সারের গাড়ি আটকে রেখেছেন গ্রামবাসী।—নিজস্ব চিত্র।
গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে চাষিদের বিনামূল্যে সার দেওয়ার কথা ছিল। সেই সারই স্থানীয় এক দোকান থেকে পাচার করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। তৃণমূলের স্থানীয় কিছু নেতা এই পাচার কাণ্ডে জড়িত, এই অভিযোগ তুলে সার ভর্তি সেই গাড়ি আটকে দিলেন তৃণমূলের কর্মীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুঞ্চার বামুনপাড়া গ্রামের ঘটনা। গোলমালের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও কৃষি দফতরের আধিকারিকরা উপস্থিত হন।
বামুনপাড়ার বাসিন্দা তথা তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের প্রাক্তন ব্লক সহ-সভাপতি আজিজুল আনসারি ও তৃণমূল কর্মী হীরালাল বাউরি-র জানান, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ তাঁরা দেখেন স্থানীয় সার ও বীজ ব্যবসায়ী উজ্জ্বল মাঝির দোকানের সামনে একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভিতরের গুদাম থেকে সারের বস্তা নিয়ে এসে ওই গাড়িতে তোলা হচ্ছে। তাঁদের দাবি, “ওই সার কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাওয়া হলে উজ্জ্বলবাবু সদুত্তর দিতে পারেননি। আমরা বুঝে যাই পাচার করা হচ্ছে।” এরপরেই খবর পেয়ে তৃণমূলের কিছু কর্মী ও বাসিন্দারা ওই গাড়ি আটকে রাখেন।
দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল একটি পিকআপ ভ্যানে কিছু সার ভর্তি বস্তা চাপানো রয়েছে। ওই গাড়িকে ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। ব্যবসায়ী উজ্বল মাঝির কাছে বস্তাগুলি কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি দাবি করেন, “এলাকার কয়েকজন চাষি আমাকে ওই সারের বস্তা দিয়েছিলেন। এগুলি বাঁকুড়ার হাতিরামপুরে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলাম।” উপস্থিত জনতা তা শুনে রে রে করে ওঠেন। তখন উজ্জ্বলবাবু দাবি করেন, তৃণমূলের স্থানীয় কিছু নেতা সারের বস্তা তাঁকে রাখতে দিয়েছিলেন। তবে সেই নেতাদের নাম তিনি প্রকাশ করতে চাননি।
মানবাজার ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, এলাকার চাষিদের ধান, গম ও আলু প্রভৃতি ফসলের চাষের জন্য ওই সার পাঠানো হয়েছিল। সে জন্য স্থানীয় বারমেশিয়া-রামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতকে দু’সপ্তাহ আগে ৩০০ বস্তা সার ও বিভিন্ন ফসলের মিনিকীট দেওয়া হয়েছিল। মানবাজারের ব্লক কৃষি আধিকারিক শান্তিগোপাল কর্মকার ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি বস্তাগুলি যাচাই করে বলেন, “মোট ৪৯টি সারের বস্তা রয়েছে। এ গুলি চাষিদের বিনামূল্যে দেওয়ার কথা ছিল। তার পরিবর্তে এখানে কী করে এল আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি।” যদিও স্থানীয় বাসিন্দা তথা তৃণমূল কর্মী বিকাশ রায়, পিন্টু রায়দের অভিযোগ, “দলেরই কিছু নেতা চাষিদের এই সার না দিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করে মুনাফা লুটতে চেয়েছিলেন। তাঁরাই পাচার করছিলেন।”
মানবাজারের বিডিও সায়ক দেব বলেন, “চাষিদের জন্য বরাদ্দ করা সার কী ভাবে ওই দোকানে গেল প্রধানের কাছে তার জবাব চাওয়া হচ্ছে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ঘটনাস্থলে ছিলেন বারমেশিয়া-রামনগর পঞ্চায়তের উপপ্রধান মহেশ্বর হাঁসদা। তিনি বলেন, “আমাদের পঞ্চায়েতে গুদাম নেই। পঞ্চায়েতের মালপত্র অনেক সময় কমিউনিটি হলেও রাখতে হয়। তবে সারের বস্তা কোথায় রাখা হয়েছিল আমার জানা নেই।” পঞ্চায়েত প্রধান সুচিত্রা সর্দারের ফোন বেজে গেলেও তিনি তা তোলেন নি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।
ঘটনার জের এ দিন সন্ধ্যা অবধি গড়ায়। বিডিও সায়ক দেব বলেন, “প্রধান আমাদের ফোনও তোলেন নি। এমন কী আমি ডেকে পাঠালেও তিনি আসেন নি। ব্লক কৃষি আধিকারিক আমাকে জানিয়েছেন, খোলা বাজারে এই সার বিক্রি হওয়ার কথা নয়। বস্তাগুলি বাজেয়াপ্ত করে থানায় রাখতে বলেছি। পুলিশ এবং কৃষি দফতর আলাদা ভাবে এই ঘটনার তদন্ত করবে।”
সার পাচার-কাণ্ডে দলের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় তৃণমূল নেতৃত্ব স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন। দলের মানবাজার ব্লক নেতা দেবেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, “এই ঘটনায় দলের কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় ভাবে ব্যবস্থা নেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy