কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে একটি নির্মিয়মাণ গ্রামীণ হাটশেড তৈরি আটকে দিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ। এরই পাশাপাশি কাজ বন্ধে নেতৃত্ব দিতে আসা লোকজনের বিরুদ্ধে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির এক মহিলা সদস্য ও তাঁর স্বামীকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করার অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানা এবং বিডিও’র কাছে। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটে দুবরাজপুরের বালিজুড়ি গ্রামে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুবরাজপুরের বালিজুড়ি পঞ্চায়েত এলাকার বালিজুড়ি গ্রামে ধর্মরাজ মন্দির লাগোয়া একটি গ্রামীণ হাটশেড তৈরি শুরু হয়েছে মাছ ছ’য়েক আগে। ‘আইএসজিপি’ প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা ব্যায়ে ওই হাটশেডটি-র ঢালাই হওয়ার মুখে। এই অবস্থায় কাজ নিম্নমানের হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অজুহাতে বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামের কিছু মানুষ কাজ বন্ধ করতে বললে অশান্তি শুরু হয়। নির্মীয়মাণ হাটশেডটির ঠিক পাশেই থাকেন দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের সমাপ্তি মুখোপাধ্যায়। সমাপ্তিদেবী ও তাঁর স্বামী প্রশান্ত মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “নিম্নমানের কাজ নিয়ে গ্রামের কারও যদি আপত্তি থেকে থাকে তা হলে পঞ্চায়েত বা ব্লকে অভিযোগ জানাতেই পারেন। কিন্তু সে পথে না গিয়ে হঠাৎ সকালে কাজ বন্ধ করতে বললে আমি সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলে আপত্তি জানাই। তখন কাজে বাধা দিতে আসা বেশ কয়েকজন যুবক আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়। আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে শারীরিক নিগ্রহ করে।” এই ঘটনায় কৃষ্ণ দাস, অর্জুন দাস, বিধান দাস এবং কুড়ো দাস নামে চার জনের বিরুদ্ধে তাঁরা দুবরাজপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই কৃষ্ণ, অর্জুনরা সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের পাল্টা দাবি, “কাজের সিডিউল (কাজের জন্য বরাদ্দ অর্থ থেকে খুঁটিনাটি তথ্য) দেখতে চাওয়ার অপরাধে আমাদেরকেই মারধর করেছেন কর্মাধ্যক্ষ ও তাঁর স্বামী।” এ ব্যাপারে তাঁরা লিখিতভাবে দুবরাজপুর থানা এবং বিডিও কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জানিয়েছেন।
কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল? কৃষ্ণ, অর্জুন, মধুসূদনদের দাবি, “কিছুদিন ধরে আমরা শুনছিলাম নির্মীয়মাণ কাজের মান খারাপ। কাজে নিযুক্ত রাজমিস্ত্রিদের কাছ থেকেই এ কথা জানতে পেরেছিলাম। গ্রামের সকলের জন্য যেহেতু হাটশেডটি তৈরি হচ্ছে, তাই ঠিক কী ভাবে কাজ হওয়ার কথা সেটা জানার জন্য দিন তিনেক আগে ঠিকাদারের কাছে কাজের সিডিউল দেখতে চাই। উনি আমাদের সেটা দেখাবেন জানিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাতই মত বদল করে ঠিকাদার জানিয়ে দেন, ‘সেটা তিনি দেখাবেন না। কর্মাধ্যক্ষের বাড়িতে গিয়ে দেখতে হবে’। এই কথা গ্রামে আলোচনা হতেই বেশ কিছু মানুষ ক্ষুব্ধ হন।” তাঁদের অভিযোগ, “বৃহস্পতিবার সকালে এসে বলেন, যতক্ষণ না সেটা দেখানো হচ্ছে কাজ বন্ধ রাখতে। এর পরেই কর্মাধ্যক্ষ ও তাঁর স্বামী আমাদের একজনকে মারধর করেন। এই বিষয়টি যাতে সামনে না আসে সেটা দেখাতে আমাদের বিরুদ্ধে ওঁদের বাড়িতে চাড়াও হয়ে শারীরিক নিগ্রহের মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।”
সমাপ্তিদেবী ও তাঁর স্বামী প্রশান্তবাবু পাল্টা অভিযোগ করেছেন, “ওই যুবকেরা ঠিকাদারের কাছে হুমকি দিয়ে টাকা দাবি করেছিলেন। সেটা না পাওয়াতেই কাজ বন্ধ করে দেন। পরে আমাদের উপর হামলা চড়াও হন।” প্রায় একই সুর ওই কাজের বরাত পাওয়া ঠিকাদারের সুপারভাইজার তরুণ মণ্ডলের। তাঁর দাবি, “কিছু লোকজন ভয় দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁরা ঠিকাদারের কাছে টাকা দাবি করেছিলেন। সেটা না দেওয়াতে সিডিউল চান। তখন বলা হয়েছিল, পঞ্চায়েত থেকে সিডিউল দেখতে। কারণ, এটা দেখানো আমাদের এক্তিয়ারভূক্ত নয়।” কৃষ্ণবাবুরা অবশ্য টাকা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বালুজুড়ি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান শিবঠাকুর মণ্ডল বলেন, “সকলেরই নিজেদের গ্রামে উন্নয়নমূলক কাজ দেখার অধিকার রয়েছে। আমার কাছে এসে সিডিউল দেখতে চাইলে কোনও সমস্যা ছিল না। তবে গ্রামের কেউ পঞ্চায়েতে সিডিউল দেখতে আসেননি।” দুবরাজপুরের বিডিও কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বৃহস্পতিবার সকালে পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্যা তাঁকে এবং তাঁর স্বামীকে মারধরের অভিযোগ জানিয়েছেন থানায়। আমাকেও তার কপি দেওয়া হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁরাও পরে কাজের মান নিয়ে একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ। তারপরই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy