এক শিক্ষকের সঙ্গে অভিভাবকের বিবাদের ঘটনার পরে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে সমস্ত পড়ুয়া। বৃহস্পতিবার থেকে পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ায় সড়বড়ি প্রাথমিক স্কুলে ১৪০ জন পড়ুয়ার কেউই আসছে না। ঘটনাটিতে লেগেছে রাজনীতির রঙও। বিজেপি-র দাবি, যে শিক্ষকের সঙ্গে অভিভাবকদের বিবাদ বেধেছিল, তিনি তাদের দলের স্থানীয় নেতা। তাই পড়ুয়া ও অভিভাবকদের চাপ দিয়ে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে তৃণমূলই। যদিও তৃণমূল নেতারা ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগের কথা মানেননি। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, সমস্যা মেটাতে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত বুধবার। তাঁর নাতিকে স্কুলে কোনও সহপাঠী মারধর করেছে, এই অভিযোগ জানাতে সড়বড়ি গ্রামের বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দুর্গাদাস চক্রবর্তী ওই প্রাথমিক স্কুলে যান। তিনি অভিযোগ করেন, স্কুলে গিয়ে খোঁজখবর করতেই শিক্ষক অসীম চক্রবর্তী তাঁকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। দুর্গাদাসবাবুর বক্তব্য, “অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে আমার মর্যাদ রয়েছে। কিন্তু অসীমবাবু সকলের সামনে যে ভাবে আমাকে অপদস্থ করেন, অন্য অভিভাবকেরা তার প্রতিবাদ করেছিলেন।” শিক্ষক তথা নিতুড়িয়ায় বিজেপি-র অন্যতম সম্পাদক অসীমবাবু অবশ্য দাবি করেন, দুর্গাদাসবাবু শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের বকাঝকা শুরু করেন। প্রতিবাদ করলে তাঁকেও গালিগালাজ করেন অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষক।
বিষয়টি সে দিনের মতো মিটে গেলেও পর দিন শিক্ষকেরা স্কুলে গিয়ে দেখেন, কোনও পড়ুয়া আসেনি। অসীমবাবুর অভিযোগ, “অভিভাবক নয়, এমন বহু লোকজন স্কুলে ঢুকে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেছিল।” তার পরে দু’দিনও একই রকম ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁর দাবি। শুক্রবার গোটা ঘটনা জানিয়ে প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা দফতরে অভিযোগ করেন অসীমবাবু।
সড়বড়ি প্রাথমিক স্কুলের অচলাবস্থা তৈরির পেছনে তাদের নেতা তথা শিক্ষককে হেনস্থার ছক কষেছে তৃণমূলবিজেপি এমন অভিযোগ তোলায় ঘটনাটি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিজেপি-র নিতুড়িয়া ব্লক সভাপতি ললিত অগ্রবালের দাবি, লোকসভা ভোটে এই এলাকায় বিজেপি ভাল ফল করায় সমস্যায় পড়েছে তৃণমূল। তাই স্কুলের একটি সামান্য ঘটনা নিয়ে অসীমবাবুকে পরিকল্পিত ভাবে বিপাকে ফেলার চেষ্টা শুরু করেছে তৃণমূল। অভিভাবকদের উস্কে পড়ুয়াদের স্কুলে আসা বন্ধ করে অসীমবাবুকে স্কুল থেকে সরানোর ছক কষা হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। আর পুরো প্রক্রিয়ায় সড়বড়ির বাসিন্দা তথা রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি ইন্ধন জোগাচ্ছেন বলেও ললিতবাবুর অভিযোগ। অসীমবাবুর আবার দাবি, “বৃহস্পতিবার কিছু পড়ুয়া স্কুলে এসেছিল। কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা তাদের ফিরিয়ে দেয়।”
বিধায়ক পূর্নচন্দ্রবাবু ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেন। তবে তাঁর বক্তব্য, “অসীমবাবুর বিরুদ্ধে অভিভাবকদের ক্ষোভ রয়েছে বলে শুনেছি। উনি স্কুলে গিয়েও দীর্ঘক্ষণ ধরে মোবাইলে কথা বলে দলের কাজকর্ম দেখাশোনা করেন। স্কুলে গিয়ে পড়ানোর চেয়ে দলের কাজে বেশ আগ্রহী হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এটা তাঁকে শোধরাতে হবে।”
স্কুলে অচলাবস্থার কারণ নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলতে চাননি প্রধান শিক্ষিকা করুণা চক্রবর্তী। তিনি শুধু বলেন, “বুধবার একটি সমস্যা হয়েছিল। তারই জেরে হয়তো অভিভাবকেরা পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। সমস্যা মেটানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে জানিয়েছি।” নিতুড়িয়ার বিডিও শারদদ্যুতি চৌধুরী বলেন, “অবর স্কুল পরিদর্শককে এলাকায় গিয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যা মেটাতে বলা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy