এ যেন আক্ষরিক অর্থেই নেই—রাজ্য। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সব কিছুই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক অনেক কম। ডিসিআই (ডেন্টাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া) এমনটাই রিপোর্ট দিল কলকাতার রফি আহমদ ডেন্টাল কলেজ এবং হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
ডেন্টাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া দেশ জুড়ে সব ডেন্টাল মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে নজরদারি চালায়। অক্টোবর মাসে ডিসিআইয়ের তরফ থেকে আর আহমদ পরিদর্শনে এসেছিলেন দুই সদস্য। তাঁদের পর্যবেক্ষনের ওপর ভিত্তি করেই আর আহমদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়েছে ডিসিআই। আর তাতেই আরও একবার সামনে এসেছে বেহাল পরিকাঠামো।
কী কী ‘নেই’—এর কথা জানাচ্ছে ওই রিপোর্ট?
রিপোর্টে প্রথমেই উল্লেখ রয়েছে ইন্ট্রাওরাল এক্স—রে ইউনিট, বায়োপ্সি কিট, আল্ট্রাসনিক ক্লিনার, বায়োমেট্রিক মেশিনের মতো বিভিন্ন প্রযোজনীয় যন্ত্র যথেষ্ট পরিমাণে নেই। সব মিলিয়ে নেই—এর সংখ্যাটা প্রায় দেড়শোর কাছাকাছি। এবং যে সব যন্ত্র রয়েছে সেগুলির ক্ষেত্রে এইআরবি (অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি বোর্ড) নির্দেশিত তেজস্ক্রিয়তা সংক্রান্ত নিয়মাবলী মানা হয় না। যা থেকে চিকিসক ও রোগী দুইয়েরই ঝুঁকি রয়েছে।
এ তো গেল যন্ত্র। স্নাতকোত্তরে নেই ১২ জন শিক্ষক। নেই ৩৭ জন অশিক্ষক কর্মচারীও। কলেজের গ্রন্থাগারটির অবস্থাও তথৈবচ। দীর্ঘদিন ধরে কোনও গ্রন্থাগারিক নেই। দীর্ঘ অব্যবহার ও অযত্নে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে বহুমূল্য সব বই। গ্রন্থাগার জুড়ে উইপোকার অবাধ আস্তানা। শুধু তাই নয়, ২০০৬ সালের পর আর কোনও গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়নি এখান থেকে।
রিপোর্টে জানানো হয়েছে, আর আহমদের হস্টেলের অবস্থা খুবই খারাপ। দীর্ঘদিন ধরেই হস্টেলের রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। রীতিমতো বসবাসের অযোগ্য এবং অস্বাস্থ্যকর জায়গাতেই থাকতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। এ ছাড়াও ডেন্টাল কলেজের অন্যতম প্রয়োজনীয় সামগ্রী ডেন্টাল চেয়ারগুলিও বেহাল। মোট ১৩৯ টি চেয়ারের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি চেয়ার জং ধরে কবেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নেই কোনও চলমান ডেন্টাল ভ্যানও।
তবে ডিসিআইয়ের রিপোর্টটি সম্প্রতি সামনে এলেও পড়ুয়াদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই এই অবস্থায় রয়েছে আর আহমদ ডেন্টাল কলেজ। বারবার করে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেননি। পড়ুয়ারা জানান, শিক্ষকের অভাবে ক্লাস হয় অনিয়মিত। যথেষ্ট শিক্ষাকর্মী না থাকায় আটকে যায় বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ। লাইব্রেরির অভাবে দামী বই বাইরে থেকে কিনে পড়তে অনেক সমস্যা হয়। আর হস্টেলের খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুই খুব খারাপ। নিয়মিত পরিষ্কারের অভাবে জমে থাকে জঞ্জাল। আর তা থেকেই ছড়ায় ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ।
কলেজের এক ছাত্র অভিষেক হালদার বলেন, ‘‘ডিসিআই তো এখন রিপোর্ট দিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আমরা যে কতটা কষ্ট করে রোগীদের পরিষেবা দিয়েছি সে আমরাই জানি। কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েও লাভ হয়নি। এখন এই রিপোর্ট পেয়ে যদি কিছু হয়।’’
কিন্তু ছাত্রদের অভিযোগের উত্তরে কর্তৃপক্ষ কী বলছেন?
আর আহমদের সুপার তপন গিরি জানান, ‘‘এই রিপোর্ট পেয়ে আমরা স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি। পড়ুয়াদের সঙ্গেও কথা বলেছি। পরিকাঠামোগত কিছু ত্রুটি ছিল। সেগুলি যাতে দ্রুত ঠিক করা যায় তার চেষ্টা চলছে।’’
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ডিসিঅইয়ের রিপোর্টে যে যে সমস্যার কথা বলা হয়েছে সে নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আর আহমদের পরিকাঠামোগত উন্নতির জন্য বেশ কিছু টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ধীরে ধীরে সব ঠিক করে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy