সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। —ফাইল চিত্র।
জেল হেফাজতে থাকা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা কি ইডির ‘ঠান্ডা ঘরে’ জায়গা নিয়েছে? প্রশ্ন তুলছেন আইনজীবীদের একাংশ। ওই বিষয়ে তদন্তের অগ্রগতি থমকে গিয়েছে বলে অভিযোগ তুলছেন মামলাকারী আইনজীবীরা।
প্রায় ছ’মাস ধরে নিম্ন আদালত এবং উচ্চ আদালতে একাধিক বার আবেদন করে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেল হেফাজতে থাকা, এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুজয়কৃষ্ণের গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহ করেছিল ইডি। তাদের দাবি ছিল, নিয়োগ দুর্নীতিতে ‘প্রভাবশালী’দের যোগ উঠে আসার ক্ষেত্রে ওই কণ্ঠস্বরের নমুনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এর পর কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের নির্দেশে গত ৩ জানুয়ারি এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুজয়কে জোকা ই এস আই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তার পর ওই নমুনা যায় দিল্লির ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে। ফরেন্সিক পরীক্ষায় কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বর ‘মিলে গিয়েছে’ বলে কয়েক মাস আগে উচ্চ আদালতে দাবি করে ইডি। রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়। তবে সেই রিপোর্ট সংক্ষিপ্ত কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ। তদন্তের প্রকৃতি নিয়েও পরবর্তী শুনানিতে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ‘কালীঘাটের কাকু’র মোবাইল থেকে বেশ কয়েকটি ‘ভয়েস কল রেকর্ডিং’ উদ্ধার করা হয়েছিল। অভিযোগ, তিনি নিয়োগ দুর্নীতির সমস্ত রকম তথ্য নষ্ট করার জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের প্রাক্তন এক কর্তা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তা ছাড়া কয়েক জন ‘প্রভাবশালী’র সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ডিং উদ্ধার করা হয়েছিল বলেও ইডি-র দাবি। তবে এখনও পর্যন্ত কোন ‘প্রভাবশালী’র সঙ্গে সুজয়ের কথোপকথন হয়েছিল, তা প্রকাশ্যে আনেনি ইডি। উল্লেখ্য, ওই প্রাক্তন কর্তা এবং সিভিক ভলান্টিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ইডি সূত্রের দাবি, তথ্য প্রমাণ নষ্ট করার জন্য সুজয়কৃষ্ণ তাঁদের বলেছিলেন বলে, সেই কথা জিজ্ঞাসাবাদে ‘কবুল করেছেন’ ওই দু’জন।
শুধু ইডি নয়। প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করছে সিবিআইও। জেলা পরিষদের প্রাক্তন ওই কর্তা এবং সিভিক ভলান্টিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরাও। সূত্রের দাবি, সিবিআইয়ের তরফে ওই দু’জনের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু ‘কাকু’র গলার স্বরের নমুনা তাদের হাতে আসেনি। সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, ওই কণ্ঠস্বরের নমুনা ইডির হেফাজতেই রয়েছে এবং তা হাতে না আসায় তদন্ত সম্পূর্ণ করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া, নিয়োগ দুর্নীতিতে ‘কাকু’র যোগসূত্রে একাধিক ‘প্রভাবশালী’কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তে অগ্রগতির ক্ষেত্রে ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরাও।
মামলাকারী আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “শুরু থেকেই কালীঘাটের কাকুর গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহ ও পরবর্তী সময়ে ফরেন্সিক রিপোর্ট সংগ্রহ আর তা কোর্টে জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইডির তদন্তকারীদের তৎপরতার অভাব চোখে পড়েছে। এখন ওই রিপোর্ট হাতে আসার পরেও তদন্তে তৎপরতা চোখে পড়ছে না। ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে আসার পরে কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্তের অগ্রগতি কোর্টকে জানানো হয়নি। তদন্তকারী সংস্থা প্রভাবশালীদের আড়ালের চেষ্টা করে থাকতে পারে বলে স্বাভাবিক ভাবেই অভিযোগ উঠছে।” আর এক মামলাকারী আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, “পরবর্তী শুনানিতে বিচারপতির কাছে ওই বিষয়ে তদন্তের অগ্রগতির জন্য আবেদন করা হবে।”
ইডি সূত্রে দাবি, সুজয়ের কণ্ঠস্বরের ফরেন্সিক রিপোর্ট আসার পরে সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত রিপোর্ট কোর্টে যথাসময়ে পেশ করা হবে। তবে কালীঘাটের কাকুর সঙ্গে কোন ‘প্রভাবশালী’র কথোপকথনের ‘ভয়েস কল রেকর্ডিং’ রয়েছে, সেই বিষয়ে মন্তব্য করেননি ইডির তদন্তকারীরা। সিবিআইকে ওই কণ্ঠস্বরের নমুনা দেওয়া হয়নি কেন? ইডির এক কর্তা বলেন, “এটি ইডি ও সিবিআইয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে কোনও মন্তব্য করা যাবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy