বোলপুরে তৃণমূল কার্যালয়ে মিছিলের প্রস্তুতি তৃণমূলের।
রাজনৈতিক দলগুলির পছন্দ মতো সবুজ, লাল কিংবা গোলাপী আবির মজুত করা হয়েছে। অসংখ্য দলীয় পতাকা লাঠিতে ভরে রাখা হয়েছে। দলীয় কার্যালয়গুলিতে রাখা হয়েছে টিভির ব্যবস্থা। টিভিতে ভোট গণনার ফলাফল দেখতে গলা যাতে শুকিয়ে না যায় সে জন্য কোথাও কোথাও জলযোগের ব্যবস্থাও পাকা।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন রাজানৈতিক শিবিরের প্রস্ততির ছবিটা অনেকটা এরকমই। তবে বিজয় উৎসবে মেতে উঠতে কোনও কোনও জেলায় যেমন সবুজ মিষ্টির অর্ডার দেওয়া হয়েছে, কিংবা কেজি কেজি লাড্ডু বা শয়ে শয়ে পদ্ম ফুলের অর্ডার দেওয়া হয়েছে, কিংবা ব্যান্ডপার্টি বা ঢাকঢোলের আয়োজন করা হয়েছে ভোটের ফলাফালের প্রস্তুতিতে অন্য জেলার মতো সেই আবেগ অবশ্য বীরভূমে চোখে পড়ল না। বরং শাসকদল তৃণমূল বা বিরোধী সিপিএমের নেতাকর্মীরা বলছেন যা হবে ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পরই। সেটাও অবশ্যই দলীয় নির্দেশ মেনে। তার মধ্যেই কিছুটা খোলামেলা বিজেপি। বিজেপি সূত্রের খবর, নিশ্চিত না হয়ে আগে থেকে বিজয় উৎসবের প্রস্তুতিতে গা ভাসানোর কোনও মানে নেই।
ফলাফল প্রকাশের প্রাক্কালে রাজনৈতিক দলগুলির আবেগ না দেখানোর অন্য কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারীরা। কী সেই কারণ? রাজনীতির কারবারীদের মতে, জেলার দু’টি লোকসভা কেন্দ্র বোলপুর ও বীরভূমে কে জয়ী হবেন সে ব্যাপারে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত নয় কোনও রাজনৈতিক দলই। বিশেষে করে বীরভূম কেন্দ্রটি নিয়ে দোলাচল সবচেয়ে বেশি। তার অন্যতম প্রধান কারণ বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের প্রবলপ্রতাপ সত্ত্বেও বীরভূম কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়। সেখানে এ বার পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভা সব স্তরেই তৃণমূলের এমন রমরমা বাজার ও গত পাঁচ বছর ধরে এলাকায় উন্নয়নের কাজ করার পর সেই ভোট মার্জিন বেড়ে যাওয়াই কথা। কিন্তু সেটা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বুকঠুকে বলতে পারছেন কই।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা সকলেই মুখে বলছেন, শতাব্দীই জয়ী হবেন। কিন্তু আড়ালে তাঁরা নানা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। অঙ্ক কষে চলেছেন। সেই আশঙ্কার কেন্দ্রে অবশ্যই বিজেপি হাওয়া। নেতাকর্মীদের অনেকেই বলছেন, মূলত চারটি কারণের জন্য এ বার জয়ের ব্যাপারে বা জয়ের মার্জিন বাড়ানোর ব্যাপারে সংশয় রয়েছে। প্রথমত নির্বাচনের চার সপ্তাহ আগে থেকে প্রবল বিজেপি হাওয়ায় এ বার এই কেন্দ্রের প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচুর ভোট পেয়ে থাকতে পারেন। দুই শতাব্দীকে নিয়ে প্রচারের প্রথম দিকে দলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’র জন্য যতটা শক্তি দিয়ে ঝাঁপানো উচিত ছিল ততটা শক্তি দিয়ে ঝাঁপাননি দলের নেতা কর্মীরা। তিন গতবারে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছিল। এ বার সেটা না হওয়ায় একটা অংশের ভোট তৃণমূল থেকে বাদ চলে যাওয়া। এবং সর্বোপরি শেষের দিকে ‘গোষ্ঠী কোন্দলের’ বিষয়টি বালি চাপা দেওয়ার চেষ্টা হলেও দলের বিভিন্ন গোষ্ঠী তৃণমূল বিরোধী ভোট করেছে বা ক্রস ভোটিং করেছে। যা মূলত বিজেপি এবং কিছু অংশ তৃণমূলে গিয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। শেষের এই কারণটাই বেশি ভাবাচ্ছে দলের শীর্ষ নেতাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলছেন, “সিউড়ি ১, দুবরাজপুর ও খয়রাশোলে ক্রস ভোটিং কতটা ধস নামিয়েছে সেটা নির্বাচনের ফল প্রকাশের আগে বলা যাচ্ছে না।” অন্য দিকে, সিপিএম বলছে গত বারের হাতছাড়া হওয়া লোকসভা কেন্দ্রটি এ বার তাঁদের দখলেই থাকবে। কিন্তু সিপিএম নেতারাও চিন্তিত জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট পাওয়ার পরিমাণ নিয়ে। সিপিএমের অন্দরের সমীক্ষা, যে পরিমাণ ভোট বিজেপি পাবে তার কত অংশ তৃণমূলের আর কত অংশ সিপিএমের গেল সেটাই চিন্তার অন্যতম প্রধান বিষয়। আর বিজেপি শিবির বলছে, গত বরে যে পরিমাণ ভোট বিজেপি পেয়েছিল তার আট-দশ গুণ ভোট পেলে তবেই জয়ের আশা করা যেতে পারে।
সারি সারি ঘরবন্দি ইভিএম। পাহারায় জওয়ান। সিউড়িতে।
তাই ফল বেরনোর আগে উচ্ছ্বাসের কোনও জায়গা নেই বলে জানাচ্ছেন বিজেপির জেলা নেতারা। নেতারা মুখে যাই বলুন না কেন, বিজেপির কর্মী সমর্থকেরা অবশ্য একটু অন্যরকম প্রস্তুতি নিয়েছেন। জেলায় দলীয় প্রার্থী জয়ী হোক বা না হোক কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী আসছেন ধরে নিয়ে হোমযজ্ঞের আয়োজন করেছেন কর্মীরা। রামপুরহাট পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কর্মীরা জানালেন, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থলে ধর্মরাজ মন্দির প্রাঙ্গণে আদ শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে হোমযজ্ঞ শুরু হবে। প্রস্তুতির মধ্যে থাকছে গেরুয়া আবির, আতসবাজি, আছে মোদী চা-লাড্ডু। ইতিমধ্যে ৭৫ কেজি আবির কেনা হয়েছে।
বীরভূম কেন্দ্রের কোন দল জিতবে তা নিয়ে নিশ্চিত কোনও ইঙ্গিত দিতে না পারলেও বোলপুর কেন্দ্রে অবশ্য তাদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী শাসকদল তৃণমূল।শাসকদেলের জেলার শীর্ষ নেতৃত্বের কথায়, “এই কেন্দ্রে যথাযথ ভোট করানো গিয়েছে।” যদিও গতবারে যে বিপুল পরিমাণ ভোটে সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম জয়ী হয়ছিলেন জোট সঙ্গী কংগ্রেস না থাকার পরও সেই ভোট মেকআপ করে জয় পাওয়া তৃণমূলের পক্ষে সহজ হবে না বলেই মনে করছে সিপিএম। সিপিএম-সহ বিরোধী দলগুলির অভিযোগ ছিল, ওই কেন্দ্রের বহু বুথে সন্ত্রাস চালিয়ে, রিগিং করে ভোট করিয়েছে তৃণমূল। রিগিং টপকে জেতার ব্যাপারে সিপিএম জয়ের স্বপ্ন দেখলেও সেটা বাস্তবায়িত হয় কি না আজই সেটা জানা যাবে। এই কেন্দ্রে শাসকদলের নেতারা অবশ্য বলছেন, “ঠিক দোলাচল নয়। দলীয় নির্দেশ মেনেই দেখনদারি থেকে দূরে থাকছি আমরা। আবির আনা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বাজিপটকা আনা হয়েছে। বিজয় উৎসব করার অনুমতি না পেলে তা করা হবে না। তবে ফল প্রকাশের পর উচ্ছ্বাস অবশ্য গোপন থাকবে না।”
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy