পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ধৃত শাজাহান মিদ্যা। —নিজস্ব চিত্র।
রাজনৈতিক সংঘর্ষ ঠেকাতে পাত্রসায়র ও ইন্দাস এলাকায় অভিযুক্তদের ধরপাকড় শুরু করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে এক তৃণমূল নেতা-সহ ছ’জনকে ধরা হয়। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “পাত্রসায়র ও ইন্দাসে মারপিটের ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’দলের তরফেই অভিযোগ হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত করে বাকি অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা চলছে।”
পতাকা টাঙানো নিয়ে বচসার জেরে পাত্রসায়রের নাড়িচ্যা গ্রামে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে বিষ্ণুপুর থেকে পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূল নেতা শাজাহান মিদ্যাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। একই ঘটনায় ওই রাতেই সিপিএমের দুই কর্মীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতেরা হলেন পাণ্ডুয়া গ্রামের বাসিন্দা সিপিএম কর্মী শেখ শাজাহান ও নাড়িচ্যা গ্রামের বাসিন্দা ভঙ্গ বাউরি। তাঁদের বাড়ি থেকে ধরা হয়েছে।
শুক্রবার বিষ্ণুপুর আদালতে হাজির করানোর সময় শাজাহান অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আপাতত সেখানেই চিকিৎসাধীন ওই তৃণমূল নেতা। ধৃত দুই সিপিএম কর্মীকে এ দিন বিষ্ণুপুর আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
অন্য দিকে, ইন্দাসে সিপিএমের দিবাকরবাটি শাখা কমিটির সম্পাদক সুশান্ত দিগেরকে মারধরের অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে তৃণমূলের তিন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত তৃণমূল কর্মীরা হলেন মুকুল সাঁতরা, সুকুমার দাস ও বাদল মল্লিক। এ দিন ধৃতদের বিষ্ণুপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পাত্রসায়র থানার নাড়িচ্যা গ্রামে পতাকা টাঙানো নিয়ে দু’দলের কর্মীদের মধ্যে বচসা হয়। তারই জেরে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতা ভৈরব সাঁতরা-সহ পাঁচজন জখম হন। ভৈরববাবুকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবারও ভৈরববাবুর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁর মাথায়, মুখে ও দু’পায়ে আঘাত রয়েছে।
তৃণমূল কর্মী লালমোহন মুখোপাধ্যায় ও শেখ ভোদর বিষ্ণুপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি দু’জনকে অবশ্য প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় তৃণমূলের তরফে বিষ্ণুপুর থানার হিংজুড়ির সিপিএম নেতা অনিল পণ্ডিত-সহ ২১ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পরে সিপিএম নেতৃত্ব পাল্টা অভিযোগ তোলেন, তৃণমূলের লোকেরা তাঁদের দলের কর্মীদের উপরে আগে হামলা চালিয়েছে। সিপিএমের তরফে পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শাজাহান মিদ্যা, ভৈরব সাঁতরা-সহ ২০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনার পরেই এলাকায় পুলিশের টহলদারি শুরু হয়েছে। এ দিনও নাড়িচ্যা গ্রামে পুলিশ মোতায়েন ছিল।
এক সময় সিপিএমের দুর্গ বলে পরিচিত ছিল পাত্রসায়রের কুশদ্বীপ, জামকুড়ি, পাণ্ডুুয়া, নাড়িচ্যা এলাকা। কিন্তু গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে এলাকায় কার্যত রাজ করছে তৃণমূল। সিপিএমের পাত্রসায়র জোনাল কমিটির সম্পাদক লালমোহন গোস্বামীর বাড়ি জামকুড়ি গ্রামে। সেখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে সিপিএমের জামকুড়ি লোকাল কমিটির অফিস। দীর্ঘদিন ধরে সেই অফিসও বন্ধ। রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে সিপিএম ফের এলাকায় হারানো জমি ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর তৃণমূল এলাকায় ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে। তাই দু’দলের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়েছে। গত সোমবার প্রচারে পাণ্ডুয়ায় এসে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সুস্মিতা বাউরি তা টের পেয়েছেন। তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে শেষে মাঝপথে প্রচার বন্ধ রেখেই ফিরে যেতে হয়েছিল তাঁকে। তারপর থেকেই এলাকা ক্রমশ উত্তপ্ত। পতাকা টাঙানো নিয়ে গণ্ডগোল তারই পরিণতি বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বিনা প্ররোচনায় পরিকল্পিত ভাবে সিপিএম প্রথমে আমাদের নেতা-কর্মীদের উপরে হামলা চালিয়েছে। সেই সময় শাজাহান মিদ্যা ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। পরে তিনি আহতদের দেখতে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে গেলে সিপিএমের মিথ্যা অভিযোগে বিষ্ণুপুরের এসডিপিও তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করেন।” এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) পরাগ ঘোষ অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
সিপিএমের পাত্রসায়র জোনাল কমিটির সম্পাদক লালমোহন গোস্বামীর দাবি, “নাড়িচ্যা গ্রামে দলের কয়েকজন কর্মী পতাকা টাঙিয়েছিলেন। তৃণমূলের লোকেরা ক্রমাগত সেই পতাকা ছেঁড়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলেও ওরা পতাকা খোলার চেষ্টা চালায়। তখন আমাদের দলের কর্মীরা বাধা দিলে সংঘর্ষ হয়।” তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা এলাকায় অশান্তি তৈরির জন্যই এ সব শুরু করেছে। তিনি জানান, তৃণমূলের হামলায় দলের কর্মী মনা বাউরি, সুবল মান্ডি-সহ চারজন কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের প্রথমে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে, পরে বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy