Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
medicines

ওষুধের দামে বড় অঙ্কের ছাড়, মান ঠিক থাকছে কি

এত দিন এই দোকানগুলিতে ওষুধের দামের উপর ছাড়ের মাত্রা ছিল ৬৫-৬৭%। নতুন দরপত্র প্রক্রিয়ায় এপ্রিল মাসে এই দোকানগুলিতে ওষুধ বিক্রির জন্য মনোনীত ওষুধ সংস্থাগুলির নাম প্রকাশিত হয়েছে।

—প্রতীকী চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৪ ০৮:১৪
Share: Save:

রাজ্যে সরকারি হাসপাতাল-চত্বরে ‘সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে’ (পিপিপি মডেল) চলা ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানগুলিতে সম্প্রতি ওষুধের দামের উপর বিপুল ছাড়ের ঘোষণা হয়েছে। এত দিন এই দোকানগুলিতে ওষুধের দামের উপর ছাড়ের মাত্রা ছিল ৬৫-৬৭%। নতুন দরপত্র প্রক্রিয়ায় এপ্রিল মাসে এই দোকানগুলিতে ওষুধ বিক্রির জন্য মনোনীত ওষুধ সংস্থাগুলির নাম প্রকাশিত হয়েছে। তারা ওষুধের দামের উপর জিএসটি সমেত ৮৫-৮৮% ছাড় ঘোষণা করেছে!

ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান মূলত ‘ব্র্যান্ডেড জেনেরিক’ ওষুধ বিক্রি করে। এই ধরনের ওষুধের বিজ্ঞাপন খরচ, প্যাকেজিং খরচ, ডাক্তারদের মধ্যে প্রচারের খরচ, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের খরচ ইত্যাদি না থাকায় দাম এমনিতে ‘ব্র্যান্ডেড ড্রাগ’-এর থেকে কম হয়। তবে ছাড়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ওষুধ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ, বামপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর মুখপাত্র মানস গুমটার মতো অনেকেরই অভিমত, এই ধরনের ওষুধের মান যেন নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। কারণ, তাঁদের বক্তব্য, হিমাচল প্রদেশ, চণ্ডীগড়, উত্তরাখণ্ড জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো ছোট ছোট ওষুধের কারখানা গড়ে উঠেছে। সেখানে মুড়িমুড়কির মতো ওষুধ তৈরি হচ্ছে কার্যত বিনা নজরদারিতে। পেয়ে যাচ্ছে সরকারি ছাড়পত্রও। কারণ, দেশে ড্রাগ কন্ট্রোলের পরিকাঠামো অত্যন্ত সীমিত ও নজরদারি নামমাত্র। বহু নামী সংস্থা এই সব কারখানায় কমদামি ‘ব্র্যান্ডেড জেনেরিক’ ওষুধ তৈরি করে সরবরাহ করছে।

পুণ্যব্রতের কথায়, “ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে বিক্রি হওয়া ওষুধের কোয়ালিটি কন্ট্রোলের পরিকাঠামো অত্যন্ত খারাপ।” মানস বলেন, “ওষুধের গুণমান যদি নিয়মিত যাচাইয়ের ব্যবস্থা না থাকে, তা হলে মাত্রাতিরিক্ত ছাড় মিললে সন্দেহ আরও বাড়বে। তার উপর নিকট অতীতে একাধিক বার ন্যায্য মূল্যের দোকানে খারাপ মানের ওষুধ মিলেছে।” যদিও রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম দাবি করেছেন, “ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের ওষুধ নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়।”

কী ভাবে তাঁরা ওষুধের দামে এত টাকা ছাড় দিতে পারছেন? যে সংস্থা সবচেয়ে বেশি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের দায়িত্ব পেয়েছে তার কর্ণধার রেবতীরমণ কোলে ব্যাখ্যা দেন, “চণ্ডীগড়, হিমাচলের বিভিন্ন উৎপাদকের থেকে আমরা সরাসরি ওষুধ কিনি। যেমন, এক কিলো প্যারাসিটামল তৈরি করতে ৭৫ টাকা খরচ পড়ে। সেটার এমআরপি হয়, এক পাতা ( মাত্র ১০টা) ২৩-২৪ টাকা! আবার ধরা যাক, একটা মেরোপেনাম ইঞ্জেকশন উৎপাদনে খরচ পড়ে ৭০ টাকা। তার এমআরপি হয় ১০৬৬ টাকা! ফলে ৮৫-৮৮% ছাড় দিলেও আমাদের লাভ থাকবে।” এই সব ওষুধের গুণমান নিয়ে সংশয় প্রসঙ্গে তাঁর উত্তর, “এনএবিএল স্বীকৃত ল্যাবরেটরিতে ওষুধ পরীক্ষা করে তার শংসাপত্র নিয়ে তবেই বিক্রি করা হয়।”

ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে ‘অত্যাবশ্যক ওষুধ’ (এসেনশিয়াল ড্রাগ) তালিকাভুক্ত প্রায় ৮০০ ওষুধ রাখতেই হয়। সরকারি নিয়মে এর মধ্যে অন্তত ৪৫% ওষুধের ‘পারচেজ় প্রাইজ়’ ও প্যাকেটে ছাপানো এমআরপি মধ্যে কখনও ২০%-র বেশি পার্থক্য থাকতে পারে না। তা হলে সেগুলি কী করে ন্যায্য মূল্যের দোকানে ৮৭-৮৮% ছাড়ে বিক্রি করা যাবে? রেবতীরমণ বলেন, “ওগুলোর ক্ষেত্রে ক্ষতি স্বীকার করতে হবে। এই দোকানগুলিতে বিক্রি খুব বেশি বলে ক্ষতিটা সামলানো যাবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

medicines West Bengal Fair price shop
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy