Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
জঙ্গির কাহিনি

প্রেসক্রিশপনে সঙ্কেত লিখে পাঠাত ডাক্তার

বস্তুত, তথ্য আদানপ্রদানের এই পদ্ধতি দেখে তাজ্জব বনে গিয়েছে এসটিএফ। গোয়েন্দা ও স্থানীয় সূত্রে খবর, হাতুড়ে চিকিৎসক হিসেবে এলাকায় বেশ নামডাক ছিল নিজামুদ্দিনের।

আব্দুল ও নিজামুদ্দিন। ফাইল চিত্র

আব্দুল ও নিজামুদ্দিন। ফাইল চিত্র

গৌর আচার্য
মারনাই শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২০
Share: Save:

ডাক্তারির ফাঁদ পেতে সংগঠনের জন্য লোক জোগাড় করত আব্দুল বারি আর নিজামুদ্দিন খান। তদন্তে নেমে এই কথা জানতে পেরেছেন এসটিএফের গোয়েন্দারা। আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য তাঁদের নজরে এসেছে। হাতে মোবাইল ফোনের মতো আধুনিক যোগাযোগের যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও হাতে লিখে কোড পাঠানোর পথ নিয়েছিল তারা। সেই কোড লেখা হত রোগীদের জন্য লেখা প্রেসক্রিপশনে। মোবাইলে যাতে ট্যাপ না করা যায়, সে জন্যই এই পথ নিয়েছিল দুই সন্দেহভাজন জেএমবি জঙ্গি বারি আর নিজামুদ্দিন, মনে করছেন গোয়েন্দারা।

বস্তুত, তথ্য আদানপ্রদানের এই পদ্ধতি দেখে তাজ্জব বনে গিয়েছে এসটিএফ। গোয়েন্দা ও স্থানীয় সূত্রে খবর, হাতুড়ে চিকিৎসক হিসেবে এলাকায় বেশ নামডাক ছিল নিজামুদ্দিনের। প্রতিদিনই তার ‘চেম্বারে’ ভিড় থাকত। আর সেই রোগীদের থেকেই নিজেদের সংগঠনের জন্য লোক বেছে নিত তারা। গোয়েন্দা সূত্রে বলা হচ্ছে, এই রোগীদের মধ্যে কমবয়সী ও দুঃস্থ পরিবারের ছেলেদের নিশানা করত নিজামুদ্দিন। প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লিখে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করার পরামর্শ লিখে দিত নিজামুদ্দিন। জানিয়ে দিত, আব্দুল বারির ল্যাবরেটরিতেই হয় ওই সব পরীক্ষা। গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, সেই প্রেসক্রিপশনেই সাঙ্কেতিক শব্দ নিজামুদ্দিন জানিয়ে দিত, যাকে পাঠাচ্ছে তিনি কতটা কাজের। সেই ‘কোড’ আব্দুল ছাড়া অন্য কারও বোঝার উপায় নেই। এরপরেই নিজামুদ্দিন সেইসব

গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, ওই রোগীরা আব্দুলের ল্যাবরেটরিতে গেলে তাদের মুঠোয় ভরার চেষ্টা শুরু করে দিত আব্দুল। তাঁদের মাসিক মোটার টাকার কাজের প্রলোভন দেখিয়ে জেএমবি সংগঠনে যোগ দেওয়ার জন্য মগজধোলাই করত আব্দুল। তার পর শুরু হত সেই রোগীদের জেহাদি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করার প্রক্রিয়া। সব শেষে আসত নাশকতামূলক কাজের ব্যাপারে মানসিক ভাবে তৈরি করার জন্য কাউন্সেলিং। এসটিএফের এক কর্তার দাবি, প্রায় তিন বছর আগে ইজাজের সঙ্গে নিজামুদ্দিন ও আব্দুলের যোগাযোগ হয়। এর পর থেকে ইজাজের নির্দেশেই তারা উত্তরবঙ্গে জেএমবি-র মডিউল তৈরির কাজ শুরু করে।

গোয়েন্দারা বলছেন, গোড়ায় বাইরে থেকে আসা জেএমবির সদস্যদের নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দিত নিজামুদ্দিন ও আব্দুল। আব্দুলের ওই ল্যাবরেটরিতেও জেএমবির সদস্যরা একাধিকবার বৈঠক করেছে। আব্দুলের বাড়ি থেকে এ দিনও একটি মোবাইল উদ্ধার হয়েছে। তার দু’টি সিমকার্ড কার নামে কেনা হয়েছে, খোঁজ করছেন গোয়েন্দারা। নিজামুদ্দিনের বাড়ি থেকে একটি ল্যাপটপ উদ্ধার হয়েছে। পাশাপাশি, আব্দুলের ল্যাবরেটরি থেকে একটি মাইক্রোস্কোপ ও গুঁড়ো পদার্থ উদ্ধার করেছে এসটিএফ। সে সব বোমা তৈরির কোনও উপকরণ কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। এক এসটিএফ কর্তার দাবি, আব্দুলের প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে বিস্ফোরক তৈরি করা হত কিনা, তা জানতেই রাসায়নিকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কাদের সঙ্গে আব্দুল ও নিজামুদ্দিনের যোগাযোগ ছিল, তা জানতে উদ্ধার হওয়া সমস্ত সামগ্রী পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Prescription JMB Quack Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy