সামনে পুলিশ ক্যাম্প। অদূরে জরিনা বিবিদের বাড়ি। সোমবার লাভপুরে ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।
শেষমেশ বাড়ির কাছে পুলিশ ক্যাম্প বসলেও এখনই স্কুলে যাওয়ার ভরসা পাচ্ছে না জরিনা বিবির নাতি টুম্পা খাতুন। সোমবার জেলার পুলিশ সুপারও আবার জানিয়ে দিয়েছেন, এখনই টুম্পাকে স্কুলে যাওয়া-আসার জন্য কোনও পুলিশ কর্মী নিয়োগ করা সম্ভব নয়।
বহু টানা-পোড়েনের রবিবার দুপুর ২টো থেকে লাভপুরে তিনি সিপিএম সমর্থক ভাইয়ের মা জরিনা বিবির নিরাপত্তায় সশস্ত্র রাজ্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তাঁর ছেলে সানোয়ার শেখের লাভপুরের বাড়ির অদূরে তাঁবু খাটিয়ে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে রাজ্য পুলিশের তিন জন বন্দুকধারী পুলিশ-সহ চার জন সিভিক পুলিশ কর্মী। জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া অবশ্য দাবি করেছেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর থেকেই জরিনা বিবির পরিবারের নিরাপত্তায় সশস্ত্র পুলিশ ক্যাম্প ছিল। তবে সোমবারও জরিনা বিবি অভিযোগ করেন, রবিবারই তাঁরা তাঁদের নিরাপত্তায় বন্দুকধারী পুলিশ কর্মীদের দেখেছেন। এর আগে সিভিক পুলিশ কর্মীরা নিয়ম রক্ষার্থে ‘ডিউটি’ করে যেতেন।
সোমবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায় জরিনা বিবিদের বাড়ির অদূরে তাঁবু খাটিয়ে রয়েছেন পুলিশ কর্মীরা। তাঁরা দাবি করেন উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর থেকেই তাঁরা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। তবে, সেই ক্যাম্প ছিল আরও একটু দূরে। জরিনা বিবি বলেন, “বন্দুকধারী পুলিশদের দেখে বুকে তবু একটু ভরসা পাচ্ছি। এখন দেখা যাক কত দিন শান্তিতে থাকতে পারি।” আর টুম্পা খাতুনের গলায় আশঙ্কার রেশ এখনও কাটেনি। সে বলে, “বাড়িতে সশস্ত্র পুলিশের পাহারায় কিছুটা নিশ্চয়তা এলেও স্কুলে যেতে ভরসা পাচ্ছি না। ফের যদি ওরা আমাকে অপহরণ করে! এই ভয় এখনও পিছু ছাড়ছে না।” মনিরুলকে নির্দোষ হিসেবে আদালতে জবানবন্দি আদায় করার জন্য টুম্পা এবং তার এক ভাইকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ।
পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন, “পুলিশি রীতিনীতি মেনে এবং সব দিক খতিয়ে দেখে ওই ছাত্রীর স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তবে, আদালতের নির্দেশ ছাড়া আলাদা করে টুম্পাকে স্কুলে যাওয়া-আসার জন্য কোনও পুলিশ কর্মী নিয়োগ করা সম্ভব নয়।” যা শুনে নিজের ক্ষোভ লুকিয়ে রাখেনি টুম্পা। তার প্রশ্ন, “নিরাপত্তা রক্ষী না পেলে স্কুল যাব কীসের ভরসায়?”
লাভপুরের নবগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের বাড়িতে ২০০০ সালে খুন হন জরিনা বিবির তিন ছেলে। মনিরুল-সহ তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ওঠে। তারপর বিচার প্রক্রিয়া এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে টানাপোড়েন চলে। ন্যায় বিচার পেতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন সানোয়ার শেখ। উচ্চ আদালত জরিনা বিবিদের নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে না বলে সম্প্রতি পুলিশ সুপারের কাছেই অভিযোগ জানান জরিনা বিবির পরিবারের লোক জন। এর পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy