Advertisement
E-Paper

অর্ণবের গবেষণা নিয়ে নানা প্রশ্ন, ভর্তিও স্থগিত

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, ইতিহাসের পিএইডি কোর্সে ভর্তি আপাতত বন্ধ রাখা হল। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বন্ধ থাকবে। তবে অন্য বিষয়ে পিএইচডিতে ভর্তি যথারীতি চলবে।

মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম।

মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪ ০৮:৪৪
Share
Save

ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতে আজ, মঙ্গলবার দুপুরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মাওবাদী নেতা অর্ণব দামের। তার আগে, সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, ইতিহাসের পিএইডি কোর্সে ভর্তি আপাতত বন্ধ রাখা হল। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বন্ধ থাকবে। তবে অন্য বিষয়ে পিএইচডিতে ভর্তি যথারীতি চলবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, হুগলি জেলা সংশোধানগারের সুপারকে চিঠি দিয়ে পিএইডি করার জন্য অর্ণবকে রাজ্য সরকার অনুমোদন দিয়েছে কি না, কী ভাবে ছ’মাসের ‘কোর্স ওয়ার্ক’ করবেন তিনি, তা জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে মানবাধিকার সংগঠন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সকলেই মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্বশাসিত সংস্থা। তার নিজস্ব বিধি আছে। সেক্ষেত্রে ভর্তি হওয়ার জন্য সরকারের অনুমতি কেন লাগবে? অর্ণবের ভর্তি ‘আটকাতে’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি অনেকের। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য গৌতম চন্দ্র যদিও বলেন, “জেল সুপারের আবেদনের ভিত্তিতে অর্ণবকে ইন্টারভিউয়ে বসার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্ণব মাওবাদী কি না আমাদের জানা নেই। সংবাদমাধ্যমে দেখেছি। অর্ণবের পিএইচডি করার অনুমোদন রাজ্য সরকার দিয়েছে কি না কিংবা ছ’মাসের ‘কোর্স ওয়ার্ক’ কী ভাবে করবে, তা জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে। সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রশ্ন রয়েছে।”

সূত্রের দাবি, ওই চিঠির উত্তর আসার পরেই অর্ণবকে ইতিহাসে গবেষণা করার সুযোগ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় দেবে কি না, তা জানা যাবে। তবে হুগলি সংশোধনাগার সূত্রের দাবি, পিএইচডি-তে ভর্তি স্থগিত জানিয়ে সোমবারই জেল সুপারকে ই-মেল পাঠিয়েছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভর্তি কেন স্থগিত কিংবা শুধুমাত্র অর্ণবের জন্যই স্থগিত কি না, তার উল্লেখ নেই চিঠিতে। তাঁদের দাবি, অর্ণবের পরীক্ষা বা পড়াশোনা সংক্রান্ত কোনও বিষয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানানো হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে সেই মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মাওবাদীদের মূলস্রোতে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। অনেক মাওবাদী নেতা রাজ্য সরকারের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। অর্ণব ওরফে বিক্রম অবশ্য জেলে থেকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালানোর ঘটনায় অর্ণবই ছিলেন মূল অভিযুক্ত। পরে বন্দুক, গুলির লড়াই ছেড়ে পড়ায় মন দেন। গরাদের আড়ালে থেকেই স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ‘সেট’ উত্তীর্ণ হন। ইতিহাসে গবেষণার জন্য গত ২৬ জুন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভিউ দেন অর্ণব। শুক্রবার ফল বার হলে দেখা যায়, সফলদের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে অর্ণবের নাম।

মানবাধিকার সংগঠনের অভিযোগ, প্রেসিডেন্সি জেলে থাকার সময় ‘ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট’ বা নেট দিতে পারেননি অর্ণব। এপিডিআরের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর বলেন, “রাষ্ট্র বলছে মাওবাদীদের মূল ধারায় ফিরে এসো। জেলের বিধি বলছে, কারও শিক্ষা আটকানো যাবে না। অথচ এক জন মাওবাদী মূল ধারায় ফিরে আসার জন্য লেখাপড়া করতে চাইছেন, পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন, কিন্তু কোনও একটা অজুহাত দেখিয়ে তাঁর ভর্তি আটকানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর থেকে অন্যায় আর কী হতে পারে! এটা প্রতিহিংসা।” বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী সংগঠনের নেতা শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জেলে বসে এক জন ভোটে দাঁড়াতে পারেন, আর এক জন লেখাপড়া করতে পারবেন না? এটা কখনও হয়? অর্ণবের মতো পড়ুয়াদের উৎসাহ দেওয়া দরকার।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Arnab dam CPIM Bardhaman Maoist

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}