রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য আর বেচারাম মান্না। ফাইল চিত্র।
দলীয় স্তরে দৌত্যের পরেই ‘মাস্টারমশাই’ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে নিয়ে সুর বদল বেচারাম মান্নার। স্মৃতির সুতোয় টান দিয়ে এ বার হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক দাবি করলেন, তাঁর বিয়ের ঘটক ছিলেন ‘রবীনবাবু’ই। অবশ্য বেচারামের স্মৃতিচারণের কিছুটা আগে শুক্রবার সিঙ্গুরে কৃষি জমি রক্ষা কমিটির ব্যানারে হওয়া মিটিংয়ে স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূল কর্মীদের একাংশ।
সিঙ্গুরে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি পরিবর্তন নিয়ে কয়েক দিন আগে গোলমালের সূত্রপাত। তা অবশ্য মানতে নারাজ বেচারাম। এ দিন সিঙ্গুরে তৃণমূলের দফতরে বসে হরিপালের বিধায়ক বলেন, ‘‘রবীন বাবু এবং আমার মধ্যে মনোমালিন্য আছে বলে তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু এটা ঠিক নয়।’’ এর পর তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘রবীন বাবু আমার বিয়ের ঘটক ছিলেন। উনি দলের হয়ে কাজ করছেন, আমিও করছি। আমাদের মধ্যে কোনও অশান্তি নেই। কোনও মারপিট নেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সিঙ্গুরে গোষ্ঠী কোন্দল চলছে বলে সংবাদ মাধ্যম তুলে ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু তা ঠিক নয়। আমাদের মধ্যে কোনও বিভেদ নেই।’’ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে জমি আন্দোলনের ধাত্রীভূমি সিঙ্গুর থেকে তৃণমূল ৪০ হাজারের বেশি লিড পাবেন বলেও প্রত্যয়ের সুরে জানিয়েছেন বেচারাম।
এ দিন সন্ধ্যায় সিঙ্গুরের বিধায়কের সঙ্গে মধুর সম্পর্কের ইতিহাস মেলে ধরেছেন হরিপালের বিধায়ক। কিন্তু তার আগে ছন্দপতন ঘটে সিঙ্গুরে কৃষি জমি রক্ষা কমিটির ব্যানারে হওয়া মিটিংয়ে। তৃণমূল সমর্থকদের সামনে স্থানীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ পড়ে শোনান বেড়াবেড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দুধকুমার ধাড়া। এ নিয়ে অবশ্য রবীন্দ্রনাথের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত মেলেনি। তবে তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘কাউকে ছোট করার শিক্ষা আমাদের দল দেয় না। কারও কিছু বক্তব্য থাকলে দলকে জানাতে পারে।’’
সম্প্রতি সিঙ্গুরে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি পদে রবীন্দ্রনাথের অনুগামী হিসেবে পরিচিত মহাদেব দাসকে সরিয়ে বেচারামের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত গোবিন্দ ধাড়াকে বসানো হয়। আর তা নিয়ে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন রবীন্দ্রনাথ। এমনকি দল ছাড়ার হুমকিও দেন। শেষ পর্যন্ত বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন খোদ দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল সূত্রে খবর, বুধবার রাতে বেচারামের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মমতা। মহাদেব দাসকে ব্লক সভাপতি পদে ফেরানোর নির্দেশ দেওয়া হয় বলেও বেচারামের ঘনিষ্ঠরা জানান। মমতার নির্দেশের পরেও বেচারাম আপত্তি তোলার চেষ্টা করলে তাঁকে না কি সতর্ক করে বলা হয়, দলকে যেন বেচারাম ‘ব্ল্যাকমেল’ করার চেষ্টা না করেন। সূত্রের খবর, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে হরিপালের টিকিট দেওয়া হবে না বলেও বার্তা দেওয়া হয়। এর পরেই বেচারাম ইস্তফার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাঁকে তৃণমূল ভবনে ডেকে দলের রাজ্য সভাপতি তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী ‘ধমক’ দেন বলে খবর। এর পরেই ইস্তফার সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেন বেচারাম। শুক্রবার সিঙ্গুরে বেচারামের বাড়িতে যান উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের হুগলি জেলা মুখপাত্র প্রবীর ঘোষালও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy