বিয়ের তিন মাস পরই স্বামীর সংসার ছেড়ে বাপের বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন সদ্য ১৮ বছরে পা দেওয়া তরুণী বধূ। সম্পর্কের টানাপড়েনের শুরু তখন থেকেই। শেষ পর্যন্ত বিবাহ-বিচ্ছেদের পথে এগোয় দুই পরিবারই। জেলার মহিলা সুরক্ষা আধিকারিকের দফতরে হলফনামা দিয়ে সম্পর্ক ভেঙে ফেলার কথাও ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল। সেই মতো বিয়ের দানসামগ্রী কনেপক্ষকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বস্তাবন্দি করে মহিলা সুরক্ষা আধিকারিকের দফতরে হাজির পাত্রপক্ষ। এমন সময় স্বামী দাবি করলেন, বিয়েতে কনেকে দেওয়া লোহার নোয়া ফেরত দিতে হবে। সেই নোয়া খুলতে গিয়েই মতি বদলে গেল তরুণীর। বিবাহ-বিচ্ছেদ বাতিল করে ফের স্বামীর হাত ধরে শ্বশুরবাড়ি ফিরলেন ওই বধূ।
সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনার সাক্ষী থাকল বাঁকুড়া জেলা মহিলা সুরক্ষা আধিকারিকের দফতর। ২০১২ সালে তালড্যাংরা থানার পারিরডিহি গ্রামের ঝুমা গরাইয়ের সঙ্গে সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়েছিল ওন্দার কাটাবাড়ি এলাকার যুবক বাপি গরাইয়ের। কিন্তু, বিয়ের পর থেকেই সদ্য সাবালিকা হওয়া ঝুমার পক্ষে শ্বশুরবাড়িতে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছিল। বিয়ের তিন মাসের মাথায় বাপের বাড়ি চলে যান ঝুমা। তার পর আর ফেরেননি। কয়েক মাসের মধ্যেই ঝুমার পরিবারের লোকজন বিয়ে ভেঙে দেওয়ার দাবি তুলতে থাকেন। তাঁরা প্রথমটায় গররাজি হওয়ায় ঝুমার বাড়ির লোকজন এলাকার রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে তাঁদের বাড়িতে হুমকি দেয় ও মারধর করে বলে অভিযোগ বাপির পরিবারের। এই ঘটনার পরে বাঁকুড়া আদালতের আইনজীবী মহিউদ্দিন আহমেদের পরামর্শে জেলা মহিলা সুরক্ষা আধিকারিক অপর্ণা দত্তের দ্বারস্থ হয় বাপির পরিবার। অপর্ণাদেবী জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরে প্রায় দেড় বছর ধরে ঝুমা ও বাপিকে কখনও এক সঙ্গে, কখনও আলাদা আলাদা ভাবে ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর উদ্দেশ্যে কাউন্সেলিং করা হয়। কিন্তু, কোনও পক্ষেই বরফ গলেনি। ঝুমা শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যেতে রাজি হননি। বাপিরও বেশ কিছু অভিযোগ ছিল ঝুমার বিরুদ্ধে।
শেষে এ বছর ১১ জুলাই দু’পক্ষই বিবাহ-বিচ্ছেদের দাবি জানিয়ে হাজির হয় অপর্ণাদেবীর দফতরে। বিয়েতে দেওয়া দান সামগ্রী ফিরিয়ে দিতে হবে বলে আগেই দাবি তুলেছিল ঝুমার পরিবার। সেই মতো বস্তাবন্দি করে সেই সব সামগ্রীও নিয়ে যান বাপিরা। অপর্ণাদেবীর কাছে বিবাহ-বিচ্ছেদ চেয়ে হলফনামা দেওয়ার পরে বাপি ঝুমাকে বিয়েতে দেওয়া লোহার নোয়া খুলে দিতে বলেন। ঝুমা সেই নোয়া খুলতে দফতরের বাইরে বেরিয়েও আসেন। তাঁর বাবা ত্রিলোচন গরাই মেয়ের হাত থেকে নোয়া খুলেও দেন, কিন্তু তার পরেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন ঝুমা।
এত দিন যাঁকে বারবার বুঝিয়েও এই সম্পর্কে ফিরে যেতে রাজি করানো যায়নি, তাঁকে একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে এ ভাবে কাঁদতে দেখে বিস্মিত হয়ে পড়েন অপর্ণাদেবী ও উপস্থিত আইনজীবী মহিউদ্দিন আহমেদ। বাপিকে ছেড়ে আর বাপের বাড়ি যাবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দেন ঝুমা। তাঁর এই সিদ্ধান্তে রীতিমতো চটে গিয়ে ওই দফতরেই ঝুমাকে ফেলে রেখে বাড়ি চলে যান ঝুমার পরিবারের লোকজন। বাপির মুখে তখন হাসি ক্রমেই চওড়া হচ্ছে। স্ত্রীকে (এবং দানসামগ্রীও) ফিরিয়ে নিয়ে যান বাড়িতে। ১৫ দিন পরে ফের ঝুমা ও বাপিকে ফের তাঁর সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দেন অপর্ণাদেবী। সেই মতো শুক্রবার তাঁর দফতরে এসেছিলেন ওই দম্পতি। এই ১৫ দিনে অবশ্য ঝুমার বাপের বাড়ির লোকেরা তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করেননি। ঝুমার অবশ্য সে নিয়ে আর তেমন আক্ষেপ নেই। স্বামীর সঙ্গে সুখেই সংসার করছেন এই তরুণী।
কিন্তু, হঠাৎ কেন মত বদল?
ঝুমার কথায়, “লোহার নোয়াটা খুলতে গিয়েই মনটা কেমন হয়ে গেল। বিয়ের সম্পর্ক ভাঙা যে খুব কঠিন, সেটা তখনই বুঝতে পারলাম।” পেশায় দিনমজুর বাপি বলেন, “সব সংসারেই অল্পবিস্তর ঝগড়া হয়। কিছু রাজনৈতিক লোক নিজেদের স্বার্থে আমাদের মধ্যে নাক গলিয়ে ঝামেলা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। বৌকে ফিরে পাব, এই আশাও মন থেকে মুছে ফেলেছিলাম। কিন্তু শেষে সব ঠিক হয়ে গেল।” অপর্ণাদেবীর বক্তব্য, ঝুমা ও বাপির মধ্যে বয়সের ব্যবধান একটু বেশি, তাই একে অপরকে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল, এই কারনেই শুরুতেই ওরা খেই হারিয়ে ফেলেছিল, শেষ ভাল তার সব ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy