Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

তারকা প্রার্থী এনে বাজিমাতের ভাবনা

এক সময় এই কেন্দ্রেই দু’ লক্ষেরও বেশি ভোট ছিল বিজেপি-র। পরে ক্রমেই দলের জনপ্রিয়তা কমেছে। শেষ বার খুশি থাকতে হয়েছিল তৃতীয় স্থান নিয়েই। এ বার লোকসভা ভোটে ‘গুজরাত-নিমার্তা’ নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে সেই বীরভূম কেন্দ্রকেই পাখির চোখ করছে বিজেপি।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
বীরভূম শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৪ ০৫:৫৭
Share: Save:

এক সময় এই কেন্দ্রেই দু’ লক্ষেরও বেশি ভোট ছিল বিজেপি-র। পরে ক্রমেই দলের জনপ্রিয়তা কমেছে। শেষ বার খুশি থাকতে হয়েছিল তৃতীয় স্থান নিয়েই। এ বার লোকসভা ভোটে ‘গুজরাত-নিমার্তা’ নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে সেই বীরভূম কেন্দ্রকেই পাখির চোখ করছে বিজেপি। দলীয় সূত্রের খবর, ওই কেন্দ্রে কোনও সেলেব্রিটি প্রার্থীকে দাঁড় করানোর ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়েছে।

দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ জানিয়েছেন, আগামী ৮ মার্চ রাজ্যের বাকি আসনগুলির সঙ্গেই বীরভূম কেন্দ্রের প্রার্থীর নামও ঘোষণা করা হবে। তাঁর কথায়, “বীরভূম কেন্দ্রের প্রতি আমাদের আলাদা নজর আছে। সংগঠনগত ভাবে গত কয়েক বছরে এখানকার প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে দলের প্রাথমিক সদস্য সংখ্যা কয়েকগুন বেড়েছে। শেষ বিধানসভা ভোটে রামপুরহাট, নলহাটিতেও আমাদের ভোট বেড়েছে। এ ছাড়া যে মুরারই, হাঁসন বিধানসভায় আমাদের সংগঠন দুর্বল, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেখানেও দলের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।” তাঁর দাবি, আগামী ভোটে এই কেন্দ্রের ফল সব হিসেবে উল্টে দেবে।

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৯ সালে ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মদনলাল চৌধুরী ২ লক্ষ ১৮ হাজার ৮০২টি ভোট পেয়েছিলেন। ২০০৯ সালে তা কমে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪৮ হাজারে। ’৯৯ সালের পর থেকে দলের ভোট এ ভাবে কেন কমে গেল? রাহুল সিংহের যুক্তি, “অতীতে তৃণমূলের সঙ্গে একাধিক বার দলকে জোট করতে হয়েছে। সেই বিষয়টি দলীয় সমর্থক থেকে সাধারণ মানুষ, কেউ-ই ভাল চোখে নেননি। তাই আমাদের ভোট কমেছে।” যদিও ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের নিরিখে বীরভূম আসনের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রাপ্ত ভোট দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজারে। গত পঞ্চায়েত ভোটে পঞ্চায়েতের যে ক’টা আসনে ভোট হয়েছে, সেখানে দলের প্রার্থীদের ভোট বেড়েছে বলে বিজেপি-র দাবি। দলের জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল জানান, জেলার ১৬৭টি পঞ্চায়েতে ১৮৯ জন বিজেপি প্রার্থীর মধ্যে ৫৬ জন জয়ী হয়েছেন। ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতিতে দল ১০০ জন প্রার্থী দিতে সক্ষম হয়েছিল। ৬ জন প্রার্থী জিতেছেন। রামপুরহাট মহকুমায় বিজেপি বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন দল দখল করেছে। জেলা পরিষদে একটিও আসন না পেলেও দলের রাজ্য সভাপতির দাবি, “মানুষ নিজের ভুল বুঝতে পারছেন। তাঁরা তৃণমূলকে হাড়েহাড়ে চিনেছেন। তাই আমাদের ভোট বাড়ছে। এখানে ভাল ফলের আশা রয়েছে বলেই বীরভূম কেন্দ্রটিকে আমরা আলাদা করে টার্গেট করেছি।”

কিন্তু বিজেপি-র প্রার্থী কে হবেন?

দলেরই একটি সূত্রের দাবি, ওই কেন্দ্রের জন্য এ বার একজন ‘সেলেব্রিটি’ প্রার্থীকেই দাঁড় করাতে চান বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব। নির্বাচিত বর্তমান সাংসদ তৃণমূলের শতাব্দী রায় নিজেও এক জন সেলেব্রিটি। তাই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ওই ঘরানারই কাউকে প্রার্থী করা হতে পারে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। এমনিতে বিজেপি-র রাজ্য নির্বাচন কমিটির কাছে প্রার্থী হিসেবে বীরভূম থেকে স্থানীয় ৯ জনের নাম যেমন গিয়েছে, তেমনই বাইরের এক জনের নামও গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত বাইরের সেই প্রার্থীই তালিকায় সবার আগে রয়েছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। এ ব্যাপারে রাহুল বলেন, “এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে হ্যা, এক জন সেলেব্রিটিকে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করার প্রস্তাব আছে। আমরা এ নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছি।” বাইরের কেউ প্রার্থী হলে আপত্তি উঠবে না? দলের জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল এবং জেলা পর্যবেক্ষক শুভনারায়ণ সিংহ অবশ্য বলছেন, “দলীয় নেতৃত্বই এ ব্যাপারে শেষ কথা বলবেন। তাঁরা যোগ্য কাউকেই প্রার্থী করবেন। তিনি বাইরের কেউ হলেও আপত্তি নেই।”

এ বারের লড়াই চর্তুমুখী। তার নিরিখে বীরভূম কেন্দ্রে বিজেপি-র ফল ভাল হবে বলেই দলীয় নেতৃত্ব দাবি করছেন। যদিও রাজ্যের পালা বদলের পরে জেলায় তৃণমূলের নিজস্ব শক্তি এখনও অটুটই রয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের পরে সেই শক্তি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে অতীতে যতই মতান্তর হয়ে থাকুক না কেন, এখনও পর্যন্ত দলের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সাংসদ শতাব্দীর নামই অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। অন্য দিকে, একের পর এক দল বদলে জেরবার জেলা কংগ্রেসও তাকিয়ে রয়েছে বীরভূম কেন্দ্রের দিকেই। সেখানে দলের প্রার্থী হিসেবে এক দিকে জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মির নাম উঠে আসছে। পাশাপাশি দলেরই অপর একটি অংশ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের কাউকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও খবর।

এ দিকে বিধানসভা ভোটের ফলের হিসেবে সাতটির মধ্যে তিনটি করে তৃণমূল ও বামেদের দখলে রয়েছে। অন্যটি কংগ্রেসের। এ বারের চতুর্থমুখী লড়াইয়ে ভোট কাটাকাটিতে বাম প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনৈতিক মহলের কেউ কেউ। সিপিএম সূত্রের খবর, বয়সজনীত গত বারের প্রার্থী ব্রজ মুখোপাধ্যায় প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে ওই কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে মুরারইয়ের প্রাক্তন বিধায়ক কামরে ইলাহির নাম সবার উপরে রয়েছে বলে দাবি।

অন্য বিষয়গুলি:

apurba chatterjee bjp loksobha election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE