জলাধারে এ বার কম জল থাকায় দুশ্চিন্তায় ছিল মুকুটমণিপুর। বড়দিন দেখিয়ে দিল এখনও পর্যটকদের পছন্দ এই জলাধারই। ছবিটি তুলেছেন দেবব্রত দাস।
কনকনে ঠান্ডা আর ঝকঝকে রোদ। এ তো চড়ুইভাতির আদর্শ আবহাওয়া। তাই বড়দিনের সকালে হইহই করে বাঁকুড়াবাসী ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়তে দেরি করেননি। দল বেঁধে কেউ মুকুটমণিপুরের টলটলে জলে নৌকাবিহার করলেন, কেউ বা সঙ্গীদের নিয়ে বিষ্ণুপুরে জঙ্গলে বা শুশুনিয়ার পাহাড়তলিতে উনুন জ্বালিয়ে রান্নায় মেতে গেলেন। বৃহস্পতিবার বড়দিনে জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে আছড়ে পড়ল পর্যটকদের ভিড়।
বস্তুত পুজোর পর থেকেই বাঁকুড়ার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ভিড় একটু একটু করে বাড়ছিল। শীতের আমেজ পড়তে তা বেশ বাড়ে। আর বড়দিনের সকালে যেন ঢল নামল। বিষ্ণুপুর, মুকুটমণিপুর, শুশুনিয়া, বিহারীনাথ, কোরোপাহাড়, বড়দি পাহাড়, গাংদুয়া-সহ প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রে এ দিন সকাল থেকেই পর্যটকদের ঠাসাঠাসি ভিড় চোখে পড়েছে। পর্যটক আর তাঁদের গাড়ির ভিড় সামলাতে হিমশিম অবস্থা হয় পুলিশের। তবে বিপুল পর্যটক সমাগমে হাসি ফুটেছে স্থানীয় দোকানদার, হোটেল ও লজ মালিক থেকে নৌকাচালকদের।
মুকুটমণিপুরের জলাধারের আকর্ষণে বারবার পর্যটকেরা ছুটে আসেন। এখানকার সৌন্দর্য বারবার দেখেও পুরনো হয় না। এ দিন সকাল থেকেই জলাধারের পাড়ে এবং লাগোয়া এলাকায় নাচগানের সঙ্গে চড়ুইভাতির আসরে মেতে ছিলেন চড়ুইভাতি করতে আসা লোকজন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নৌকাবিহার, লাগোয়া বনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্ক ও পরেশনাথ মন্দিরে ঘুরতে দেখা যায় তাঁদের।
এ বার মুকুটমণিপুরের নতুন আকর্ষণ ‘মুসাফিরানা’তেও বহু পর্যটকের ভিড় দেখা গিয়েছে। সেখানকার ‘ওয়াচ টাওয়ার’ থেকে জলাধার ক্যামেরা-বন্দিও করেন অনেকে। দুপুরে মুকুটমণিপুরে গিয়ে দেখা যায়, জলাধারের এক কিলোমিটার আগে থেকে রাস্তার দু’পাশে বাস, ছোট গাড়ির লম্বা লাইন। জলাধারের পাড়ে টেবিল-চেয়ার, ত্রিপল, শতরঞ্জি পেতে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে রান্নাবানা ও খানাপিনা চলছে। চারপাশে উচ্চস্বরে বাজছে হিন্দি-বাংলা গান। সঙ্গে উদ্দাম নাচ। জলাধারের পাড়ে সারি সারি নৌকা। চালকেরা হাঁক পাড়ছেন, “ডিয়ার পার্ক, পরেশনাথ, মুসাফিরানা চলুন।’’ দরাদরি করে পর্যটকেরা নৌকায় চড়ে বসছেন।
মুকুটমণিপুর হোটেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সঞ্জীব দত্ত বলেন, “পুজোর পর থেকেই পর্যটকেরা আসছেন। তবে এ দিন সব রেকর্ড ভেঙে প্রচুর পর্যটক এসেছেন। অধিকাংশ হোটেলই ‘বুকড’।” ভিড় পেয়ে খুশি নৌকাচালকেরাও। স্থানীয় নৌকাচালক জীবন মুদি, সুকেশ সিং পাতর বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বার জলাধারে জল কম থাকায় আমরা খুব চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু এ দিন হাজার হাজার পর্যটক নৌকায় মনের সুখে ঘুরেছেন। ভাল রোজগার হল।”
তৃপ্তির ছাপ দেখা গেল রকমারি পসরা নিয়ে বসে থাকা ব্যবসায়ীদের মুখেও। সেখানেও কেনাকাটির তুমুল ভিড়। যেমনটা কলকাতার রাজপথে পুজোর ভিড় দেখা যায়, তেমনই। ঝাড়খণ্ডের চান্ডিল থেকে বেড়াতে আসা সুরজ সাহু, অনন্ত নাগ বললেন, “দুর্দান্ত জায়গা। একদিকে জলাধার, অন্য পাড়ে ছোট ছোট পাহাড়। মন ভরে গেল।”
পর্যটকদের ভিড় উপছে পড়েছে বিষ্ণুপুরেও। এ দিন সকাল থেকেই বিষ্ণুপুরের প্রকৃতি পর্যটনকেন্দ্র লালগড়ে, শ্যামরাই, জোড়বাংলা, রাসমঞ্চ, মদনমোহন মন্দির, গড়দরজা, মৃন্ময়ী মন্দির, এবং দলমাদল কামান দেখতে পর্যটকদের ঢল নামে। বিকেল থেকে সেই ভিড় দেখা যায় বিষ্ণুপুর মেলায়। ব্যারাকপুর থেকে আসা সুজিত মণ্ডল বলেন, “একই সঙ্গে বিষ্ণুপুর মেলা ও দর্শনীয় মন্দির দেখার জন্যই এখানে বড়দিনের ছুটিতে এসেছি। সব দেখে মন ভরে গিয়েছে।” পর্যটকদের ভিড় দেখে খুশি হলেও বিড়ম্বনায় পড়েছেন এই শহরের হোটেল ও লজ মালিকেরা। বিষ্ণুপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অসিত চন্দ্র বলেই ফেললেন, “বিষ্ণুপুর মেলার সঙ্গে বড়দিনের ছুটি, সব হোটেল ‘বুকড’। তাই বহু পর্যটককে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।”
এ দিন ছাতনার শুশুনিয়া, শালতোড়ার বিহারীনাথ, গঙ্গাজলঘাটির গাংদুয়ার, কোরোপাহাড়ের পাশাপাশি দামোদর, গন্ধেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী, শালি, জয়পণ্ডা নদী তীরবর্তী এলাকাতেও চড়ুইভাতির ভিড় ছিল। কলকাতার বেলেঘাটা থেকে সপরিবারে বেড়াতে এসেছিলেন অমিয়রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বিষ্ণুপুর মেলা দেখতেই এসেছিলাম। হাতে সময় থাকায় শুশুনিয়ায় চলে এলাম। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়।”
শুশুনিয়ার পাহাড়তলির পাথরশিল্পী বাবলু কর্মকার, মঙ্গল কর্মকার বলেন, “ব্যাপক ভিড় হয়েছে। বিক্রিবাটা ভালোই হল। এই রকম ভিড় কতদিন চলবে সেটাই দেখার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy