সাড়ে চার ঘণ্টার বেশি ছাত্রদের হাতে টিচার ইনচার্জ ও শিক্ষকরা তালাবন্দি থাকার পরেও হুড়ার লালপুর মহাত্মা গাঁধী কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন নিয়মের বাইরে গিয়ে তাঁদের পক্ষে বাড়তি পড়ুয়া ভর্তি করা সম্ভব নয়।
প্রথম বর্ষে প্রায় ১০০ জন বাড়তি ছাত্রছাত্রীকে ভর্তির দাবিতে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কলেজের ভিতরে টিচার ইনচার্জ কিঙ্করকুমার ঘোষ-সহ কয়েকজন শিক্ষককে তালা দিয়ে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখায় টিএমসিপি। রাতেই কলেজে এসে আলোচনায় বসেন পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা নরেন চক্রবর্তী। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “আমরা পরিষ্কার ভাবে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে ভর্তির বিষয়টি বিধি মোতাবেকই হবে। তা ছাড়া মেধা তালিকার বাইরে গিয়ে আমরা ভর্তি করতে পারব না। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করার সময়ে তাঁদের এ কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার স্নাতক স্তরে প্রথম বর্ষে ছাত্র ভর্তি করা হবে শুনে সকাল থেকে কলেজে শুধু স্থানীয়রাই নয় জেলার বিভিন্ন প্রান্তের আবেদনকারীরা জড়ো হন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার মুখে অনেকে বুঝে যান এখানে তাঁদের ভর্তির সম্ভাবনা নেই। আবেদনকারী ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কিছু বহিরাগত লোকজন টিচার ইনচার্জের কাছে গিয়ে ভর্তি করার দাবি জানাতে থাকেন। বিকেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানিয়ে দেন, সিধো কানহো বীরসা বিশ্ববিদ্যালয় যে বাড়তি ১০০ আসন দিয়েছে তা ভর্তি হয়ে গিয়েছে। ফলে বাড়তি আর একজনকেও ভর্তি করা সম্ভব নয়। এরপরেই উত্তেজনা চরমে ওঠে। ছাত্র সংসদের ক্ষমতাসীন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে টিচার ইনচার্জের চেম্বারের বাইরের দরজায় তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। আটকে পড়েন টিচার ইনচার্জ-সহ কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী।
এ দিন টিটার ইনচার্জ বলেন, “বুধবার অনেক রাতে ছাড়া পেয়েছি। বাড়ির লোকজন বারবার ফোন করছিলেন। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আটকে ছিলাম। কলেজের নৈশ প্রহরীর মাধ্যমে জানালা দিয়ে চা, জল আনাতে হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের মধ্যে সকলেই যে ছাত্র তা নয়, তাঁদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন বহিরাগতও ছিল। কয়েকজন নেশাগ্রস্ত অবস্থাতেও ছিল। তবে তাঁদের চেনা যায়নি। তিনি বলেন, “বারবার বলছিলাম আমাদের কিছুই করার নেই। তবু তাঁরা আমাদের কথা শুনতে চাইছিলেন না। আমাদের তালাবন্ধ করে রাখা হল। বাধ্য হয়ে কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি ও পুলিশকে ফোন করতে হয়।”
কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি বলেন, “আমি গিয়ে দেখি দরজায় তালাবন্ধ। ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি করার জন্য দাবি তুলছিলেন। আমি বহিরাগতদের সেখান থেকে চলে যেতে বলায় ভিড় কিছুটা কমে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। পরে শিক্ষকদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
এই ঘটনার পরে টিএমসিপি নেতৃত্ব কিছুটা নরম হয়েছেন। কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিত্ মাহাতো জানিয়েছেন, ভর্তির ব্যাপার নিয়ে তাঁরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন। জেলা টিএমসিপি সভাপতি নিরঞ্জন মাহাতো বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান সবাই যাতে শিক্ষার সুযোগ পান। সে কথাই কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। তবে যাই হোক, যাঁরা সুযোগ পাননি, তাঁরা যাতে জেলার অন্য কলেজে ভর্তি হতে পারেন সেই চেষ্টা করব। তাঁর অভিযোগ, পাঁচজনকে নিয়ম ভেঙে কলেজে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছেন। পরিচালন সমিতির সভাপতি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় যদি আসন বাড়ায় তাহলে মেধা তালিকার ভিত্তিতেই ভর্তি করা হবে। যাঁরা আন্দোলন করছেন আসন বাড়ালে তাঁরাই যে ভর্তি হতে পারবেন তা কিন্তু নয়।” এ দিন অবশ্য কলেজের পঠনপাঠন স্বাভাবিক ছিল।
বাঁকুড়ার ইঁদপুর ব্লকের শালডিহা কলেজেও ছাত্র ভর্তি নিয়ে সম্প্রতি দু’বার টিএমসিপি-র স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কলেজে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ উঠেছিল। কলেজ সূত্রের খবর, টিএমসিপি-র আন্দোলনের জেরে টিচার ইনচার্জ প্রথম বর্ষে পাস কোর্সে আরও ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি নেওয়ার জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মতি আসায় আবেদনপত্র জমা দিয়েও ভর্তি না হতে পারা ওই ছাত্রছাত্রীদের বৃহস্পতিবার কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তি করেন।
মূলত তাঁদের ভর্তির দাবিতেই টিএমসিপি আন্দোলন করছিল। গত ৩০ জুলাই ওই কলেজের টিচার ইনচার্জ মানিকলাল দাস ছাত্র ভর্তিকে কেন্দ্র করে তাঁকে শাসানি ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। টিএমসিপি-র ব্লক সভাপতি আনন্দ পণ্ডা-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। একই দাবিতে কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ পণ্ডার নেতৃত্বে ছাত্রছাত্রীরা গত ৪ অগষ্ট ফের টিচার ইনচার্জকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। এ দিন ছাত্রভর্তির পরে টিএমসিপি-র ইঁদপুর ব্লক সভাপতি দাবি করেন, “ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থেই আন্দোলন করেছিলাম। ওঁদের ভর্তি করতে পারায় আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা প্রমাণিত হল।” তাঁর দাবি, মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। টিচার ইনচার্জ জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় বাড়তি ছাত্র ভর্তির অনুমোদন দেওয়ায় কলেজে ভর্তির সমস্যা অনেকটাই মিটে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy