘ইন্ডিয়া’ জোটের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।’’
রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য কটাক্ষ করেছেন, ‘‘জ্ঞানের কথা বলার আগে কংগ্রেসের মনে রাখা উচিত, রাজ্যে তাদের নেতারা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির নেতৃত্বে ক্রমাগত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন। মমতা বিজেপিকে হারিয়ে দেখিয়েছেন। আর গত বিধানসভা নির্বাচনে সেই সময়ে সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কংগ্রেস ভোট ভাগ করে বিজেপিকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিল!’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘রাহুল এসেছেন, তাঁর কর্মসূচি করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন মমতাই।’’
তৃণমূল ও কংগ্রেসের এই সংঘাতের মধ্যে কংগ্রেসের অন্দরেও টানাপড়েন অব্যাহত। প্রদেশ কংগ্রেসের ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা কৌস্তভ বাগচী জয়রামকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘নীতীশ কুমারের ঘটনায় শিক্ষা নিন! তৃণমূলের রাজনৈতিক ডিএনএ-ও বিশ্বাসঘাতকতার। কংগ্রেসকে ভেঙেছেন যে মমতা, তাঁর প্রশস্তি করা মানে কংগ্রেস কর্মীদেরই অপমান করা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy