Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ভগ্নপ্রায় ঘরেই চলে বিপজ্জনক বসবাস, বেহাল পুলিশ আবাসন

মাথার উপর ছাদ থেকেও না থাকার অবস্থা সিউড়ি চাঁদমারি মাঠের পুলিশ আবাসনের বাসিন্দাদের। অভিযোগ, ভগ্নপ্রায় ওই আবাসনে কার্যত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে জীর্ণ নির্মাণগুলি। বাসিন্দাদের দাবি, বহুবার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তাদের জানিয়েও লাভ হয়নি। সদুত্তর নেই জেলা পুলিশ কর্তাদের কাছেও। পূর্ত দফতরের ‘কাজ’ বলে দায় এড়াতে চাইছেন তাঁদের কেউ কেউ।

(বাঁ দিকে) পলেস্তারা খসে পড়েছে আবাসনের ঝুলন্ত বারান্দাগুলির। একই দশা ঘরের ছাদগুলিরও (ডান দিকে)। তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

(বাঁ দিকে) পলেস্তারা খসে পড়েছে আবাসনের ঝুলন্ত বারান্দাগুলির। একই দশা ঘরের ছাদগুলিরও (ডান দিকে)। তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০১:২১
Share: Save:

মাথার উপর ছাদ থেকেও না থাকার অবস্থা সিউড়ি চাঁদমারি মাঠের পুলিশ আবাসনের বাসিন্দাদের। অভিযোগ, ভগ্নপ্রায় ওই আবাসনে কার্যত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে জীর্ণ নির্মাণগুলি। বাসিন্দাদের দাবি, বহুবার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তাদের জানিয়েও লাভ হয়নি। সদুত্তর নেই জেলা পুলিশ কর্তাদের কাছেও। পূর্ত দফতরের ‘কাজ’ বলে দায় এড়াতে চাইছেন তাঁদের কেউ কেউ।

দিন কয়েক আগে জলের দাবিতে পথে নেমে আন্দোলন করেছিলেন এই আবাসনের বাসিন্দারাই। সে সময় পরিস্থিতির সামাল দিতে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে জল-সঙ্কটের সমাধানে উদ্যোগি হয় জেলা পুলিশের কর্তারা। জেলা পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, আন্দোলনের বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি উপরমহল। এদিকে জল সংকটের থেকেও ঢের বড় সমস্যার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ওই আবাসনের বাসিন্দারা।বাসিন্দাদের একাংশের কথায়, সরাসরি এখনও আন্দোলনের পথে পা রাখেননি পুলিশ কর্মী বা তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু দিন দিন আবাসনের বেহাল পরিস্থিতিতে চাপা ক্ষোভ বাড়ছে। আবাসিকদের সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায় সে ক্ষোভ। আবাসনের অধিকাংশ ছাদের উপরের পলেস্তরা হঠাৎ হঠাৎ খুলে পড়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আবাসিকরা। কোনও কোনও ঘরের জানালার কার্নিস ভেঙে গেছে। বৃষ্টি হলে দেওয়াল চুঁয়ে জল পড়ে। ঘরে জল ঢুকে যায়। কোথাও দেওয়ালের ফাটল থেকে আগাছা জন্ম নিয়েছে।

আবাসনের মহিলা বাসিন্দাদের একটা বড় অংশেরই অভিযোগ, আবাসনের অধিকাংশ দরজা জানালার অবস্থাও ভালো নয়। আবাসনের পথ বাতিগুলি জ্বলে না। একাংশের দাবি, ঘর ভাড়া বাবদ মূল বেতনের ১৫ শতাংশ কেটে নেয় সরকার। কিন্তু আবাসনগুলি সংস্কার করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে কারও কোনও মাথা ব্যাথা নেই। আবাসিকদের অভিযোগ, “মাথায়, ভাতের থালায়, বিছানায় পলেস্তারা ছেড়ে ছেড়ে পড়ছে। ঝড় বৃষ্টির সময় যে আমাদের কি অবস্থা হয়, তা বোঝানো যাবে না। ভাঙা কার্নিস, জানলা দিয়ে জলের ঝাপটা আটকাতেই নাজেহাল হয়ে পড়ি।”

জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, ১৯৮০ সালের দিকে আবাসনগুলির নির্মাণ শুরু হয়। বছর পাঁচেকের মধ্যে নির্মাণ শেষ হলে ৮৬ সালের দিকে সরকারি নিয়ম মেনে পুলিশ কর্মীদেরকে আবাসনগুলি দেওয়া হয়। মোট ৯টি বিল্ডিং-এর মধ্যে একটি এএসআইদের জন্য, বাকি আটটি তিন তলা বিল্ডিং, কনেস্টবলদের জন্য। সেখানে মোট ৯৬টি পরিবার থাকার কথা। কিন্তু ভগ্নাদশার কারণে আবাসনের কয়েকটি ঘর ফাঁকা পড়ে আছে।

এত বছর কোনও সংস্কার হয়নি?

আবাসনেরই এক বাসিন্দা জানান, বছর পাঁচ ছয় আগে জি এবং এইচ এই ব্লক দুটিতে সামান্য মেরামতির কাজ হয়। প্রায় একই হাল এএস আইদের একতলা বিল্ডিংটিরও। এখানে চার জন এএস আই থাকেন। প্রতি মাসেই পুলিশ লাইনের এসপি অফিসে ওয়েল ফেয়ার মিটিং হয়। ওই বৈঠকে এসপি, এএসপি, ডিএসপি সহ প্রতিটি স্তরের পুলিশ কর্মীদের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন। এবং প্রায় প্রতিটি বৈঠকে আবাসনগুলির বেহাল অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার বিষয়বস্তু ডিআইজি, আইজির কাছেও পাঠানো হয়ে থাকে।

গত মাসের ৩০ তারিখেও ওয়েল ফেয়ার বৈঠক হয়। সেখানেও আবাসন গুলির ভগ্নাদশা নিয়ে একই আলোচনা হয়েছে। এবং সেই রিপোর্টও এত দিনে ডিআইজি, আইজির কাছে পৌঁছে যাওয়ার কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মী বললেন, “এই আবাসনে বাড়ির লোক শান্তিতে থাকতে পারে না। বাড়ি ফিরে সেই সমস্যার কথা শুনতে শুনতেই দিন কাটছে আমাদের। উপরমহলের কেউ বুঝতে চায় না। কিছু করারও নেই।” এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “সংস্কারের কাজ পূর্ত দফতর দেখে। ওই আবাসনে সংস্কারের কাজের জন্য পূর্ত দফতরকে বলা হবে।” অন্য দিকে, পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (নির্মাণ) দেবাশিস সরকার বলেন, “আমরা শুধু কাজ করি। আমাদেরকে জানালে এস্টিমেট দিই। জেলা পুলিশ থেকে এখনও কোনও কিছু জানানো হয়নি।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE