Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
১০০ দিন কাজের প্রকল্প

পঞ্চমীতেও মিলল না বকেয়া মজুরি

পঞ্চমীর মধ্যে বকেয়া মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। অথচ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকা না পাওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে জেলার একশো দিন প্রকল্পের শ্রমিকদের মধ্যে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই জেলার বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতে কোথাও তালা ঝুলিয়ে, কোথাও ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শ্রমিকরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৩০
Share: Save:

পঞ্চমীর মধ্যে বকেয়া মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। অথচ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকা না পাওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে জেলার একশো দিন প্রকল্পের শ্রমিকদের মধ্যে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই জেলার বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতে কোথাও তালা ঝুলিয়ে, কোথাও ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শ্রমিকরা। তাঁদের দাবি ছিল, মাস খানেক আগে কাজ করেও মজুরি মেলেনি। পুজোর আগেই বকেয়া টাকা দিতে হবে। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা বিক্ষোভকারীদের দাবি মানা হবে বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। অথচ টাকা এখনও আসেনি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গত মাসেই কেন্দ্র রাজ্যকে প্রায় ৯৮০ কোটি টাকা একশো দিন প্রকল্পের কাজের জন্য দিয়েছে। তবে পুরনো নিয়মে শ্রমিকদের টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন করেছে কেন্দ্র। নতুন এই পদ্ধতিতে অনলাইনে ফান্ড ট্রান্সফার অর্ডার (এফটিও)-এর মাধ্যমে সরাসরি রাজ্যের অ্যাকাউন্ট থেকে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে আসার কথা। আগে এই টাকা রাজ্য থেকে জেলায় যেত। জেলা থেকে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে টাকা পাঠানো হত। পঞ্চায়েত থেকে চেক বা ড্রাফটের মাধ্যমে শ্রমিকদের টাকা মেটানো হত। এই পদ্ধতিতে একাধিকবার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বহু ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের কাছ থেকে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের বিরুদ্ধে।

জেলা প্রশাসনের এক আধকারিকের কথায়, “দুর্নীতি রুখতেই এফটিও পদ্ধতি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। অন্য রাজ্যে অনেক আগে থেকেই এই পদ্ধতি চালু হয়েছে। এ বার পশ্চিমবাংলার জন্যেও এই পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত অগস্ট মাস থেকেই এফটিও পদ্ধতিতে মজুরি দেওয়া এখানে চালু করা হয়েছে। তবে বহু শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকায় সবাইকে এফটিও পদ্ধতিতে টাকা দেওয়া যাচ্ছে না।” তিনি জানান, ওই শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এখনও পুরনো পদ্ধতিই চালু রয়েছে। তবে দ্রুত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলানোর উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। যাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাঁদের জন্য এফটিও পদ্ধতিতে টাকার আবেদন করা হয়েছে।

একশো দিন প্রকল্পের জেলা দফতর সূত্রে খবর, জেলা থেকে কয়েক হাজার শ্রমিকের প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা মজুরি এফটিও পদ্ধতিতে দেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা মজুরি বকেয়া রয়েছে এই জেলায়। জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “এফটিও পদ্ধতিতে কিছু প্রক্রিয়াগত সমস্যার জন্যই টাকা ঢুকছে না। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। পুরোটাই হচ্ছে রাজ্যস্তর থেকে। জেলার শ্রমিককেরা যাতে দ্রুত টাকা পায় আমরা তার আবেদন জানিয়েছি।” এই ঘটনার জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশ। তাঁদের কথায়, রাজ্যে প্রায় এক কোটির বেশি শ্রমিক রয়েছে একশো দিনের প্রকল্পে। একটি ব্যাঙ্ক থেকে সবাইকে টাকা পাঠাতে গিয়েই দেরি হচ্ছে। ব্যাঙ্কের পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যাও রয়েছে।

এ দিকে শ্রমিকদের টাকা মেটাতে না পেরে জনরোষের মুখে পড়ছেন পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিরা। ছাতনা ব্লকের শালডিহা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান টেলু কর বলেন, “কিছুদিন আগেই আমার গ্রাম পঞ্চায়েত ঘেরাও করে টাকা মেটানোর দাবি তুলেছিল শ্রমিকেরা। প্রশাসন পঞ্চমীর দিন টাকা মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু কেউ টাকা পায়নি।” তিনি জানান, এক মাস আগে শ্রমিকদের এফটিও করে টাকার আবেদন করেছে পঞ্চায়েত। কিন্তু টাকা ঢোকেনি। এতে রাস্তা ঘাটে বের হলেই শ্রমিকেরা চেপে ধরছেন জনপ্রতিনিধিদের। তাঁর অভিযোগ, “প্রশাসনিক আধিকারিকরা ঠান্ডা ঘরে বসে রয়েছেন। আর শ্রমিকদের রোষের মুখে আমাদের পড়তে হচ্ছে! প্রশাসনিক গাফিলতিতেই শ্রমিকেরা টাকা পাচ্ছেন না।”

এই গ্রাম পঞ্চায়েতের ছাতাপাথর এলাকার বাসিন্দা শান্তি রায়, শক্তিপদ রায়, যমুনা বাউরি বলেন, “প্রায় তিন মাস কাজ করে টাকা পাইনি আমরা। দিনমজুরি ছাড়া আমাদের আর কোনও কাজ নেই। হাতে টাকা না থাকায় পুজোর কেনাকাটা কিছুই হল না এ বছর।” যদিও পুজোর আগে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি মেটাতে জেলা এনআরইজিএস দফতর থেকে রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন জেলার একশো দিন কাজের প্রকল্পের জেলা আধিকারিক বাবুলাল মাহাতো।

অন্য বিষয়গুলি:

bankura 100 day's work wages
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy