Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

শাসানির চোটে ভোট পড়ল ৪৭ শতাংশ

শ্যামসুন্দরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৪৭ নম্বর ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরেই গাছের তলায় বসেছিলেন কিছু ভোটার। ভোট দিতে যাচ্ছেন না কেন? প্রশ্নটা শুনেই রুমা বাউরি, নরেন বাউরি, যমুনা বাউরিরা সমস্বরে বলে উঠলেন, “সকালেই একপ্রস্ত শাসিয়ে গেছে এলাকার তৃণমূল নেতা বাবলু সিংহের দলবল। বলেছে, ভোট দিতে যাওয়ার দরকার নেই। আমরাই দেব তোদের ভোট’।”

পাত্রসায়রের শ্যামদাসপুরে বুথের বাইরে জড়ো হওয়া তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা।  ছবি: শুভ্র মিত্র।

পাত্রসায়রের শ্যামদাসপুরে বুথের বাইরে জড়ো হওয়া তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। ছবি: শুভ্র মিত্র।

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০৩:২৫
Share: Save:

শ্যামদাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৪৭ নম্বর ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরেই গাছের তলায় বসেছিলেন কিছু ভোটার।

ভোট দিতে যাচ্ছেন না কেন? প্রশ্নটা শুনেই রুমা বাউরি, নরেন বাউরি, যমুনা বাউরিরা সমস্বরে বলে উঠলেন, “সকালেই একপ্রস্ত শাসিয়ে গেছে এলাকার তৃণমূল নেতা বাবলু সিংহের দলবল। বলেছে, ভোট দিতে যাওয়ার দরকার নেই। আমরাই দেব তোদের ভোট’।” আর সেই ভয়েই ভোটের জন্য বাড়ির বাইরে বেরিয়েও শেষ পর্যন্ত আর বুথমুখো হওয়ার সাহস জোটাতে পারেননি বাউরিপাড়ার ওই ভোটারেরা।

বুথে রয়েছেন ছ’জন বন্দুকধারী পুলিশকর্মী। তা হলে ভয় কীসের? “চারপাশটা তাকিয়ে দেখুন”ফিসফিস করে বলে উঠলেন এক মহিলা। ইতিউতি দেখতেই তখন চোখে পড়ল, বুথের ৫০ মিটারের মধ্যেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন কিছু যুবক। সঙ্গে মোটরবাইক। বাউরিপাড়ার এক প্রৌঢ় বললেন, “ওটাই হল তৃণমূলের বাইকবাহিনী। ওদের শাসানি আর নজরদারি এড়িয়ে আমাদের বুথে যাওয়ার জো আছে নাকি?” বাউরিপাড়া লাগোয়া ডাঙাপাড়ার কিছু বাসিন্দাও ওই বাইক-বাহিনীর ভয়ে এ দিন ভোট দিতে যাননি। তাঁদেরই এক জন, রেখা বাউরি এ দিন নিজের বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে তীব্র ক্ষোভে বললেন, “ভোটটাও দিতে যেতে দেবে না! ওদের ভয়ে অনেক পুরুষ গ্রামছাড়া।”

‘দাদা আমাদের ভোট দিতে দিচ্ছে না তৃণমূল’ বুধবার একটু বেলা বাড়তেই একাধিক ফোন আসছিল বাঁকুড়ার ওই এলাকা থেকে। সরেজমিন দেখতে দুপুর ২টো নাগাদ শ্যামসুন্দপুরের স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, পাশাপাশি দু’টি বুথ (২৪৬ ও ২৪৭)। সংবাদমাধ্যমের গাড়ি দেখেই বাইকে সওয়ার যুবকদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেল। ২৪৬-এ গিয়ে জানা গেল, ওই বুথের ভোটার সংখ্যা ৭২৫। ২টোর মধ্যেই ৪৩৫ জন ভোট দিয়েছেন। পাশের বুথেই অন্য ছবি। ৫১৩ ভোটারের মধ্যে ২টো পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ১৯৪! বুথের ভিতর শুধুই তৃণমূলের পোলিং এজেন্ট। প্রিসাইডিং অফিসার উৎপল মান বললেন, “খুবই শ্লথ গতিতে ভোট হচ্ছে। কারণটা ঠিক বুঝতে পারছি না।”

বুঝতে পারছেন না, নাকি বুঝতে চাইছেন নাতা অবশ্য বোঝা গেল না। কারণ, বাইরের ছবিটা শুনে তাঁর মন্তব্য, “বাইরে কী হচ্ছে, জানি না। ভিতরে কোথাও গণ্ডগোল নেই।”

২৪৭ নম্বর বুথে মূলত বাউরিপাড়া, ডাঙাপাড়া ও কোটালচকের ভোটার। কোটালচকের ভোটারেরা এ দিন নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছেন। যদিও বুথের বাইরে বেরিয়ে তাঁরা কোনও কথা বলতে রাজি হননি। ভোট দিতে পেরেছেন বাউরিপাড়া ও ডাঙাপাড়ার ভোটারদের একাংশও। তাহলে বাকিরা কী দোষ করল? “ওরা যে আমাদের সমর্থক! তাই বেছে বেছে ওই দুই পাড়ার সিপিএম সমর্থক পরিবারগুলিকে শাসিয়েছে বাবলু সিংহের দলবল।”অভিযোগ করছেন সিপিএমের পাত্রসায়র জোনাল কমিটির সম্পাদক লালমোহন গোস্বামী। একই সঙ্গে দাবি করলেন, কোটালচক এবং ২৪৬ নম্বর বুথের ভোটারেরা শাসকদলের সমর্থক বলেই তাঁরা এ দিন কোনও বাধা পাননি। এজেন্ট দিতে পারলেন না কেন? লালমোহনবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, “যে জায়গায় আমাদের সমর্থকদের ভোটই দিতে দিচ্ছে না তৃণমূল, সেখানে এজেন্ট বসবেন কোন সাহসে?”

তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায় এ সব বিরোধীদের ‘অপপ্রচার’ দাবি করে বলছেন, “ওদের লোক নেই তো আমরা কী করব! তা হলে আমাদেরই এখন ওদের এজেন্ট জোগাতে হয়।” আর এলাকার তৃণমূল নেতা বাবলু সিংহের দাবি, “আমরা কাউকে ভোট দিতে যেতে বাধা দিইনি। ও-সব সিপিএমের বানানো গপ্পো!”

বাম-জমানার পরে তৃণমূল জমানাতেও পাত্রসায়র সন্ত্রাস কবলিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। তবু এই বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই কেন? বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের রির্টানিং অফিসার তথা বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক পার্থ ঘোষের জবাব, “পাত্রসায়রের ৪৫% বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে।” শ্যামদাসপুর কিন্তু অন্য কথা বলছে? এ বার পার্থবাবুর মন্তব্য, “শ্যামদাসপুরে ভোট দিতে বাধা দেওয়ার কথা জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।”

খোঁজ নিলে উনি জানতে পারবেন, দিনের শেষে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের হার রেকর্ড ৮৯% ছাড়িয়েছে। আর শ্যাসুন্দরপুরের ২৪৭ নম্বর বুথে ভোট পড়েছে মাত্র ৪৭%।

অন্য বিষয়গুলি:

patrasayar swapan bandopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE