দুষ্কৃতীদের হাতে জখম সমবায় কর্মী জাকির হোসেন। নিজস্ব চিত্র
মাত্র দশ মিনিটের ব্যবধান। আর তারই মধ্যে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে ফেরার পথে দু’টি বড়সড় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে গেল রামপুরহাট শহরে। শুক্রবার সকালে শহরের জনবহুল এলাকার ওই ঘটনায় দু’টি ক্ষেত্রেই চার মোটরবাইক আরোহী দুষ্কৃতীজেলার দুই পৃথক সমবায় সমিতির লক্ষাধিক টাকা ছিনতাই করে পালায় বলে অভিযোগ। প্রায় একই কায়দায় সমিতির দুই কর্মীর হাত থেকে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, রীতিমতো ছক কষেই রামপুরহাট মহকুমার ওই দুই সমবায় সমিতির টাকা লুঠ করা হয়ে থাকতে পারে। প্রথমে একের পর এক মন্দিরে চুরি। এ বার দিনেদুপুরে ছিনতাই। গোটা ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বাসিন্দারা। উঠছে পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগও।
সমবায় সমিতি সূত্রে খবর, বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রভাব পড়েছে সমবায় সমিতিগুলিতেও। অধিকাংশ সমিতি ওই ব্যাঙ্কের গ্রাহক। এ দিনের দু’টি সমিতির বহু টাকাই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কে রাখা আছে। সামান্য কিছু টাকা অন্য ব্যাঙ্কেও আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের লেনদেন বন্ধের কারণেই সমিতিগুলি অন্য ব্যাঙ্ক থেকেই টাকা তুলছে। এ দিন তাঁদের দুই কর্মী সেই জমা করা টাকাই তুলে ফিরছিলেন। এমন ছিনতাইয়ের ঘটনায় সমিতি দু’টি আরও বিপাকে পড়ল বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, গ্রাহকদের স্বার্থে সমিতিগুলি রোজদিন বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে আনছে। দুষ্কৃতীরা তারই সুযোগ নিয়ে রীতিমতো নজরদারি চালিয়ে ওই টাকা লুঠ করছে, এমন সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।
এ দিনের ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। অন্য দিকে, দু’টি ঘটনাতেই ছিনতাইবাজদের সঙ্গে টানাহেঁচড়ায় দুই সমিতির দুই কর্মীই অল্পবিস্তর জখম হন। এক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও অপর কর্মী রামপুরহাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় চুরি ছিনতাই বেড়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ বিশেষ নজর দিচ্ছে। এ দিনের ছিনতাইয়ের তদন্ত শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই দু’টি ছিনতাইয়ের ঘটনারই কিনারা করা হবে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সাড়ে ১১টা প্রথম ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে, মাড়গ্রাম মোড়ে। রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে গচ্ছিত সমিতির অ্যাকউন্ট থেকে ২ লক্ষ টাকা তুলে মোটর বাইকে মুরারইয়ের কোপায় ফিরছিলেন কোপা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির কর্মী জাকির হোসেন। তখনই তিনি ছিনতাইবাজদের খপ্পড়ে পড়েন বলে অভিযোগ। রামপুরহাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাকিরের দাবি, “মাড়গ্রাম মোড় পেরনোর সময় দু’পাশ থেকে গাড়ি আসছিল। সেই জন্য বাইকের গতি কমিয়েছিলাম। মোড় পার করতেই আচমকা আমার কাঁধে ঝোলানো টাকার ব্যাগটা পেছন থেকে কেউ যেন টানল। রাস্তার একপাশে বাইক সরিয়ে নিয়ে পাশ থেকে দুই মোটরবাইক আরোহী আসতেই আমার চলন্ত বাইকে লাথি মারে।” তার জেরেই তিনি বাইক থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান। ওই সময়ই বাইকে থাকা এক দুষ্কৃতী তাঁর কাঁধে ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেয় বলে অভিযোগ। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী খায়রুল বাশার বলেন, “ভদ্রলোকের চিৎকার শুনে ভাবলাম দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরে জানতে পারলাম তিনি ছিনতাইবাজদের পাল্লায় পড়েছেন।” জখম জাকির হোসেনকে তাঁরাই কয়েক জন হাসপাপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। জাকির আরও জানিয়েছেন, ওই মোটরবাইকে দু’জন আরোহী ছিলেন। ছিনতাই করেই তারা রামপুরহাট লোটাস প্রেস মোড়ের দিকে পালিয়ে যায়।
ওই ঘটনার ঠিক ১০ মিনিটের মধ্যেই দ্বিতীয় ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটে শহরের মহাজনপট্টি মোড় এলাকায়। নলহাটি থানার পাইকপাড়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির কর্মী কাজল বন্দ্যোপাধ্যায় কামারপট্টি মোড়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে সমিতির গচ্ছিত ৩ লক্ষ টাকা তুলে পায়ে হেঁটে রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন। ব্যাঙ্ক থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে মহাজনপট্টির কাছে তিনি মোটরবাইক আরোহী দুই ছিনতাইবাজের কবলে পড়েন বলে অভিযোগ। কাজলবাবুর দাবি, “টাকার ব্যাগটি আমার কাঁধেই ছিল। আচমকা কেউ পেছন থেকে ব্যাগ টানছে বুঝতে পারি। একটু সতর্ক হয়ে জোরে ব্যাগ চেপে ধরি। কিন্তু তার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দুষ্কৃতীরা সজোরে ব্যাগে টান দিতেই আমি পড়ে যায়। আমার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে ওই দুষ্কৃতীরা সানঘাটা পাড়ার দিকে বাইক ছুটিয়ে চলে যায়।” তাঁর চিৎকারে লোকজন জড়ো হলেও দুই ছিনতাইবাজকে আর ধরা যায়নি।
দুই সমবায় সমিতির ম্যানেজারেরা বলছেন, “কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে আর্থিক লেনদেন বন্ধ। এর ফলে সমিতির গ্রাহকেরা আশঙ্কা করছেন সমিতিগুলি বন্ধ হয়ে যাবে। সেই জন্য তাঁদের মধ্যে সমিতি থেকে টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এর জন্য সেভিংস ডিপোজিট গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য ব্যাঙ্ক থেকে টাকা লেনদেন করতে হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy