Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

বিদ্যাপীঠের প্রতিমা তৈরি করেছিলেন শিল্পী

সময়টা ১৯৬২ সাল। পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক স্বামী যুক্তানন্দ এক দিন প্রখ্যাত অধ্যাপক ভাস্কর সুনীল পালকে বলেছিলেন, ‘‘আপনি তো পাল বংশের বিখ্যাত ভাস্কর। মা কালীর একটা মূর্তি গড়ুন না। বিদ্যাপীঠে কালীপুজো হবে।’’

রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের প্রতিমা।

রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের প্রতিমা।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৫ ০১:১৯
Share: Save:

সময়টা ১৯৬২ সাল। পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক স্বামী যুক্তানন্দ এক দিন প্রখ্যাত অধ্যাপক ভাস্কর সুনীল পালকে বলেছিলেন, ‘‘আপনি তো পাল বংশের বিখ্যাত ভাস্কর। মা কালীর একটা মূর্তি গড়ুন না। বিদ্যাপীঠে কালীপুজো হবে।’’ এই শিল্পী সে সময় কলকাতা থেকে নিয়মিত পুরুলিয়ায় আসতেন। নিয়মিত অর্থে সপ্তাহান্তে ও ছুটির দিনগুলিতে। বিদ্যাপীঠের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য সৌন্দর্যের দিকগুলি তখন তিনিই দেখভাল করছিলেন।

১৯৫৬ সালে বিহার থেকে মানভূমের খণ্ডিত অংশ ‘পুরুলিয়া’ জেলা নাম নিয়ে বাংলার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের অনুরোধে বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ রাজি হয়েছিলেন পুরুলিয়ায় একটি আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে তুলতে। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৫৭ সালে পুরুলিয়া শহর ছাড়িয়ে পুরুলিয়া-বরাকর রোডের ধারে যাত্রা শুরু করেছিল পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ।

পুরুলিয়ায় যখন বিদ্যাপীঠের পঠন পাঠন শুরু হয় তখন পুরুলিয়ার এই বিদ্যাপীঠ দেওঘর বিদ্যাপীঠের শাখা হিসেবেই শুরু হয়েছিল। অধ্যক্ষের দায়িত্বভার ন্যস্ত হয়েছিল দেওঘর বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষ স্বামী হিরন্ময়ানন্দের হাতেই। বিদ্যাপীঠে কিন্তু তখন কালীপুজো হত না। সে সময় দেওঘরে কালীপুজো ও পুরুলিয়ায় জগদ্ধাত্রী পুজো হতো। বিদ্যাপীঠের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক স্বামী যুক্তানন্দ ও অধ্যক্ষ স্বামী হিরন্ময়ানন্দের অনুরোধে ওই ভাস্কর মা কালীর মূর্তি গড়লেন। শুরু হল বিদ্যাপীঠের কালীপুজো।

কেন বিদ্যাপীঠে কালীপুজোর প্রবর্তন হয়েছিল? বিদ্যাপীঠের কালীপুজো দেখাশোনার সঙ্গে ভীষণ ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন শিক্ষক শক্তিপ্রসাদ মিশ্র। তাঁর কথায়, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দের প্রিয় বাণী— শক্তিই জীবন, দুবর্লতাই মৃত্যু। আদতে আমরা সকলেই শক্তির পূজারি। শক্তিহীন ব্যক্তি বা জাতি তো মৃততুল্য। এ দেশে দুর্গাপুজো বা কালীপুজো শক্তিরই আরাধনা। উদ্দেশ্য আত্মশক্তির উদ্বোধন।’’ তাঁর কথায়, সাধক রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত প্রমুখ কালীকে স্নিগ্ধ মাতৃমূর্তিতে গ্রহণ করলেও তাঁদের কোনও কোনও গানে মা কালী ভীষণা ও ভয়ঙ্করী রূপেও চিত্রিত হয়েছেন। কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ মা কালীকে শক্তি ও কর্মপ্রেরণার অধিষ্ঠাত্রী দেবী রূপে আরাধনা করেছেন। মা কালীর মাতৃভাব তিনি অক্ষুন্ন রেখেছেন। মাতৃভাবের প্রকাশ কেবল স্নেহ চুম্বন ও আদরে ভরিয়ে দেওয়াই নয়, সন্তানকে রক্ষা করতে হলে মাকে রুদ্রমূর্তিও ধারণ করতে হয়। দুর্বল মায়ের দুর্বল সন্তান কৃপার পাত্র হয়। স্বামীজির দৃষ্টিতে মাতৃশক্তি শৌর্য, বীর্য, দুর্দমনীয় শক্তি মূর্তিতে প্রকাশিত।

পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের কালীপুজো স্বামীজির কালীতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকেই। ১৯৬২ সালে বিদ্যাপীঠে মহাধুমধামের সঙ্গে পুজো হয়েছিল। এখন যে মন্দিরে পুজো হয় তখন অবশ্য এই মন্দির ছিল না। পরবর্তী কালে এই মন্দির গড়ে উঠেছে। সে সময় আজ যেখানে ছাত্রাবাসের স্টাডি হল, সেখানে পুজো হতো। প্রবীণ শিক্ষকরা জানান, তখন ছাত্রেরাই বাজি ফাটাত। এখনও ছাত্রেরা পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy