Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Kaliyaganj Incident

মৃত সন্তানের দেহ ব্যাগে ভরে বাড়ি: চিকিৎসা করাতে কেন যেতে হল ২০০ কিমি, উঠছে প্রশ্ন

ঘরের কাছে কি হাসপাতাল ছিল না? যার জবাব খুঁজতে গিয়ে জানা যাচ্ছে, শিশুটির যে রোগের উপসর্গ ছিল, সেই ‘ওরাল ক্যান্ডিডা ইনফেকশন’-এর চিকিৎসা করার মতো পরিকাঠামো ছিল তিনটি জেলা হাসপাতালে।

An image of the Kaliyaganj incident

শিশুমৃত্যুতে প্রশ্ন, কেন সারছে না ‘রেফার রোগ’। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৩ ০৬:১৯
Share: Save:

কালিয়াগঞ্জে মৃত সন্তানের দেহ ব্যাগে ভরে আনার যে দৃশ্য দেখা গিয়েছে রবিবার, তা ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে— কেন পরিবারটিকে চিকিৎসা করাতে দু’শো কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে যেতে হল? ঘরের কাছে কি হাসপাতাল ছিল না? যার জবাব খুঁজতে গিয়ে জানা যাচ্ছে, শিশুটির যে রোগের উপসর্গ ছিল, সেই ‘ওরাল ক্যান্ডিডা ইনফেকশন’-এর চিকিৎসা করার মতো পরিকাঠামো ছিল তিনটি জেলা হাসপাতালে। কিন্তু তারই একটি, শিশুর বাড়ি থেকে সব থেকে কাছের, রায়গঞ্জ মেডিক্যাল শিশুটিকে ‘রেফার’ করে দেয়। তখন ৪৫ কিমি দূরের মালদহ মেডিক্যালে এই রোগের চিকিৎসা হওয়া সত্ত্বেও শিশুটির বাবা অসীম দেবশর্মা সন্তানকে নিয়ে ২০০ কিমি দূরের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে যান।

এই সূত্রেই প্রশ্ন উঠেছে, এত হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও ‘রেফার-রোগ’ কেন সারছে না?

এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে, তা জানতে উত্তর দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে নবান্নের তরফে। রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের কাছেও। অসীম দেবশর্মা জানান, তাঁদের ধারণা ছিল, মালদহ মেডিক্যালের থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভাল চিকিৎসা হবে। তাই কাছের মালদহ মেডিক্যালে না গিয়ে, তাঁরা দূরের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে সন্তানদের নিয়ে যান।

প্রশাসন সূত্রের দাবি, কালিয়াগঞ্জের কাছে আরও একটি হাসপাতালে এই রোগের চিকিৎসা হয়। সেটি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা হাসপাতাল বা বালুরঘাট হাসপাতাল। কালিয়াগঞ্জ থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দুবিকাশ বাগ বলেন, ‘‘সেপ্টিসেমিয়া বা ওরাল ক্যান্ডিডার ক্ষেত্রে এমডি চিকিৎসকেরাই রোগীর চিকিৎসা করে থাকেন। আমাদের হাসপাতালে সে পরিকাঠামো রয়েছে।’’ মালদহ মেডিক্যালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ পুরঞ্জয় সাহাও বলেন, ‘‘আমাদের মেডিক্যালে ওরাল ক্যান্ডিডা ইনফেকশনের চিকিৎসা হয়। মেডিক্যালে সে পরিকাঠামোও রয়েছে।’’ বাড়ি থেকে ২০০ কিমি দূরের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নিয়ে গিয়েও দুই যমজ সন্তানের এক জনকে বাঁচাতে পারেননি অসীম। সে মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে কোনও অ্যাম্বুল্যান্সও ভাড়া করতে পারেননি তিনি। শেষে একটি ব্যাগ কিনে তাতে সন্তানের দেহ ভরে বাড়ি ফেরেন। এই দৃশ্যে রাজ্য জুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম রাতে বলেন, ‘‘কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে জানতে চেয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের অধ্যক্ষ এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।’’ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, ‘‘আমরা নবান্নে সবিস্তার রিপোর্ট পাঠিয়েছি।’’ উত্তর দিনাজপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পূরণকুমার শর্মা এ দিন ফোন ধরেননি। মেসেজেরও জবাব দেননি। তবে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের দাবি, রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। রায়গঞ্জ মেডিক্যালের সুপার প্রিয়ঙ্কর রায় বলেন, ‘‘এ রকম মুখে সংক্রমণ নিয়ে অনেক শিশু মেডিক্যালে ভর্তি হয়। ওই শিশুটির ক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছিল, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ কে, কোন পরিস্থিতিতে ‘রেফার’ করলেন, তা-ও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

অসীমের দাবি, ছেলের মৃত্যুর পরে ১০২ নম্বরে ‘নিশ্চয়যান’-কে ফোন করলে, তাঁকে সেখান থেকে জানানো হয়, মৃত শিশুর ক্ষেত্রে এই পরিষেবা মিলবে না। তাঁর অভিযোগ, ‘‘১০২ নম্বরের যে অ্যাম্বুল্যান্সগুলি চলে, তাদের চালকেরা বলেন, বিনা পয়সায় দেহ নিয়ে যাবেন না। তাঁরা আট হাজার টাকা দাবি করেন।’’ ১০২ অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার কাজে যুক্ত চালকেরা এ দাবি মানেননি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন অ্যাম্বুল্যান্স প্রচুর হয়েছে। ঘাটতি থাকলে, স্থানীয় স্তরে তা থাকতে পারে। আমি এগুলি দেখে নিতে বলব।’’ স্বাস্থ্যসচিব জানান, অ্যাম্বুল্যান্সে শবদেহ বহন করার কথা নয়। সরকারি হাসপাতালে শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মানবিক কারণে অনেক সময়ে স্থানীয় ভাবে শব বহনের গাড়ির ব্যবস্থা করে দেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা আদৌ বিষয়টি জানতেন কি না, ঠিক কী ঘটেছে, জানতে চাওয়া হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Kaliyaganj Death Government hospitals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy